বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:৩৬:৩৪

তিন বছর আগেই লক্ষ্য অর্জন

তিন বছর আগেই লক্ষ্য অর্জন

জাহাঙ্গীর শাহ : দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ সাফল্য দেখিয়েছে। সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যের (এমডিজি) অন্যতম হলো দারিদ্র্য নিরসন। এমডিজি অর্জনের নির্ধারিত সময়ের তিন বছর আগেই এ লক্ষ্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

এমডিজির মেয়াদের শেষ বছর ২০১৫ সালে এসে দেশের দারিদ্র্য হার কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশে। বর্তমানে ৩ কোটি ৯২ লাখ লোক এখনো উচ্চ দারিদ্র্যরেখার নিচে বসবাস করে। আর এদের মধ্যে নিম্ন দারিদ্র্যরেখার নিচে বসবাস করে ২ কোটি ৪ লাখ লোক।

এমডিজি বাস্তবায়ন নিয়ে সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এ প্রতিবেদনে এমডিজির বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি কতটা, সে বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দারিদ্র্য বিমোচনে এখনো বাংলাদেশের সামনে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জগুলো হলো প্রত্যন্ত ও চরাঞ্চলে বিদ্যমান দারিদ্র্য পকেট; আয়বৈষম্য দূর করা এবং নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তুলনামূলক কম অংশগ্রহণ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধারাবাহিকভাবে গত কয়েক বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হওয়ায় তা দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। এমডিজিতে বার্ষিক দারিদ্র্য বিমোচনের হার ১ দশমিক ২০ শতাংশ মানে রাখার লক্ষ্য ছিল। বাংলাদেশ ২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বছরে গড়ে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ মানে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেন প্রতিবেদককে বলেন, দারিদ্র্য নিরসনের শেষ পর্যায়ে এসে গতি কমে যায়। তখন বিশেষ কিছু কর্মসূচি নিতে হয়। দারিদ্র্য নিরসনে পাইলটভিত্তিক যেসব সফল প্রকল্প বা কর্মসূচি রয়েছে, সেগুলো দেশব্যাপী বিস্তার করা উচিত। এ ছাড়া সমাজের বিশেষ শ্রেণি যেমন প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়নের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে। কারণ, তারা দরিদ্র থাকলে পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হবে না। এ ছাড়া আয়বৈষম্য দূর করতে উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের কাছ থেকে সম্পদ করের মতো সৃজনশীল প্রত্যক্ষ কর আদায় করা যেতে পারে। আদায় করা কর দারিদ্র্য নিরসনের কাজে লাগাতে হবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিশুমৃত্যুর হার, মাতৃমৃত্যুর হার, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অর্জন বেশ ভালো। নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগেই শিশুমৃত্যু হ্রাসে এমডিজির লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। ১৯৯০ সালে প্রতি এক হাজার শিশু জন্ম নেওয়ার পর বয়স পাঁচ বছর হওয়ার আগেই ১৫১ জন শিশু মারা যেত। ২০১৩ সালেই এভাবে শিশুমৃত্যুর হার কমে ৪১ হয়েছে। ১৯৯০ সালে প্রতি এক হাজার নবজাতকের মধ্যে ৯৪ জন মারা যেত। ২০১৩ সালে তা ৩২ জনে নেমে এসেছে। টিকাদান কর্মসূচি সাফল্য, পানিবাহিত রোগ হ্রাসসহ বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে নবজাতক ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছে।

মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য এমডিজিতে যে লক্ষ্য রয়েছে, তাতেও বাংলাদেশ সফল হয়েছে। জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালে প্রতি এক লাখ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ৫৭৪ জন মা মারা যান। ২০১৩ সালে প্রতি এক লাখ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ১৭০ জন মা মারা যান। এমডিজির মেয়াদকালে প্রতিবছর গড়ে ৩ শতাংশ হারে মাতৃমৃত্যু কমানোর লক্ষ্য রয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ ৩ দশমিক ০৬ শতাংশ হারে কমিয়েছে। গর্ভধারণ থেকে নবজাতক জন্মের পর ২৮ দিন পর্যন্ত গর্ভধারণ-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে মায়ের মৃত্যুকেই এখানে মাতৃমৃত্যু হিসেবে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশে এইডস বা এইচআইভি রোগ ছড়ানোর হার শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। এটা মহামারি আকার ধারণ করার সীমার নিচে। এটা এমডিজির এ সূচকে বাংলাদেশের সাফল্য। এ ছাড়া ২০১৪ সালে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি এক লাখ লোকের মধ্যে ৪৩৪ জন, ২০০৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭৭৭।

তবে টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ বনভূমি বা বৃক্ষরাজিতে ভরপুর। ২০১৫ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ বনভূমি বা বৃক্ষরাজিতে পরিপূর্ণ থাকার লক্ষ্য ছিল।

অন্যদিকে এমডিজি অর্জনে দাতাদের কাছ থেকে প্রতিবছর ৩০০ কোটি ডলার উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) পাওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিবছর গড়ে ১৭৪ কোটি ডলার পেয়েছে।

সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে। লিঙ্গসমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ভালো করেছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যায়ে মেয়েদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান জাতীয় সংসদে ২০ শতাংশ প্রতিনিধি নারী, যাঁরা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন।

এ বিষয়ে জিইডির সদস্য শামসুল আলম এই প্রতিবেদককে বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন, প্রাথমিক শিক্ষায় নিবন্ধন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় লিঙ্গবৈষম্য হ্রাস, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুসহ এমডিজির বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বেশ ভালো করেছে। এমডিজি পরবর্তী যে উন্নয়ন আলোচনা শুরু হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের সাফল্যগুলো উদাহরণ হিসেবে আসবে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হওয়া জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মূল আলোচ্য বিষয় এমডিজি পরবর্তী উন্নয়ন আলোচনা। এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল অংশ নেবে।-প্রথমআলো
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে