শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:২৬:০৪

লন্ডন সফরে সেই সিদ্ধান্ত চায় বিএনপির তৃণমূল

লন্ডন সফরে সেই সিদ্ধান্ত চায় বিএনপির তৃণমূল

নিউজ ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে তার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে দলকে পুনর্গঠনের একটা নতুন উদ্যোগ নেবেন বলে আশা করছেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বিএনপিতে সাংগঠনিক সংকট চলছে বহুদিন ধরে। আর সরকারের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তৃণমূল পর্যায়ের সমালোচনাও বাড়ছে। এ অবস্থায় লন্ডনে দলের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতার এ সাক্ষাৎ থেকে দল পুনর্গঠন নিয়ে তৃণমূল নেতারা কী ধরনের উদ্যোগ আশা করছেন তা জানতে বিএনপির কয়েকজন তৃণমূল নেতার সঙ্গে কথা বলে বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার আগে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সে বৈঠকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দল পুনর্গঠনের ব্যাপারে তিনি লন্ডনে তারেক রহমানের পরামর্শ নেবেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে দুই দফায় লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে ব্যর্থ হলে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। তখন বিএনপির মাঠপর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সেই উদ্যোগ অগ্রসর হতে পারে নি। দলটির নেতাদের অনেকেই বলেছেন, তারেক রহমান লন্ডনে থাকলেও দলের নীতিগত সিদ্ধান্তসহ সব বিষয়েই তিনি ভূমিকা রাখেন। ফলে এখন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মুখোমুখি আলোচনায় দল পুনর্গঠনের বিষয় গুরুত্ব পাবে।

খুলনা থেকে বিএনপির সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মধ্যে আলোচনায় দল পুনর্গঠনের যে সিদ্ধান্ত আসবে সেদিকেই এখন তারা দৃষ্টি রাখছেন।

তিনি বলেন, বৈঠকের দিকেই আসলে আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চেয়ে আছেন। বিএনপির বর্তমান যে সংকট, এ মুহূর্তে দলের নেতৃত্বের পরিবর্তন- মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে স্ট্যান্ডিং কমিটি পর্যন্ত এ পরিবর্তন খুবই জরুরি এবং আমাদের নেত্রী বিভিন্ন সময় আলোচনায় তা প্রকাশ করেছেন এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য তারেক রহমানের সঙ্গে একটি পরামর্শ দরকার তার এবং সেটি এবারের সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হবে।

বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর একটা দাবি উঠেছে তৃণমূল থেকেই। কারণ, দুদফার আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপিতে হতাশার পাশাপাশি কোন্দল ও উপদলীয় তৎপরতা বেড়েছে। মাঠপর্যায়ের নেতাদের অনেকেই এখন প্রকাশ্যে পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের দিয়ে দলে পরিবর্তন আনার কথা বলছেন। বিএনপি আন্দোলনে কেন ব্যর্থ হয়েছে সেই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই দল পুনর্গঠন করা উচিত বলে মনে করেন বিএনপির নাটোর জেলা নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।

তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী ব্যক্তিগত সফর বা চিকিৎসার জন্য গেছেন এটা ঠিক। সেখানে আমরা আশা করি আমাদের পার্টির চিফ অবশ্যই উপলব্ধি করেছেন যে গত আন্দোলনের সময় এই ত্যাগী নেতাদের কী ভূমিকা ছিল। আর যারা ম্যাডামকে মিসগাইড করেছেন যে আন্দোলনের ডাক দেন খুব শিগগিরই সরকারের পতন হয়ে যাবে। কিন্তু তারা ও তাদের আমাদের পার্টির প্রধান আন্দোলন সংগ্রামের সময় কোনভাবেই পায় নাই। এতে করে এটা প্রমাণিত হয়েছে আমি আশা করছি সাহসী ও ত্যাগী নেতাদের উনি বিভিন্ন নেতৃত্বে নিয়ে আসবেন।

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পরই দলটিতে তারেক রহমানের অবস্থান। তবে বিএনপিতে তারেক রহমানের সঙ্গে দলটির সিনিয়র নেতাদের একটি বড় অংশের বেশ দূরত্ব ছিল। সেই সিনিয়র নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক তারেক শামসুর রেহমানও বলেছেন, এবার যে বিএনপিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে সে ধরনের ইঙ্গিত দলটির সব পর্যায় থেকে রয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা আছেন যাদের সঙ্গে তারেক রহমানের একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে। এটা বয়সের কারণে হতে পারে অথবা হয়তো তারেক রহমানের ব্যক্তিগত অ্যাপ্রোচের কারণেও হতে পারে যে, তাদের মধ্যে একটা রি-অ্যাডজাস্টমেন্ট ছিল না।

ফলে অনেকে অস্বস্তি বোধ করতেন তারেক রহমানকে নিয়ে- এটা সত্য কথা। অন্যদিকে, এটাও বাস্তবতা যে আপনি সিনিয়রদের পুরোপুরিভাবে বাদ দিয়ে দল পরিচালনা করাও সম্ভব না। আমার ধারণা সিনিয়র নেতা যারা বয়সের ভারে আক্রান্ত তাদের রিপ্লেসমেন্ট এখন হবে এবং সে রিপ্লেসমেন্টে তাদের জায়গাতে কারা আসবেন- তারেক রহমানের একটা ব্যক্তিগত চিন্তা-চেতনা আছে। তিনি দলের তরুণ নেতৃত্বের কারও কারও সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন। হয়তো আমরা দেখবো কিছু সিনিয়র এবং কিছু জুনিয়র সমন্বয়ে স্থায়ী পরিষদটা পুনর্গঠন হবে।

তবে দলটির নেতারা বলছেন, লন্ডন থেকে খালেদা জিয়া ফেরত আসার পরে সিদ্ধান্ত কী হয় এবং সেগুলো কতটা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয় তার ওপরই তাদের আন্দোলন এগিয়ে নেয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে।
পারিবারিক আবহে সময় কাটাচ্ছেন খালেদা

তানজির আহমেদ রাসেল, লন্ডন থেকে জানান, একান্ত পারিবারিক আবহে লন্ডনে প্রথম দিন পার করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়া। সময় কাটালেন প্রিয় পুত্র বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দুই পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান ও শর্মিলা আহমেদ, নাতনি জাইমা রহমান, জাফিয়া রহমান, জাহিয়া রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে। নাতনিদের কাছে পেয়ে দারুণ খুশি বেগম জিয়া। দুই পুত্রবধূর হাতের রান্না করা খাবার দিয়ে দুপুর ও রাতের খাবার খান তিনি। দীর্ঘ আট বছর পর খালেদা জিয়া তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একত্রিত হয়েছেন।

এই আনন্দঘন মুহূর্তে পরিবারের সবাই হাজির এক ছাদের নিচে।  বুধবার সকালে লন্ডন পৌঁছেন খালেদা জিয়া। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তাকে অভ্যর্থনা জানান ছেলে তারেক রহমান। তারেক রহমান নিজে গাড়ি চালিয়ে মাকে নিয়ে যান সেন্ট্রাল লন্ডনের বুকিংকৃত একটি হোটেলে। হোটেলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম সেরে বেগম জিয়া যোগ দেন তারেক রহমানের পরিবারের সঙ্গে। সেখানে আছেন মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও তার দুই মেয়ে।

বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন বেগম জিয়া। লন্ডন সফরের প্রথম দিনে বেগম জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক  ও সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ। এ ছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে দলীয় আর কোন নেতাকে সাক্ষাৎ দেননি। একান্ত পারিবারিকভাবেই সময় কাটান তিনি।

তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, প্রথমে বেগম জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। চিকিৎসার বিষয়গুলো সমন্বয় করছেন বেগম জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান।

লন্ডন সফরকালে বেগম জিয়া বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। এতে দল পুনর্গঠন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ও বিএনপির ভবিষ্যৎ রূপরেখা  নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া লন্ডনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও নাগরিক সংবর্ধনা, মিট দ্য প্রেস,  ও ঈদের দিন  শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে বেগম জিয়ার। পাশাপাশি বৃটেনের মূলধারার একাধিক রাজনীতিবিদ, অলপার্টি পার্লামেন্টারী গ্রুপ, বিভিন্ন সংস্থার প্রধান, কমনওয়েলথ ও বৃটিশ সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।-বিবিসি
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে