সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:০৬:২৭

আ.লীগের সেই নীতিতে ক্ষুদ্ধ শরিকরা

আ.লীগের সেই নীতিতে ক্ষুদ্ধ শরিকরা

জাকির হোসেন লিটন : সরকারের একলা চলো নীতি, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা, মন্ত্রীদের অতিকথন, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা এবং নিজেদের যথাযথ মূল্যায়ন না পওয়াসহ নানা ইস্যুতে সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ জোটের শরিকেরা। সরকারের সাথে টানাপড়েনের কথা কখনো প্রকাশ্যে আবার কখনো বা জোটের অভ্যন্তরীণ বৈঠকেও উঠে আসছে।

সর্বশেষ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা সম্প্রতি গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সমালোচনা করে বলেছেন, বিষয়টি আগে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে আলোচনা করা উচিত ছিল। সেটা না করায় এই জোট রাখার কোনো অর্থ নেই।

তিনি বলেন, বর্তমানে মতায় ১৪ দলীয় জোট। তাই বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর মতো জনগুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তা অবশ্যই ১৪ দলীয় জোটে আলোচনা করা উচিত ছিল। কিন্তু আলোচনা করা হয়নি। তাহলে তো ১৪ দলের জোট রাখার কোনো অর্থই দাঁড়ায় না। সেজন্য অবিলম্বে জোটের মিটিং ডেকে বিষয়টি আলোচনারও দাবি জানান তিনি। একই সাথে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি স্থগিত এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে তেলের দাম কমানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণ রাস্তায় নামলে ওয়ার্কার্স পার্টিও তাদের সাথে থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগের সাথে জোটের শরিকদের টানাপড়েন প্রকাশ্যে রূপ নেয় গত মাসে। আওয়ামী লীগ ঘোষিত শোকের মাসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সন্তান শেখ ফজলুল করিম সেলিম ১৯৭৫ সালে জাসদের ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ্যে কড়া বক্তব্য দেন। জাসদ ওই সময় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার সাথে সুর মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরেক আত্মীয় ও আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফও একই ধরনের বক্তব্য দেন। তাদের বক্তব্যের বিরোধিতা করে পাল্টা বক্তব্য দেন জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে মাখন খেয়েছেন। সেখানে জাসদ যায়নি। এভাবে সরকারের শরিকদের মুখোমুখি অবস্থানে জোটের নেতাকর্মীরাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। বিষয়টি শুধু বক্তব্যেই থাকেনি, পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। কুষ্টিয়ার মিরপুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাসদের একাধিকবার সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন।

এমন প্রেক্ষাপটে ১৪ দলের সর্বশেষ বৈঠকে জাসদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সমালোচনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। জাসদকে নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী তা সরাসরি জানতে চাওয়া হয় ওই বৈঠক থেকে। পরে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের পদক্ষেপে শান্ত হন শরিকেরা।

ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা দাবি করছেন, সরকারে থাকলেও সরকারের কার্যক্রমে তেমন কোনো অংশগ্রহণ নেই শরিকদের। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাদের মতামতের তেমন কোনো মূল্যায়নও নেই। কিন্তু সরকার বড় ধরনের বিপদে পড়লে তখন জোটের শরিকদের নিয়ে দায়সারা বৈঠক করে দায়িত্ব শেষ করে আওয়ামী লীগ। ওই সব বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলোও আর তেমন আলোর মুখ দেখে না। এ ছাড়া সরকারের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদ, সংসদের বাইরে ও জোটের ফোরামে বারবার সরকারকে সতর্কবার্তা দিলেও আওয়ামী লীগ তা আমলে নেয়নি। তাই সরকারের সব ব্যর্থতার দায়ভার তাদেরই নিতে হবে।

সরকারি জোটের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসলে আমরা নামমাত্র সরকারের শরিক। আওয়ামী লীগ তালিকা বড় করার জন্যই আমাদের সাথে রেখেছে। কিন্তু জোট ও সরকারে আমাদের কোনো গুরুত্ব নেই। তারা নিজেরাই সব সিদ্ধান্ত নেয়। এমনকি বড় ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমাদের জানানোর প্রয়োজনও মনে করে না। তাই তাদের মন্ত্রী, এমপি ও দলের ক্যাডারদের অপকর্মের দায় আমরা নেব না।

জোটের শরিক ১১ দলের একজন নেতা বলেন, সরকার সবকিছুতেই একলা চলো নীতিতে বিশ্বাস করে। কারণ, আমাদের মতো বামপন্থী দলগুলো সব সময় সাধারণ জনগণের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি সরকার একক সিদ্ধান্তে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। এত বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আওয়ামী লীগ আমাদের সাথে একটু কথা বলারও প্রয়োজন মনে করেনি। এখন সাধারণ জনগণের সামনে আমরা কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াব আর আমাদের এ জোটে থেকেই বা লাভ কী?

জোটের অন্য এক নেতা বলেন, বড় ধরনের ইস্যুতে আমাদের মতামত না চাওয়া হলেও সরকারের কর্তাব্যক্তিদের দুর্নীতি, মন্ত্রীদের উল্টাপাল্টা কথা ও দলীয় নেতাকর্মীদের খুনোখুনিসহ নানা ইস্যুতে আমরা বারবার তাদের সতর্ক করেছি। সে জন্য আমরা সমালোচনা করব ভেবে সম্প্রতি গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে আমাদের কোনো পরামর্শ নেয়া হয়নি। এটি জোটের শরিকেরা ভালোভাবে নেয়নি। বর্তমানে দেশের শিক্ষাঙ্গনে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। সরকার তা সামাল দিতে পারছে না। এর দায় কে নেবে; এর দায় আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে।

এ ব্যাপারে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, সরকারের সাথে আমরা সক্রিয়ভাবে থাকলেও কোনো কোনো বিষয়ে তাদের সাথে আমাদের মতের মিল হয় না। আমরা বিভিন্ন সময়ে তাদের সেসব বিষয় তুলে ধরি। আর সম্প্রতি গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে আমরা এখনো পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।-নয়াদিগন্ত
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে