সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৪:৩৭:০৬

নিয়তির কি নির্মম পরিহাস!

নিয়তির কি নির্মম পরিহাস!

পাঠকই লেখক :ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর মোটামুটি সব বড় ভাইদের টিউশনি করাতে দেখেছি। সাথে শুনেছি পড়াতে গিয়ে তাদের নানা রকম মজাদার কাহিনী। ছাত্রীর সাথে প্রেম করার ঘটনাও ঘটিয়েছেন অনেকেই। খুব ভাল লাগত এসব ঘটনাগুলো শুনতে। মনে মনে ভাবতাম আমিও একদিন ভার্সিটিতে ভর্তি হব, দু'একজন ছাত্র কিংবা ছাত্রীকে পড়াবো। কত্ত মজা হবে।

দেখতে দেখতে সেই সুযোগটা এসে গেল। নামকরা একটা ভার্সিটিতে ভাল একটা সাবজেক্টে চান্স পেয়ে গেলাম। একদিন এক সিনিয়র ভাই এসে আমাকে বলল উনার হাতে এক ছাত্রীর জন্য টিউশনীর অফার এসেছে। আমিও কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেলাম। সেই বড় ভাই আমাকে পরের দিন সেই নতুন ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলেন। আমি মনে মনে খুব খুশি ছিলাম।

পরেরদিন তানিসাদের বাড়িতে গেলাম। হ্যা, আমার ছাত্রীর নাম ছিল তানিসা। ভারি সুন্দর নাম। ক্লাস থ্রিতে পড়ে। ইংলিশ মিডিয়ামে। ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল। আমাকে মাসে বারোদিন পড়াতে হবে। প্রতিমাসে সম্মানি হিসেবে আমাকে উনারা সাড়ে চার হাজার টাকা দিতে চাইলেন। আমি রাজি হয়ে গেলাম।

সেদিন বড় ভাইয়া আমাকে উনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। আমি তানিসার সাথে তার পড়ার রুমে গেলাম। প্রথমে কিছু সাধারন প্রশ্ন করে টেস্ট নেওয়ার চেস্টা করে দেখলাম ছাত্রী আমার তুখাড় মেধাবী আর অনেক চঞ্চল। তবে জীবনে অনেক বড় কিছু হবে সেই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম। কারন, তানিসা মাত্র ক্লাস থ্রিতে পড়ে অথচ তার জ্ঞানের পরিধী অনেক বিশাল। এই ছোট্ট বয়সে বাচ্চারা সাধারনত পাঠ্যপুস্তক ভিত্তিক জ্ঞান আহরন করে থাকে। কিন্তু তানিসা ক্লাস ভিত্তিক বই ছাড়াও বাহ্যিক বিষয় সম্পর্কেও অনেক জানতো।

কিছুদিনের মধ্যে তানিসার ব্যাপারে অনেক আগ্রহী হয়ে উঠলাম আমি। মেয়েটা অনেক দুস্টু হলেও খুব মায়াবী ছিল। আমাকে কখনো স্যার বলে ডাকতো না। ভাইয়া বলতো। মাত্র কয়েকদিনের ব্যাবধানে অনেক মায়া জন্মে গেল তানিসার প্রতি। পড়ার সময় অনেক দুষ্টূমী করতো তানিসা। কিন্তু পড়ালেখায় কোন কমতি ছিল না।

আমি প্রতিদিন ওর জন্য চকোলেট নিয়ে যেতাম। শর্ত ছিল, চকোলেট নিয়ে গেলে ও কোন দুষ্টুমি করবে না। কিন্তু চকোলেট দেওয়ার পরেও ফলাফল ছিল শুণ্য। কোন কোন দিন তানিসার দুষ্টূমিতে অতিস্ট হয়ে বকাবকিও করতাম। তখন, ও মুখ গোমরা করে চুপচাপ বসে থাকতো। তখন আমার এতটাই খারাপ লাগতো যে বলার মত নয়।

কিছু দিনের মধ্যে তানিসার লেখাপড়ার অগ্রগতি চোখে পড়ার মত ছিল। ক্লাসে ফার্স্ট গার্ল হওয়ার পরেও টিউটোরিয়াল, উইকলি, কিংবা মান্থলি এক্সাম গুলোতে তার মার্ক্স আগের তুলনায় অনেক বেশি হতে লাগল। ক্লাস টিচাররা পর্যন্ত তার মার্ক্স দেখে চমকে গেল। প্রতি এক্সমেই তার মার্ক্স 95+ ছিল।

একদিন বিকেলে, তানিসাকে পড়াতে যাবো বলে রেডি হচ্ছিলাম। হঠাৎ, আন্টি (তানিসার আম্মু) আমার নাম্বারে কল দিল। আমি রিসিভ করে সালাম দিলাম। আন্টি বলল, "বাবা আজকে তুমি এসো না। আমরা তানিসাকে নিয়ে একটু ডাক্তারের কাছে যাবো। তুমি আগামী শনিবার এসো। ঠিক আছে??"

আমি বললাম, "আচ্ছা আন্টি। আমি তাহলে শনিবার আসছি।"

মাঝখানে তিন দিন ছুটি পেলাম। মনটা ভালো হওয়ার কথা, কিন্তু হল না। বরং আরো খারাপ হয়ে গেল। তানিসাকে দেখার জন্য এক প্রবল ইচ্ছা কাজ করছিল মনে। খুব মিস করছিলাম, আমার ছোট্ট বোনটাকে। বোন বলছি, কারন তানিসাকে আমি নিজের ছোট বোনের মতই দেখতাম।

চলবে......

লেখক: jeffy mahin
বি:দ্র:  সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে