রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:১০:৫২

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে, নেপথ্যে প্রেম!

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে, নেপথ্যে প্রেম!

নিউজ ডেস্ক : হৃদয় ও নীরা। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সেখানেই পরিচয়। এরপর মন দেয়া-নেয়া। ভালবাসার মানুষ দু’জন দু’জনার। একসঙ্গে চলতে গিয়ে তাদের মধ্যে মান-অভিমান হতো। হতো ঝগড়াও। আর এ মান-অভিমান নিয়েই একসঙ্গে আত্মহত্যা করে এ প্রেমিকযুগল। পুরো নাম ‘সাদিত হাসান হৃদয় (২২) ও নুসরাত জাহান নীরা (২০)। নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তারা। ১০ মাস ধরে তাদের মধ্যে সম্পর্ক। শুক্রবার বিকালে মোবাইল ফোনে দুজনের ঝগড়া হয়। তখন হৃদয় ছিল তার মেসে। আর নীরা ছিল তার বোনের বাসায়।

নীরা তখন হৃদয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে আসতে বলে। হৃদয় দেখা করতে রাজি হয়নি। ঝগড়ার একফাঁকে হৃদয় মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। নীরা রাগ করে তখন হৃদয়ের বাসায় চলে আসে। উভয়ের মধ্যে চিৎকার-চেঁচামেচি হয়। এরপর রুমে ঢুকে আত্মহত্যা করেন তারা। পুলিশ বাসার দরজা ভেঙে প্রেমিক যুগলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকের ৬ নম্বর রোডের ২০৪ নম্বর বাড়িতে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। গতকাল সকালে ছয়তলা ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির প্রথম তলার ১/বি নম্বর ফ্ল্যাটে থাকতো হৃদয়। নীরা ওই বাসায় প্রায়ই যাতায়াত করতো। প্রতিটি ফ্ল্যাটে তিনটি করে ব্লক। প্রায় ব্লকে ফ্যামেলি বসবাস করে। হৃদয়ের ব্লকে তিনটি কক্ষ ছিল। ঢুকতেই হাতের বামদিকে কক্ষে থাকতো হৃদয়। তিনটি কক্ষে হৃদয়সহ মোট ৬ জন থাকতো। তারা ৬ জন নর্থসাউথ ও ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল।

বাড়ির কেয়ারটেকার আবুল কাশেম জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা পৌঁনে ৭টার দিকে আমি নিচে নিরাপত্তারক্ষীদের কক্ষে বসেছিলাম। বাসার মূল গেট কখনও খোলা থাকে আবার কখনও বন্ধ থাকে। ওই দিন খোলা ছিল। তিনি আরও জানান, সন্ধ্যার সময় মোটরের পানি ছাদের ট্যাংকিতে ঠিকমত উঠেছে কিনা তা দেখতে আমি ছাদে যাই। এরমধ্যে নীরা গেট খোলা পেয়ে হৃদয়ের ফ্ল্যাটে যায়। তখন হৃদয় ছাড়াও ওই বাসায় আরও তিনজন ছিল। হৃদয় ও তার বন্ধু খোকন একই রুমে থাকতো। নীরা যাওয়ার পর খোকন রুম থেকে বের হয়ে যায়।

অন্য কক্ষের বারান্দায় বসেছিল। এরপরে তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি শুরু হয়। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে তাদের ঝগড়াঝাটি চলতে থাকে। পরে তারা নিস্তব্ধ হয়ে যান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে খোকন ওই কক্ষ খোলার জন্য দরজা নক করে। দীর্ঘক্ষণ সাড়া না পেয়ে দরজা ধাক্কাধাক্কি করে। আমিও অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করি। কোন সাড়া না পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে ভাটারা থানার এসআই নজরুল ইসলাম ওই রুমের দরজা ভেঙে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে নীরার গলায় কাপড় পেঁচানো এবং জানালার আড়ার সঙ্গে গলায় গামছা পেঁচানো হৃদয়ের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেন। ওইসময় নিহতের বন্ধুরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। খবর পেয়ে নীরার বোন ওই বাসায় ছুটে আসেন। তিনিও কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নিহত হৃদয়ের চাচা আবু তারিক বিদ্যুৎ জানান, হৃদয় ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেছে। এসএসসিতেও তার জিপিএ-৫ ছিল। এরপর সে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে বিবিএতে ভর্তি হয়। হৃদয় তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র ছিল। তিনি আরও জানান, নীরা নামে তার এক বান্ধবীর সঙ্গে প্রেম ছিল। তবে তাদের বিষয়টি কোন পরিবার অবগত ছিল না। প্রেমঘটিত কারণে তারা দুইজন আত্মহত্যা করেছে। তাদের মৃত্যু বেদনাদায়ক। হৃদয়ের পিতার নাম মো. ওয়াজেদ আলী।

গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার সদর থানার নয়াপাড়ার পাঁচরাস্তার মোড় এলাকায়। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে হৃদয় ছিল দ্বিতীয়। নীরার পিতার নাম নাসির উদ্দীন। গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ  জেলার বন্দর থানার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের চাপাতলী এলাকায়। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে নীরা ছিল দ্বিতীয়। ভাটারা থানার এসআই নজরুল ইসলাম জানান, নীরা ও হৃদয়ের মধ্যে প্রেম ছিল। প্রেমের কলহের জেরে তারা আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত দুইজনের লাশের ময়নাতদন্তের পর নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।-এমজমিন
২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে