বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:১৬:২২

ভ্যাট থেকে মুক্তি মেলেনি ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষার্থীদের

ভ্যাট থেকে মুক্তি মেলেনি ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষার্থীদের

নূর মোহাম্মদ : স্বস্তি ফিরেছে বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ভ্যাট থেকে মুক্তি মিলেছে তাদের। দৃশ্যত রাজপথে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের টিউশন ফি থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। তবে বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভ্যাট থেকে মুক্তি পেলেও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা ভ্যাট থেকে মুক্তি পায়নি। সাড়ে সাত শতাংশ হারেই ভ্যাট দিয়ে যেতে হবে তাদের। শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা প্রশ্ন তুলেছেন এর যৌক্তিতা নিয়ে।

তারা বলছেন, বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এটাই প্রতীয়মান হয়েছে যে, শিক্ষা পণ্য নয়, শিক্ষা অধিকার। যে কারণে উচ্চশিক্ষা থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তাহলে ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরা কেন ভ্যাট দিবেন। এক দেশে কি দুই আইন চলবে। ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরা কি এ দেশের নাগরিক নয়। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অভিভাবকদের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেটং আমিনা রত্না মঙ্গলবার প্রতিবেদককে বলেন, ইংলিশ মিডিয়াম আগে থেকে সাড়ে ৪% ভ্যাট দিয়ে আসছে। চলতি বছর থেকে সেটা সাড়ে ৭% করা হয়েছে। সরকার সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে সেখানে আমাদের ভ্যাট প্রত্যাহার করবে  না কেন?

তিনি জানান, এখন রাস্তায় নামা ছাড়া আমাদের কোন পথ নেই। এ নিয়ে অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মিটিং হয়েছে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের বাড়ি ভাড়া ও শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশন। সোমবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সচিবালয়ে দেখা করে এ দাবি জানান অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন বলে সাক্ষাৎ শেষে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জি এম নিজাম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান।

তিনি জানান, ভ্যাট প্রত্যাহার না করলে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বড়লোকদের সন্তানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। কিন্তু আমরা এটা চাই না। ভ্যাট প্রত্যাহার হলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচও কমে যাবে বলে জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন, ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবির সঙ্গে আমি একমত। শিক্ষায় কোন ধরনের ভ্যাট আরোপ হতে পারে না। এটি যে কোন পর্যায়ের যে কোন মাধ্যমের হউক। ইংরেজি মাধ্যমে ধনী শ্রেণীর ছাত্ররা পড়াশুনা করে বলে সরকার বলছে। তাহলে তাদের ওপর ইনকাম ট্যাক্স বসান। শিক্ষার ওপর ভ্যাট বসাবেন কেন? শিক্ষা তো কোন পণ্য নয়। তিনি বলেন, শিক্ষাকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। এটি করতে না পারলে জাতির কোন উন্নতি হবে না। শিক্ষায় যত বিনিয়োগ হবে মাথাপিছু আয় তত বাড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষায় কোন ভ্যাট নেয়া যাবে না- এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। জাতির গঠনের মুখ্য কারিগররেদ তৈরি পদ্ধতিতে ভ্যাট বসানো আমি কোনভাবে সমর্থন করি না। সেটি ইংরেজি মাধ্যম হউক আর বাংলা মাধ্যম হউক। আমি মনে করি ভ্যাট যেহেতু প্রত্যাহার হয়েছে সব মাধ্যম থেকে প্রত্যাহার হউক।  

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৪ সাল থেকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের টিউশন ফি’র সঙ্গে অতিরিক্ত সাড়ে ৪% ভ্যাট দিতে হচ্ছে অভিভাবকদের। এবার সরকার সেটি বাড়িয়ে সাড়ে ৭% করেছে। জুলাই মাস থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো এই ভ্যাট আদায় করছে। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এই ভ্যাট নেয়ার কোন ভাউচার দিচ্ছে না। অভিভাবকদের অভিযোগ, সরকার তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করেছে। সন্তানদের পড়াশুনা করানো অনেক কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো লাগামহীনভাবে প্রতি বছর নানা সার্ভিস চার্জ, বেতন বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের ফি নিচ্ছে। এগুলো দিতেই তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরপর নতুন ভ্যাট বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। রাজধানীর গুলশান একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে ফারহান মাহমুদ। তার পিতা নিয়াজ মাহমুদ জানান, জুলাই মাস থেকে মূল বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত সাড়ে ৭% ভ্যাট আদায় করছে প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, গত মাসে ৫ হাজার ২শ’র সঙ্গে অতিরিক্ত ৪০০ টাকা যোগ হয়েছে ভ্যাট। কিন্তু প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের কোন ভাউচার দিচ্ছে না। এ ছাড়া প্রতিবছর রি-এডমিশন, নানা সার্ভিস চার্জ তো আছেই। তার অভিযোগ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার হলে আমাদের ভ্যাট কেন প্রত্যাহার হবে না।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থ বছরেই সরকার প্রথমবারের মতো বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর ভ্যাট আরোপ করে। এ ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য তিন মাস ধরে আন্দোলন চালায় শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরদিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজধানীতে ব্যাপকমাত্রায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এতে পুরো রাজধানী অচল হয়ে পড়ে।-এমজমিন
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে