বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:০৩:৪০

আসছে গরু কমছে দাম, কাঁদছে ব্যবসায়ী

আসছে গরু কমছে দাম, কাঁদছে ব্যবসায়ী

নিউজ ডেস্ক : গত বছর কোরবানির পশুর হাটে যে গরু ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, সে একই সাইজের গরুর দাম দুই সপ্তাহ আগেও এক লাখ টাকা হেঁকেছেন গৃহস্থরা। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দরকষাকষিতে আরও একধাপ এগিয়ে ছিলেন ছোট-বড় খামারিরা। এ সময় গরু সংকটের আশঙ্কায় অনেক বেপারী চড়া দামে গরু কিনেছেন। অথচ কয়েকদিন ধরে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় গরুর পাইকারি বাজারদর এখন নিম্নমুখী। বেশি দামে গরু ক্রয় করে বিপাকে পড়ছে ব্যবসায়ীরা।

ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হওয়ায় কোরবানির পশু সংকটের যে আশঙ্কা ছিল, তা কেটে যাচ্ছে। এরই মধ্যে মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান থেকে প্রতিদিনই গরু আসছে। ভারতের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় কোরবানির গরু আমদানির পথও উন্মুক্ত হয়েছে। এসব প্রক্রিয়ায় একসঙ্গে গরু ঢোকা শুরু হলে চাহিদার তুলনায় জোগান কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এতে শেষ সময়ে বাজারদরে বড় ধরনের ধস নামার আশঙ্কাও করছেন খামারিরা। যশোর, রাজশাহী, মানিকগঞ্জ ও কুষ্টিয়ার খামারিরা ভারতীয় গরু প্রবেশ ঠেকানোর দাবি পর্যন্ত করছেন।

তবে বিবিসি বাংলা বুধবার জানায়, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে, সীমান্তপথে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু আসছে। গত কয়েক দিনে দেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে বিপুলসংখ্যক গরু ঢুকছে। ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশে গরু প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে।

গরু ব্যবসায়ী এবং বিএসএফ সূত্রের উদৃব্দতি দিয়ে বিবিসি আরও জানায়, যশোর ও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গরু প্রবেশ প্রায় বন্ধ রয়েছে। যদিও এ অঞ্চল দিয়েই ভারত থেকে বেশিরভাগ গরু দেশে আসত। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কঠোর অবস্থানের কারণে এ অঞ্চল দিয়ে গরু প্রবেশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন নতুন কিছু রুট চালু হয়েছে। আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ হয়ে রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা এবং আসামের ধুবরি থেকে গরু পাচার বেড়েছে। বিএসএফের একাংশের সহযোগিতায় দেশে গরু আসছে। এক্ষেত্রে বিএসএফের নিম্নস্তরের সদস্যরা গরুপ্রতি তিন হাজার টাকা পান। তাই ভারত সরকারের কড়াকড়ি সত্ত্বেও গরু পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না।

এদিকে প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারতীয় সীমান্তের ৩১টি করিডোর এলাকায় সেখানকার গরু ব্যবসায়ীরা প্রায় ১০ লাখ ভারতীয় গরু এনে জড়ো করেছেন। বিএসএফ তাদের আগের কঠোর অবস্থান থেকে অনেকটা সরে আসায় যে কোনো সময় তা বাংলাদেশে ঢুকবে। একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ভারত ও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সমঝোতায় দু'একদিনের মধ্যে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দেশে একযোগে ঢুকতে শুরু করবে ভারতীয় গরু।

কয়েকজন গরু ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী, ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী; লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার রসুলগঞ্জ, যশোরের নাভারণ ও শার্শা, নীলফামারীর চিলাহাটি, দিনাজপুরের হিলি, জয়পুরহাটের টেপরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, রাজশাহীসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে কোরবানি উপলক্ষে গরু এনে জড়ো করা হচ্ছে।
এবার কোরবানির ঈদে ভুটান ও মিয়ানমার থেকে প্রায় ১২ থেকে ১৪ লাখ গরু আমদানি করা হতে পারে। অন্যদিকে বন্যাপ্লাবিত দেশের উত্তরের জেলাগুলো থেকেও বিপুলসংখ্যক গরু বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কৃষক ও খামারি উভয়েই রয়েছেন আশ্রয় ও খাদ্য সংকটে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে এক হাজারের বেশি কোরবানির হাট জমতে শুরু করেছে। বেশিরভাগ হাটে গরুর দাম পড়তির দিকে। অনলাইন গরুর বাজারেও গরুর দাম প্রায় গত বছরের মতোই রয়েছে। যশোরের গরু ব্যবসায়ী আবদুস সামাদ বলেন, 'মাত্র ৫-৬ দিন আগে যে গরুর দাম বেপারীরা ৮০-৮৫ হাজার টাকায় দেয়ার জন্য সেধেছেন, সেই গরু এখন ৭৫ হাজার টাকায়ও বিক্রি করতে পারছি না।

কোরবানির গরু আসতে শুরু করেছে মিয়ানমার থেকে। এরই মধ্যে কয়েক চালান এসেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সকাল নেই, দুপুর নেই, দিনের বিভিন্ন সময়ে গরু আসছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কোরবানির সময় বেশি বাকি নেই। তাই যত বেশি চালান আনা যায়, দেশে গরুর চাহিদা ততটাই পূর্ণ হবে। মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটানের গরু সাইজে অনেকটাই ছোট আকৃতির। কোরবানিতে ছোট আকৃতির গরুর চাহিদা বেশি থাকায় ব্যবসায়ীরা দামও ভালো পান। তাই এসব দেশ থেকে গরু আমদানিতে ব্যবসায়ীদেরও আগ্রহ বেশি।

এদিকে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধে কঠোর উদ্যোগ নিতে বিজেপির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ (আরএসএস)। তবে গরু নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব যেন না পড়ে, সে বিষয়ে সতর্ক এখন ঢাকা-দিলি্ল।

ভারতের গণমাধ্যম জানিয়েছে, ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা মনে করেন, সীমান্তে গরু পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা খুবই কঠিন। ভারতের গরু বাংলাদেশে না ঢুকলে ক্ষতি হবে দুই দেশেরই। গরু আসা বন্ধ হলে বাংলাদেশের ক্ষতির পাশাপাশি ভারতের প্রতি বছর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোরবানির গরু আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গরু নিয়ে সমস্যা থাকবে না।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, সরকার আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে গরুতেও দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক খামারিদের গরু লালন-পালনে উৎসাহিত করতে ২০০ কোটি টাকার একটি তহবিল তৈরি করেছে। এই টাকার পরিমাণ সামনের বছর আরও বাড়ানো হবে।-বিবিসি
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে