শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:৪৭:৪৬

ঈদের পর বদলে যেতে পারে বিএনপি

ঈদের পর বদলে যেতে পারে বিএনপি

মজুমদার ইমরান : আসন্ন ঈদুল আজহার পর নতুন রূপে রাজনীতির ময়দানে নামার প্রত্যয় নিয়েছে বিএনপি। জানা গেছে, ঈদের পর দল পুনর্গঠনের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণ করে জাতীয় নির্বাচন আদায়ের দাবিতে সক্রিয় হবে দলটি। বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, নতুনভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণ করার আগেই বিএনপি তাদের নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে চাইছে। এজন্য দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণের সুবিধার্থে উচ্চ পর্যায়ের গবেষণাভিত্তিক একটি থিংক ট্যাঙ্ক গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

লন্ডন সফরের আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের সিনিয়র নেতাদের বৈঠকে দলের থিংক ট্যাঙ্ক করার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। গত রোববার গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে গবেষণাভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক করার একটি খসড়া প্রস্তাবও উপস্থাপন করা হয়। এ সময় উপস্থিত অধিকাংশ নেতাই এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।

জানা গেছে, গবেষণাভিত্তিক এই থিংক ট্যাঙ্ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে দলের সঠিক পদক্ষেপ নেয়া ও  নীতিনির্ধারণে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবে। বিএনপিপন্থি পেশাজীবী নেতা, বুদ্ধিজীবী ও দলের সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত হবে এই থিংক ট্যাঙ্ক। ১৬টি উপভাগে বিভক্ত থাকবে এই কমিটি। থিংক ট্যাঙ্কের সদস্যরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, তথ্য-প্রযুক্তি, অর্থনীতিসহ মৌলিক খাতগুলোতে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দলের অবস্থান ও করণীয় নির্ধারণে বিএনপির হাইকমান্ডকে প্রয়োজনীয় পরার্মশ দেবেন।

এমনকি এসব খাতের সমস্যা চিহ্নিত করণ ও ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে কিভাবে সমস্যার সমাধান করা হবে সে বিষয়েও দলকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন। এছাড়াও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দলের কূটনৈতিক কৌশল নির্ধারণেও পরার্মশ দেবেন। তবে এই থিংক ট্যাঙ্কে কারা থাকবেন তা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। একটি সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন লন্ডন থেকে ফিরলে থিংক ট্যাঙ্ক গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা প্রতিবেদককে জানান, তথ্য-প্রযুক্তি ও গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার বিষয়টি নিয়েও গভীরভাবে চিন্তা করছে বিএনপি। জানা গেছে, সর্বশেষ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতাদের সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে ফেসবুক ও টুইটারের মতো মাধ্যমগুলোকে দলের প্রচার-প্রচারণার কাজে আরো ব্যাপকভাবে কিভাবে কাজে লাগানো যায় তা পর্যালোচনার তাগিদ দিয়েছেন। তথ্য ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে দলের একটি আলাদা সেল গঠনেরও চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপি নতুন জাতীয় নির্বাচনের দাবিসহ রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা নতুন আঙ্গিকে জনগণের সামনে উপস্থাপন করবে। পাশাপাশি মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আন্দোলনও চলবে। তিনি বলেন, আমাদের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে ফিরলে দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু হবে।

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন প্রতিবেদককে বলেন, দলের জন্য একটি গবেষণা থিংক ট্যাঙ্ক করার বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে। বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক দলের এ ধরনের গবেষণা সেল রয়েছে। বিএনপি বিষয়টি নিয়ে ভাবছে।

এদিকে দল পুনর্গঠনসহ নতুন রাজনৈতিক কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে লন্ডন সফরে গেছেন। গত কয়েক বছর ধরেই বিএনপিতে তারেক রহমানের পরামর্শ বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ওয়ান ইলেভেনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই জামিনে মুক্ত হয়ে তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য সস্ত্রীক লন্ডনে অবস্থান করছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর চিকিৎসার জন্য বলা হলেও মূলত দল পুনর্গঠনসহ রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।

ইতিমধ্যে বিএনপির অন্তত ডজনখানেক সিনিয়র নেতা লন্ডন গেছেন। জামিনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দু’একদিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে লন্ডন যাচ্ছেন। এছাড়াও বিএনপি নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক আ ন ম এহছানুল হক মিলন, অর্থনীতি-বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালামও লন্ডনে অবস্থান করছেন।

জানা গেছে, লন্ডনে বসেই দল পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক নতুন কৌশল নির্ধারণে তারেক রহমানসহ প্রভাবশালী কয়েক নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন খালেদা জিয়া। সেখানেই দল পুনর্গঠনের বিষয়ে বড় ছেলের সঙ্গে পরামর্শ করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। ঈদের পর তার দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে। দেশে ফিরেই খালেদা জিয়া দলের পুনর্গঠনের কাজ পুরোদমে শুরু করবেন। পাশাপাশি গণসংযোগ, আলোচনা সভা, বিক্ষোভ ও জনসভার মতো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবেন। দুই সপ্তাহের সফরে বুধবার সকালে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান খালেদা জিয়া।-মানবকণ্ঠ
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে