বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:৪৯:২৭

‘দেশেই পর্যাপ্ত পেট্রোল উৎপাদন হচ্ছে’

‘দেশেই পর্যাপ্ত পেট্রোল উৎপাদন হচ্ছে’

কাওসার আজম : গ্যাসের উদ্বৃত্ত উপাদান কনডেনসেট দিয়ে পর্যাপ্ত পেট্রোল উৎপাদন হচ্ছে দেশেই। সরকারি-বেসরকারি ১৪টি রিফাইনারি প্ল্যান্টে উৎপাদিত এই পেট্রোল দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটাচ্ছে ২০১২ সাল থেকে। এর ফলে বিদেশ থেকে কোনো পেট্রোল আমদানি করতে হচ্ছে না। তবে রিফাইনারি প্ল্যান্টগুলোর মাধ্যমে দেশের চাহিদার সমান অকটেন উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ হাজার টন অকটেন আমদানি করতে হচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে(বিপিসি)।

তবে রিফাইনারি প্ল্যান্টের ক্যাপাসিটি বাড়াতে পারলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পরিমাণ অকটেন উৎপাদন সম্ভব। এ জন্য একটা মেশিন দরকার, যা স্থাপন করতে প্রতিটি প্ল্যান্টে ৮-১০ কোটি টাকা প্রয়োজন।

প্রতিবেদককে এ তথ্য জানিয়েছেন জ্বালানী বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক।

জ্বালানী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাসের উপজাত হিসেবে প্রচুর পরিমাণ কনডেনসেট উৎপাদন হচ্ছে। এই কনডেনসেট ব্যবহার করা হচ্ছে পেট্রোল, অকটেন ও জেট ফুয়েল তৈরীর কাঁচামাল হিসেবে। অকটেন এবং জেট ফুয়েল ব্যবহৃত হয় বিমানের জ্বালানী হিসেবে। পেট্রোল ব্যবহৃত হয় পরিবহনের জ্বালানী হিসেবে।

সূত্র জানায়, দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তিন লাখ ২১ হাজার টন কনডেনসেট উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার টনে। আর চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ সাড়ে পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। দেশে অভ্যন্তরীণ পেট্রোল ও অকটেনের চাহিদা প্রায় ৩ লাখ টন। এর মধ্যে ক্রমেই অকটেনের চাহিদার পরিমাণ বাড়ছে। চাহিদার অতিরিক্ত কাঁচামাল কনডেনসেট বিপিসির মাধ্যমে রফতানি করছে সরকার। এরই মধ্যে গত আগস্ট মাসে ১৫ হাজার টন কনডেনসেট রফতানি করেছে বিপিসি। এতে বৈদেশিক আয় হয়েছে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা। আরও কনডেনসেট রফতানির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি।

জ্বালানী বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কনডেনসেট পরিশোধন করে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা অনুযায়ী পেট্রোল উৎপাদন করছে রিফাইনারি প্ল্যান্টগুলো। তবে চাহিদা মতো অকটেন উৎপাদনের সক্ষমতা রিফাইনারি প্ল্যান্টগুলোর নেই। ফলে প্রায় চার বছর ধরে বিদেশ থেকে পেট্রোল আমদানি করা না লাগলেও অকটেন আমদানি করতে হচ্ছে বিপিসিকে।

বিপিসির পরিচালক (অপারেশন এ্যান্ড প্ল্যানিং) মোসলেহ উদ্দিন এই প্রতিবেদককে বলেন, তিন-চার বছর ধরে পেট্রোল আমদানি করা হয় না। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে সক্ষম হচ্ছে রিফাইনারিগুলো। তবে কিছুটা অকটেন আমদানি করা হচ্ছে। এর পরিমাণ বছরে প্রায় ২০ হাজার টন।

কনডেনসেট দিয়েই তো পেট্রোল ও অকটেন উৎপাদন করা হয়, তাহলে কেন অকটেন আমদানি করতে হয়— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কনডেনসেট দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী পেট্রোল উৎপাদন করতে পারলেও সেভাবে অকটেন উৎপাদন করতে পারে না রিফাইনারিগুলো। এ জন্য কিছু অকটেন কুয়েত বা অন্য কোনো দেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জ্বালানী বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক প্রতিবেদককে বলেন, ২০১২ সালের পর থেকে পেট্রোল আমদানি করতে হচ্ছে না। অকটেন আমদানি করতে হচ্ছে। তবে অকটেন আমদানির পরিমাণ খুবই কম। যেটুকু ঘাটতি থাকে সেটুকুই আমদানি করা হচ্ছে। বাকিটা অভ্যন্তরীণ রিফাইনারি প্ল্যান্ট থেকেই উৎপন্ন হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কনডেনসেট দিয়ে রিফাইনারিগুলো চাহিদা অনুযায়ী পেট্রোল উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু সবাই (রিফাইনারি প্ল্যান্ট) আবার সরাসরি অকটেন উৎপাদন করতে পারে না। একমাত্র পেট্রোম্যাক্স ও পেট্রো কেমিক্যাল অকটেন উৎপাদন করতে পারে। যা দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পুরোপুরি পূরণ হয় না। কিছুটা আমদানি করতে হয়।

জ্বালানী সচিব আরও বলেন, শুধু কনডেনসেট দিয়ে অকটেন উৎপাদন হয় না। কনডেনসেটের সঙ্গে একটা উপাদান লাগে। আবার প্ল্যান্টের ক্যাপাসিটিও থাকতে হবে। অকটেন উৎপাদনে লাইটিংয়ের জন্য (ন্যাপথা থেকে হোক বা কনডেনসেট থেকে হোক) একটা মেশিন দরকার, যা সব রিফাইনারি প্ল্যান্টে নেই। ওটা স্থাপন করতে ৮-১০ কোটি টাকা লাগে।

জ্বালানী বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের চাহিদার চাইতে প্রায় দুই লাখ টন জ্বালানীর কাঁচামাল কনডেনসেট অতিরিক্ত থেকে যাচ্ছে। এ জন্য তা রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যেই গত আগস্ট মাসে ১৫ হাজার টন কনডেনসেট রফতানি করেছে বিপিসি। বিপিসির রিফাইনারি প্ল্যান্ট ইস্টার্ন রিফাইনারির ট্যাংকের ধারণক্ষমতা না থাকায় বিপুল পরিমাণ ওই কনডেনসেট একসঙ্গে রফতানি করতে পারছে না সংস্থাটি। ফলে ১৫ হাজার টন ওই ট্যাংকিতে জড়ো করার পর আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করছে তারা।

সরকার চাইলে রিফাইনারিগুলো থেকে পেট্রোল উৎপাদন করে রফতানি করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে বিপিসি পরিচালক বলেন, হ্যাঁ, সম্ভব। কিন্তু, সেখানে একটা প্রবলেম আছে। সেটা হল ১০টা প্রতিষ্ঠানে (রিফাইনারি) ১০ রকমের (মান) পেট্রোল তৈরী হবে। আর এটা একসঙ্গে মিশিয়ে রফতানি করা যাবে না। কারণ, একটার সঙ্গে আরেকটার মিলবে না। কোথাও পাতলা, কোথাও ঘন হবে। এটার একটা মানদণ্ড আছে। সেটার সমান হবে না। ফলে এটা বিক্রি করতে পারব না। বিদেশে রফতানি করতে গেলে একই মানের হতে হবে।

এক্ষেত্রে আরও কিছু সমস্যার কথা জানান বিপিসির এই পরিচালক। তিনি বলেন, রিফাইনারিগুলো ইচ্ছে করলেই ইনডিভিজ্যুয়ালি পেট্রোল বা অকটেন রফতানি করতে পারবে না। কারণ প্ল্যান্টগুলোতে যদি ১৫ হাজার মেট্রিক টন কনডেনসেট জমাতে হয়, তাহলে স্টোরেজ থাকতে হবে (পাত্র) ৬০ হাজার টনের চারটি। অন্যদিকে এ সব মাল সরবরাহের জন্য জাহাজ ভিড়ানোর জায়গা থাকতে হবে। এ সব কারণে সব কনডেনসেট রিফাইনারি হয় না, কাঁচা রফতানি করা হচ্ছে।-দ্য রিপোর্ট
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে