শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:৫১:৩৮

অবশেষে কেটে গেছে কোরবানির পশু সংকট

অবশেষে কেটে গেছে কোরবানির পশু সংকট

জামাল উদ্দিন : কোরবানির ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, তত ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে গরু আমদানি বাড়ছে। গত মার্চে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর বক্তব্যের পর বাংলাদেশে গরু আসা অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেশে যেমন গরুর মাংসের দাম বেড়ে গিয়েছিল, তেমনি কোরবানিতে গরুর সংকট দেখা দিতে পারে—এমন শঙ্কাও তৈরি হয়েছিল জনমনে। কিন্তু সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পর সম্প্রতি অন্যান্য বছরের চেয়ে ভারত থেকে গরু আমদানি বেড়েছে। ফলে কোরবানির ঈদে গরুসহ গবাদি পশুর আর সংকট থাকছে না বলে মনে করছেন গরু-ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকেরা।

গরু-ব্যবসায়ী ও সীমান্ত সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়, ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু আনার বিষয়ে ভারতের মনোভাব আগের চেয়ে অনেক নমনীয় দেখা যায়। ফলে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর নজরদারিও সীমান্তে শিথিল হয়ে যায়। প্রতিদিনই ভারত থেকে বিভিন্ন পথে গরু বাংলাদেশে ঢুকছে। এরইমধ্যে গত আড়াইমাসে ভারত থেকে কয়েক লাখ গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সীমান্তের পশুর হাটগুলো আগের চেয়ে জমজমাট হয়ে উঠছে।

ভারত থেকে গরু আমদানির বৈধ কোনও পথ না থাকায় সীমান্ত এলাকার লোকজন ঝুঁকি নিয়ে ভারত থেকে গরু নিয়ে আসে চোরাই পথে। গরু আনতে গিয়ে প্রায়ই বিএসএফ-এর গুলিতে প্রাণ হারান বাংলাদেশি রাখালরা। একইভাবে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে একইভাবে বাংলাদেশে গরু নিয়ে আসছেন তারা। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সেটা আরও বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

বৈধ পন্থা না থাকলেও কিভাবে গরু বাংলাদেশে আসছে জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম সীমান্ত এলাকার ব্যবসায়ী হাবিল সরদার জানান, ভারতের গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। যাদের বলা হয়, মহাজন, সীমান্ত এলাকায় কমদামে গরু কিনে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তাদের খবর দেন। খবর পেলে তাদের রাখালরা মধ্যরাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে যায়। সেখান থেকে আবার সময় ও সুযোগমতো গরু বাংলাদেশে নিয়ে এসে খোয়াড়ে রাখা হয়।

গরু ব্যবসায়ী হাবিল জানান, এরপর তারা স্থানীয় কাস্টমস কর্মকর্তাদের খবর দেন। খবর পেয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা গরুগুলোকে বাজেয়াপ্ত করে একটি টোকেন মূল্যে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। এতে ব্যবসায়ীরা কাস্টমসের কাছ থেকে একটি ক্রয় রশিদ পান যেখানে  নম্বর দেওয়া থাকে। এতে বাংলাদেশে গরুটি বৈধ হয়ে যায়।

স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী জলিল হোসেন জানান, কয়েকমাস আগে মনে হয়েছিল কোরবানির ঈদে গরুর সংকট দেখা দেবে। কিন্তু বর্তমানে যে হারে বাংলাদেশে গরু আসছে তাতে গরুর সংকট থাকবে না বলে মনে করেন তিনি। দামও আগের মতোই ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে থাকবে। গত বছরের তুলনায় এবার চার-পাঁচগুণ বেশি গরু-মহিষ আমদানি হচ্ছে বলে জানান জলিল হোসেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, লালমনিরহাটের পানবাড়ি, ধবলগুড়ি, আমবাড়ি, বিরামপুর, সমশানগঞ্জ ও হাইতভাঙা ছাড়াও চাপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা ও খুলনার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে গরু নিয়ে আসে ব্যবসায়ীরা। এ সব সীমান্ত দিয়ে গত আড়াইমাসে তিন লক্ষাধিক গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। প্রতিদিনই হাজার হাজার গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলার সীমান্তে গরু আনার ব্যাপারে আগের কঠোর অবস্থান নেই বিএসএফ-এর। তারা এখন অনেক নমনীয়। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলার সীমান্তপথেও ভারত থেকে গরু আসার সংখ্যা বাড়ছে। ভারত সীমান্ত ছাড়াও মিয়ানমার থেকে বৈধপথে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে গরু আমদানি হচ্ছে বাংলাদেশে।

কুড়িগ্রামের রৌমারি কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা স্বপন কুমার বেপারী জানান, ২০১৪ সালের জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু আমদানি হয়েছিল ছয় হাজার ৫৫৪টি। একই সময়ে চলতি বছর বিগত আড়াইমাসে গরু আমদানি হয়েছে ২৩ হাজার ৯৩২টি। কোরবানির ঈদের আর বাকি মাত্র কয়েকটি দিন।

কুড়িগ্রাম কাস্টমসের আরেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা জিএম আশরাফুল আলম জানান, কুড়িগ্রাম পয়েন্ট দিয়ে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের বিগত ক’দিনে ভারত থেকে গরু আমদানি হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার। গত বছর এ সময়ে গরু আমদানি হয়েছিল মাত্র ১৪ হাজার ৬৭৫টি।

লালমনিরহাটের ইসলামপুর কাস্টমস করিডোরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, গত বছর জুলাই ও আগস্টে ওই পথে বাংলাদেশে গরু আমদানি হয়েছিল মাত্র ৭০৪টি। এ বছর একইসময়ে গরু আমদানি হয়েছে তিন হাজার ৬৩৮টি। চলতি মাসে আরও প্রায় দেড় হাজার গরু আমদানি হয়েছে। আগামী দিনগুলোয় এর পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।

যশোরের নাভারণ কাস্টমস করিডোরের অফিস সূত্র জানায়, গত বছর জুন, জুলাই ও আগস্টে বাংলাদেশে গরু এসেছে ১০ হাজার ৮৩৭টি। এবার একই সময়ে গরু এসেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর কোরবানিতে সারাদেশে প্রায় ৬৬ লাখ গবাদিপশু জবাই করা হয়। এবার দেশে কোরবানির জন্য সর্বোচ্চ ৪০ লাখ গরুর প্রয়োজন হতে পারে। এরমধ্যে প্রায় ৩০ লাখের মতো গরু দেশেই মজুদ রয়েছে। সারাদেশে গরুর খামার রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার। এছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছোটবড় অনেক খামার রয়েছে। এ সব খামারের মালিকরাও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারে গরু লালন-পালন করেন। এরইমধ্যে ভারত ও আশে-পাশের দেশগুলো থেকে ছয় থেকে সাত লাখ গরু এসেছে। আগামী কয়েকদিনে বাকি চাহিদাও পুরণ হয়ে যাবে বলে মনে করেন তারা। ফলে এ বছরও কোরবানিতে গরু কিংবা গবাদিপশুর কোনও সংকট হবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ভারত থেকে গরু আমদানির বিষয়ে গত মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ভারত থেকে গরু আমদানির কোনও বৈধ পথ নেই। সীমান্তের বিভিন্ন অরক্ষিত এলাকা দিয়ে অবৈধ পথে গরু নিয়ে আসা হয়। সীমান্তের বেশিরভাগ ঘটনাই গরু পাচার নিয়ে ঘটে। তাই বাংলাদেশি কোনও গরুর রাখাল যেন অবৈধভাবে ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম না করে, সেজন্য সচেতনতা সৃষ্টিতে বিজিবি কাজ করছে।-বাংলা ট্রিবিউন
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে