শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:১০:৩৪

‘খালেদার ঈদ বিলাতে, হাসিনার মার্কিন মুল্লুকে’

‘খালেদার ঈদ বিলাতে, হাসিনার মার্কিন মুল্লুকে’

সাগর আনোয়ার : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১৬ দিনের ব্যক্তিগত সফরে লন্ডনে রয়েছেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেখানে যাচ্ছেন ২৩ সেপ্টেম্বর। লন্ডনে যাত্রাবিরতি শেষে প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে যাবেন যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন মুল্লুকেই এবারের কোরবানি ঈদ কাটবে শেখ হাসিনার। আর বিলাতে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে এবারের ঈদ কাটবে খালেদা জিয়ার। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সে দেশে গেছেন তিনি।

শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী সাবেক পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রতিবেদককে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। এছাড়া বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ভূমিকা রাখায় ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ ঘোষিত ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারও গ্রহণ করবেন তিনি।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের দুই দফা তারিখ পরিবর্তন করে বিলাত সফর নিয়ে বিএনপি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে নানান জল্পনা-কল্পনা। বেগম জিয়া কি শুধুই ছেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন? নাকি ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রশ্নে বিশ্বজনমত গঠনের প্রক্রিয়াও তিনি চালাবেন। এমন প্রশ্ন নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সরকারদলীয় নেতারা একে দেখছেন ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এমনই ইঙ্গিত করেছেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া শুধুমাত্র সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে লন্ডন যাননি। তিনি ষড়যন্ত্র করতে সেখানে গিয়েছেন।

বিএনপি নেতাদের কয়েকজন জানান, খালেদা জিয়া লন্ডনে ছেলের সঙ্গে সময় কাটাবেন। পাশাপাশি তিনি দলের সাংগঠনিক বিষয়, ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ও যারা অভিমান করে বিএনপি থেকে দূরে আছেন তাদের বিষয়েও ছেলের সঙ্গে পরামর্শ করবেন।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে (অব) মাহবুবুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডনে গেছেন। সেখানে তিনি পুত্র ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে পরামর্শ করবেন এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার।

শেখ হাসিনা ও বেগম জিয়ার বিদেশ সফর নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে বুদ্ধিজীবীদের মাঝেও।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারি প্রতিবেদককে বলেন, খালেদা জিয়া মূলত চিকিৎসার পাশপাশি দল পুনর্গঠনের ব্যাপারে তারেক রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। এছাড়া যারা অভিমান করে বিএনপি থেকে দূরে আছেন তাদের বিষয়েও একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বিএনপির সামনে কাউন্সিল, সেখানে নেতৃত্বে কারা আসবেন। এসব বিষয়েও মূলত আলোচনা হবে বলে আমার মনে হয়। এছাড়া এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও কর্নেল অলির বিষয়টি নিয়েও মা-ছেলে আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চক্রবর্তী এই প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন তো ঢাকাতেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। বিদেশে গিয়ে কোন সভা-সেমিনারে কথা বললে সেখানে তা আমি অনৈতিকতার কিছু দেখি না। এটা তার অধিকার।

অন্যদিকে রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার হয়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে রাজনীতির মৌলিক কোন বিষয়ে গোপন সমঝোতা হতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামের ব্যাপারে দুই দলের ভেতরে বিদেশী মধ্যস্থতায় একটি অলিখিত সমঝোতাও হতে পারে। এজন্যই খালেদা জিয়া কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সঙ্গে মিল রেখে লন্ডন গেলেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চক্রবর্তী প্রতিবেদককে বলেন, এটা সত্য যে দুই প্রধান দলই জামায়াতে নিয়ে তাদের রাজনীতি করেছে। এখন বিএনপি যদি জামায়াতকে ত্যাগ করে তাহলে আওয়ামী লীগ যে জামায়াতকে তাদের সঙ্গে নেবে না তারই বা নিশ্চয়তা কী? জামায়াত নিষিদ্ধের প্রশ্নে দুই নেত্রীর মধ্যে যদি এই বিষয়ে কোন সমঝোতা হয় সেটা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। জামায়াত তো বাংলাদেশকে এখনও স্বীকার করে না। তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার জন্য একবারও ক্ষমা চায়নি। আর বিএনপির এই দূরবস্থার পেছনে জামায়াতের অবদান রয়েছে। তো এসব হিসাব মিলিয়ে যদি বিএনপি-জামায়াত সমঝোতা হয় তাহলে ভাল। বিষয়টি যেহেতু জল্পনা-কল্পনা তাই এ নিয়ে আর কি বা বলার আছে। তবে, রাজনীতিতে গুজব থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

তবে দুই নেত্রীর মধ্যে কোনো ‘ট্রানজিট পয়েন্টে’ আলোচনাকে নাকচ করে দিয়েছেন সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপির সঙ্গে কি আমাদের কোন ধরনের সমঝোতার প্রয়োজন আছে? এটা বোগাস কথা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরবেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পথে তিনি আবারও লন্ডন হয়েই ফিরবেন। এমন তথ্যই প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ইস্যুতে সমঝোতার আসলে কিছু নেই। বিএনপি তো এখন জামায়াতের মধ্যে ঢুকে গেছে। দেখা যাক, সমস্যা হলে তা সমাধান আমাদেরই বের করতে হবে।-দ্য রিপোর্ট
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে