রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:৫৩:০৪

বেহাল সড়কেই বাড়িযাত্রা

বেহাল সড়কেই বাড়িযাত্রা

শাহিদুর রহমান শাহিদ : দশ হাত পর পর ছোট-বড় গর্ত। সব সময়ই ছোট-বড় শত শত যানবাহন চলছে। আর গর্তে পড়ে হেলেদুলে চলছে গাড়িগুলো। রংপুর মডার্ন মোড় থেকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ৭৫ কিলোমিটার অংশের এই অবস্থা।

একই অবস্থা ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর অংশের। রাজবাড়ীর বসন্তপুর থেকে মাগুরার ওয়াপদা রোড পর্যন্ত ৮৬ কিলোমিটার বেহাল সড়কের বেশির ভাগ স্থানের পিচ ও কার্পেটিং উঠে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চলাচলকারী পরিবহনগুলোকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ঈদযাত্রীদের।

শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুট ৫ দিন বন্ধ থাকার পর গত বুধবার ফেরি চলাচল শুরু হয়। কিন্তু পরদিনই তাতে বিঘ্ন ঘটে। এ রুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হতে আরো ২ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অপর একটি মহল এ রুটে ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

এদিকে নাব্য সংকটে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ফেরি চলাচলে বিঘ্ন হওয়ায় যাত্রী চাপ বাড়বে পাটুরিয়া দৌলতদিয়া ঘাটে। তাছাড়া ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের অবস্থা অন্যান্য মহাসড়কের চেয়ে ভালো। তাই এ রুটটি বেছে নিতে পারেন দক্ষিণ অঞ্চলের ঈদযাত্রীরা। এতে ঘাটে দীর্ঘ যানজটের শঙ্কাও রয়েছে বলে জানা গেছে। এর ফলে ঈদে ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরা খানিকটা অনিশ্চয়তার মধ্যেই পড়ে গেছে। অপরদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অবস্থা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। এ তিন মহাসড়কে যানবাহনের চাপে জট না হলে মোটামুটি নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবেন ঘরমুখো মানুষ।

অপরদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপে এখনই সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। গতকাল শনিবার ভোর পাঁচটা থেকে ওই সড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের নাটিয়াপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।
ঈদের আগে মহাসড়ক শতভাগ যানবাহন চলাচল উপযোগী করে তোলা যায়নি। সে কারণে সম্পূর্ণ যানজটমুক্ত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অথচ এর আগে সেতুমন্ত্রী অনেকবার বলেছেন, মহাসড়কের অবস্থা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় ভালো।

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, এ বছর অতি বৃষ্টির কারণে মহাসড়কগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই যানজট শতভাগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়কের অনেকটা মেরামত হয়ে গেছে। তাই যানজট সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।

গতকাল দুপুরে নোয়াখালী যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের খানাখন্দ পরিদর্শন শেষে সেতুমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। পরিদর্শনের সময় সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, নদী ভাঙন, পলি পড়ে নাব্য সংকটের কারণে ফেরি সার্ভিসে শিমুলিয়া রুটে সমস্যা হচ্ছে। আগামী সোমবারের মধ্যে খনন শেষ হবে। এরপরই শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুট স্বাভাবিক হবে।

গতকাল দিনদুপুরে মাদারীপুরের শিবচরে কাওড়াকান্দি ঘাট পরিদর্শন শেষে শাজাহান খান এসব কথা বলেন। এ সময় বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান, বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে ঘাটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে দিকনির্দেশনা দেন।

আমাদের ব্যুরো অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে, সারা দেশে ১ হাজার ৭৫২ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ৭৫ কিলোমিটার, ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর অংশের ৮৬ কিলোমিটার, খুলনায় ৬০ কিলোমিটার, বাগেরহাটে ২০ কিলোমিটার, সাতক্ষীরায় ৫০ কিলোমিটার, যশোরের ৩০ কিলোমিটার, ঝিনাইদহে ৩০ কিলোমিটার, নড়াইলে ২৫ কিলোমিটার, মাদারীপুরের ৪৫ কিলোমিটার, বরিশালে ৫০ কিলোমিটার এলাকার চরম বেহাল দশা।

যশোর-নড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়ক, কুষ্টিয়া (ত্রিমোহনী)-মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ মহাসড়ক, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-পাকশী ফেরি-দাসুরিয়া মহাসড়ক, ভেড়ামারা-দৌলতপুর সড়ক, দৌলতদিয়া-ফরিদপুর (গোয়ালচামট)-মাগুরা-ঝিনাইদাহ-যশোর-খুলনা মহাসড়কের অনেক অংশই খানাখন্দে ভরা।

নাটোর-ঢাকা-পাবনা এবং নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকারও এই অবস্থা। বিটুমিন ও পাথর উঠে গিয়ে ছোট-বড় হাজার হাজার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এসব এলাকায়।

ঢাকা-বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের অবস্থাও খুব খারাপ। বগুড়া চারমাথা থেকে দুপচাঁচিয়া পর্যন্ত রাস্তার কার্পেট উঠে গিয়ে খোয়া বের হয়ে গেছে। হয়েছে বড় বড় গর্ত। সান্তাহার-বগুড়া সড়কের সান্তাহার পূর্ব রেলগেট থেকে বিপি স্কুল পর্যন্ত রাস্তার দশা করুণ।

ঢাকা-খুলনা সড়কের যশোর শহরের পালবাড়ি-চাঁচড়া-মুড়লির ৬ কিলোমিটার, পালবাড়ি-দড়াটানা-মনিহার-মুড়লির সাড়ে ৬ কিলোমিটার, যশোর-বেনাপোলের নাভারণ মোড় পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার ও যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের পালবাড়ি থেকে ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে ৮ কিলোমিটারের অবস্থা বেশি খারাপ।

এ ছাড়া দুটি আঞ্চলিক মহাসড়কেরও একই রকম অবস্থা। এর মধ্যে যশোর-চুকনগর সড়কের ৩৮ কিলোমিটার ও যশোর-নাভারণ-সাতক্ষীরা সড়কের নাভারণ মোড় থেকে সাতক্ষীরার ইলিশপুর পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার যানবাহন চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব সড়কে চলাচল করতে গিয়ে মানুষকে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা।

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের খুলনাগামী গঙ্গাবর্দী, কানাইপুর বাজার, পরীক্ষিতপুর, মধুখালী রেলগেট, বাজারসংলগ্ন এলাকা ও বাগাটবাজার এলাকার অবস্থা খুবই খারাপ। এসব এলাকার সড়কজুড়ে ছোট-বড় গর্ত। বৃষ্টি হলে চলাচল করা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।

ফরিদপুর সড়ক বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মহিবুল্লাহ সুমন বলেন, মানুষের চলাচল নির্বিঘ্নে করতে আমরা চারটি গ্রুপে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি। মাঝেমধ্যে বৃষ্টির কারণে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে হচ্ছে।

সড়ক বিভাগের ফরিদপুর কার্যালয় জানায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মাগুরার ওয়াপদা থেকে রাজবাড়ীর বসন্তপুর পর্যন্ত ৪৯ কিলোমিটার অংশ ফরিদপুর সড়ক বিভাগের মধ্যে পড়েছে।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার পড়েছে এ সড়ক বিভাগের অধীনে।

ফরিদপুর সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম বলেন, ঈদুল ফিতরের আগে থেকেই আমরা মহাসড়ক দুটিতে জরুরি কাজ করে যাচ্ছি। অতিবৃষ্টির কারণে কাজে ব্যাপক বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা থেকে খুলনাগামী সোহাগ পরিবহনের চালক হালিম মিয়া বলেন, প্রতিদিন এই মহাসড়কে চলাচলকারী হাজার হাজার ভারি ও হালকা সব ধরনের যান অসুবিধায় পড়ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রাংশ। দুর্ঘটনাও ঘটছে। দ্রুত মেরামত না করলে ভারি গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

যশোর থেকে ঢাকাগামী কাভার্ড ভ্যানের চালক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, যশোর থেকে মাগুরা পর্যন্ত সড়কটি ততটা খারাপ নয়। কিন্তু কামারখালী সেতু পার হলেই অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

ঢাকা-রংপুরে মহাসড়কের রংপুর মডার্ন মোড় থেকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার অংশজুড়ে সড়কটির বেশিরভাগ জায়গায় শুধুই খানা-খন্দক আর গর্ত। তবুও ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। এতে পরিবহনের ক্ষতির পাশাপাশি প্রতিনিয়তই হচ্ছে যানজট।

স্থানীয়রা বলছেন, বারবার লোক দেখানো কাজ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এই বর্ষায় এরই মধ্যে তিন দফা সংস্কার হয়েছে। ফের নতুন করে সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।

বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের মহাস্থান থেকে চণ্ডিহারা পর্যন্ত সড়কে বড় বড় গর্ত রয়েছে। বগুড়া-জয়পুরহাট সড়কের বটতলী থেকে কালাই পর্যন্ত একই অবস্থা।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে নতুল্লাবাদ বাসটার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গার মোড় থেকে গৌরনদী অংশের অবস্থাও খারাপ।
এদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে থেমে থেমে চলছে যানবাহন। ফলে গাজীপুরের চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

গোড়াই মহাসড়ক থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবির জানান, শনিবার ভোরে মুষলধারে বৃষ্টি এবং মহাসড়কে পশু বোঝাই ট্রাকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চন্দ্রা ত্রিমোড় ও এর আশপাশের এলাকায় থেমে থেমে যান চলছে।

এতে মহাসড়কে আটকা পড়ে গরু বোঝাই ট্রাক চালক ও ঈদ উপলক্ষে ঘরে ফেরা যাত্রীরা বিড়ম্বনায় পড়েছেন।
কোনাবাড়ির সালনা মহাসড়ক থানার ওসি দাউদ খান জানান, মহাসড়কে পশুবাহী ট্রাক ও অতিরিক্ত গাড়ির চাপে মহাসড়কে যানবাহন ধীর গতিতে চলছে। তবে মহাসড়ক স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।-মানবকণ্ঠ
২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে