সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:০৭:২২

বন্ধুত্বের পাগলামি!

বন্ধুত্বের পাগলামি!

পাঠকই লেখক ডেস্ক: রাত নয়টা বাজে । বউয়ের সাথে বসে বসে টিভি দেখছিলাম । এ সময় আমার মোবাইল বেজে উঠলো । অপরিচিত নাম্বার ।

- হ্যালো কে বলছেন?

- ওই ব্যাটা তনয়, তুই কই? আমরা এয়ারপোর্টে ।

- মানে ? কে আপনারা?

- আমি হাসান । মনে পড়ে?

- হাসান তুই? কবে আসলি বাংলাদেশে?

- এইমাত্র ল্যান্ড করলাম তোকে সারপ্রাইজ দিতে। তাড়াতাড়ি চলে আয় ।

- আর কে এসেছে? নাদিম, নিলয়, জাহিন, রিশান ওরাও এসছে নাকি?

- হুম । আমাদের সার্কেলের সবাই ।

- আমি আসছি দোস্ত ।

ফোন রেখে আমি নিহিকে বললাম,
- নিহি, হাসানেরা এসেছে ।

নিহি মুখ বাকা করে বললো,
- তাতে আমার কি?

- এভাবে বলছ কেন? ওদেরকে ভুলে গেছ?

- ভুলবো কেন? তোমার শয়তান বন্ধুগুলাকে ভুলা যায়?

- তোমার আজ মেজাজ খারাপ কেন বুঝছি না । যায় হোক আমি এখন যাচ্ছি ওদের কাছে ।

- যাও । আর আসার সময় চাকু নিয়ে আসবা ।

- চাকু? কেন?

- কাটাকুটি করতে হবে ।

- কি?

- উফফ এত কথা বলো কেন? যেটা আনতে বলছি আনবা । যাও এখন ।

- আচ্ছা যাচ্ছি ।

***
রেডি হয়ে খুব দ্রুতই রিকশায় রওয়ানা দিলাম । দোস্তদের দেখার জন্য আর তর সইছে না । আমি, হাসান, নাদিম, নিলয়, জাহিন, রিশান আমরা অন্তরঙ্গ বন্ধু । সেই স্কুলবেলা থেকেই । স্কলারশীপের জন্য তারা অনেক আগেই বিদেশ চলে গেছে । নিহির সাথে আমার বিয়ে আড়াই বছর হয়ে গেল । এরকম মেজাজ আগে দেখিনি । তবে আমাদের প্রেম শুরু হয় কলেজ লাইফ থেকেই । এক্ষেত্রেও বন্ধুদের শয়তানি হাত ছিল । এমনি এমনিতো নিহি ওদের শয়তান বন্ধু বলেনি । ওরা আসলেই দুষ্টু শয়তান । কিছু কিছু ঘটনা মনে পড়লে আমার এখনো হাসি পায় । যেমন একটা বলি ।

কলেজে যখন প্রথম নিহিকে দেখি তখনই ক্রাশ খেয়ে গেলাম । ক্লাসে তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম আড় চোখে । একসময় প্রেমে পড়ে গেলাম । তবে ব্যাপারটা কাউকে বুঝতে দেয়নি । বন্ধুদের তো বলাই যাবে না । একবার কানে গেলে আমি শেষ । পচানি খাইতে খাইতে জান বের হয়ে যাবে । তবুও ওরা কিভাবে জানি ব্যাপারটা বুঝে যায় ।

জাহিন বলে, 'তনয় মামা, তোমার চয়েস কিন্তু ফাটাফাটি ।'
নাদিম বলে, 'এক্কেরে সেই ।'

আমি চমকে গেলাম । ব্যাটারা বুঝে গেল নাকি ? আমি না বুঝার ভান করে বললাম,
- মানে কি?

- মানে বুঝনা না? ধোয়া তুলসি পাতা । ক্লাসে তুমি হা কইরা কার দিকে তাকায়া থাকো?

- আরে ওইটাতো নিহি. . .নিহি নাম বলে আমি জিবে কামড় দি ।

- এইতো মামা আসল কথা মুখ দিয়া বের হইয়া গেসে । তা ভাবির লগে কথাবার্তা কিছু বলসিস?

- না । ভয় লাগে ।

- ব্যাপার না । আমরা আছি না? তর কাজ হইয়া গেসে ধরে নে । বাট না খাওয়ালে কিন্তু খবর আছে ।

- আচ্ছা মামা খাওয়ামু ।

মনে মনে ভাবলাম এত সহজে হয়ে গেল! ইশ কেন যে ওদের আগের বলিনি ।

কিন্তু কিসের কি! পরদিন কলেজে গিয়ে দেখি সবাই ব্যাপারটা জেনে গেছে । নিহির বান্ধবীগুলাও আমারে দেখে ফিচকি হাসি দিয়ে চলে যায় । বান্ধবীরা জানলে তো নিহির কানে যাওয়া কোন ব্যাপারই না । ছি ছি লজ্জার ব্যাপার !

- ওই শালারা, তোরা কি করসস বল?

- এখনো কিছুই করি নাই । এখন তোকে একটা চিঠি লিখা লাগবে ভাবির জন্য । আবেগী কিছু কথা লিখবি । ভাবি সিউর পটে যাইবো ।

- আচ্ছা লিখব । আমি তাকে নিয়ে যা কল্পনা করি তাই লিখব চিঠিতে । কিন্তু তার কাছে দিব ক্যামনে?

- গাধার মতো প্রশ্ন করবিনা । আর আজকাল ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইলের দাম বেশি । তুই এক কাজ কর । হাত কাইট্টা রক্ত দিয়া চিঠি লিখ ।

- এহহ । ওইসব কাটাকুটি করতে পারব না ।

নিলয় বলে, 'গরু মহিষ ছাগল থাকতে তোরা এসব কি কস?'

- মানে?

- আরে গাধা রক্ত হইলেই হল । সেটা মানুষেরই হোক আর গরু মহিষেরই হোক । রক্ত রক্তই ।

হাসান বলে, 'আরে মামা তোর মাথায় তো ব্যাপক বুদ্ধি । আজকেই একটা মুরগি কিনে জবাই দিমু ।'

কি আর করা! বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে একটা মুরগি কিনতে হল । সেই মুরগির রক্ত দিয়ে ওরাই চিঠি লিখে দিল । আমি চিঠি পড়ে হাসতে হাসতে বেকুব হইয়া গেলাম । পরে নিজে একটা সিরিয়াস চিঠি লিখেছিলাম ।

পরদিন সকালবেলা চিঠি দেয়ার জন্য বন্ধুরা মিলে নিহির বাসায় গেলাম । নাদিম সেই রক্তমাখা চিঠি নিহিদের বাসার বারান্দায় ফেলে দিল । নিহি তখন বারান্দায় ছিল । আমরা প্রাচীর ঘেষে দাঁড়িয়ে গেলাম । নিহি বললো, কে? কে কাগজ ছুঁড়েছে?

বন্ধুরা আওয়াজ করে হেসে দিল । আর আমাকে ফেলে সাথে সাথে দৌঁড় দিল । আমি কি করব বুঝলাম না । হা করে দাঁড়িয়ে রইলাম । এসময় নিহি সামনে এসে দাঁড়াল । আমার বুকের ধুকপুক শব্দ তখন প্রথমবারের মতো শুনতে পেয়েছিলাম ।

- এই তুমি তনয় না? এই কাগজ তুমি ছুঁড়েছ? তাও আবার রং দিয়ে লিখেছ মনে হচ্ছে । থামো পড়ি ।

- না মানে ইয়ে. . . আমি ওর হাত থেকে চিঠিটা ফট করে কেড়ে নিয়ে আসল চিঠি ফেলে দিয়ে দিলাম দৌঁড় ।

দৌড়াতে দৌড়াতে ভাবলাম, শালারা আসলেই আমার বন্ধু না । এভাবে বিপদে রেখে ওরা পালিয়ে গেল ক্যামনে ? বিপদেই বন্ধুর পরিচয় ।

না বিপদেও ওরা বন্ধুর পরিচয় দিয়েছে । আমার মামণি যখন হাসপাতালে ছিল, তখন দেখেছি ওরা কতটা করেছে । আমার মা যেন ওদেরই মা ।

***
এইতো আমাদের বন্ধুত্ব । আজ ওরা বাংলাদেশে এসেছে পাঁচ বছর পর । দেখার জন্য উশখুশ লাগছে ।

রাত বারটা । এয়ারপোর্টে পৌছে আমি নাদিমকে কল দিলাম ।

- কিরে তোরা কই?

- দোস্ত আজ দেখা হচ্ছে না । তুই বাসায় যেয়ে ঘুমা । খুব টায়ার্ড । কাল দেখা করব আমরা । টাটা ।

হুট করে কল রেখে দিল । আমি কিছুই বুঝলাম না । অগ্যতা বাড়ির পথে হাটা ধরলাম ।

***
রাত সাড়ে বারটা । বাসায় পৌছালাম । কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে গেল । আমাকে ঘরের ভিতর টান দিয়ে ঢুকিয়ে এতোগুলা বেলুন ফুটিয়ে পাঁচ বন্ধুর সমন্বিত চিত্‍কার 'হ্যাপিইই বার্থডে দোস্ত ।'

এই যাহ আজকে আমার বার্থডে ! আমিতো ভুলেই গেছিলাম । এই শালারা আমারে এভাবে সারপ্রাইজ দিল । ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমি তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে কিলঘুষি দিতে লাগলাম ।

নিহি এসে হাসতে হাসতে বলে, 'হয়েছে থামো থামো । ছোট বাচ্চাদের মতো কি করছ? টেবিলে কেক রেডি করেছি । কাটতে হবে ।"

কেকের সামনে দাঁড়িয়ে আছি সবাই। কেকের গায়ে লিখা HAPPY BIRTHDAY TO TONOY..

নিহি বললো,
- তনয়, বের করো ।

- কি ?

- কি আবার ? চাকু আনার কথা ছিল না ? বললাম না কাটাকুটি করব ।

- শিট । একদম ভুলে গেছি ।

আমার পাশে দাড়িয়ে থাকা রিশান বলল,

- আরে ভাবি, চাকু লাগে নাকি? স্কুল কলেজ থাকতে আমরা কিভাবে কেক কাটতাম জানেন?

- কিভাবে?

- এই যে এভাবে. . .

কথাটুকু বলেই হাসান একমুঠো কেক নিয়ে আমার মুখে মাখিয়ে দিল । বাকিরা থেমে থাকে নাকি? ওরাও আমার মুখে কেক ঢেলে দিয়ে দৌড়ে পালালো । আমিও ওদের পিছনে ছুট লাগালাম ।

বন্ধুত্বের পাগলামি, হাসি ঠাট্টা, শয়তানি, ছেলেমানুষী কখনো হারিয়ে যাই না । বন্ধু বন্ধুই ।

লেখক: তনয় আহমেদ ।
বি:দ্র:  সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/বিএসএস 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে