সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৪:১৩:২২

প্রতীক্ষার প্রহর

প্রতীক্ষার প্রহর

পাঠকই লেখক ডেস্ক : কোনো একদিন গভীর রাত, চির চেনা সেই জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি, সামনের রাস্তাটা দিয়ে অনেক্ষন পর পর দু একজন হেটে যাচ্ছে অথচ বোঝার উপায় নেই যে দিনের বেলায় এই রাস্তাটা কতটা ব্যস্ত থাকে। মাথার কাছেই আম গাছের পাতা গুলোর ফাঁকে ফাঁকে রুটির মত দেখতে চাঁদটা উকি মারছে কিন্তু আমাদের শহর এতটা নিষ্ঠুর যে এখানে শুধু তুলনা হয় ইটা কাঠের। পূর্নিমা রাতের জোছনা আমাদের জন্য নয়।

হঠাৎ সোহানা বলে উঠল,
--হেলো… চুপ করে আছো যে। (সোহানার অস্তিত্বটা মনে পরে গেলো।)
--এমনি…ভাবছিলাম।
--কি ভাবছিলে ?
--তেমন কিছু না, আমাদের আসলে ভাবার অবকাশ বেশি, করার কম।
--কি জানি তোমার এত ঘুরানো পেচানো কথা বুঝি না।
--এ আর এমন কঠিন কি… তুমিও বুঝবে শুধু অগ্রহ্য করে না দিলে।
--আচ্ছা তোমার ছেলে ভালো লাগে না মেয়ে ভালো লাগে?
--ভালো লাগাটা কোন দিক থেকে?
--আমাদের বেবির কথা বলছি।

আমি একটু মুচকি হেসে বললাম,
--প্রথম সন্তান আমি মেয়ে চাই, আমার মেয়ে বেশি পছন্দ। কারনটা তোমার জানা আমরা তিনটা ভাই আমাদের কোন বোন নেই। তাই প্রথমেই একটা মেয়ে চাই, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা, তবে যা হবে সেটাতেই সন্তুষ্ট আমি।
--আরে তাই নাকি! আমিও তো। জানো আমার মেয়ে কত ভাল লাগে? আর হেলো মিস্টার তুমি চা্ও মানে? চাই তো আমি! আমাকে একটা মেয়ে উপহার দিবা।

গভীর রাতেও শব্দ করে হেসে উঠলাম, মা জানে আমি সোহানার সাথে অনেক রাত পযর্ন্ত কথা বলি। আমি রশিকতা করে বললাম।
--মেয়ে উপহার দিবো? তা সেটা কিভাবে? মানে কি কি উপায়ে দিতে পারি সেটা?
--উফ…তুমি না …
জানতাম এইটাই বলবে সে, কারন উফ শব্দটা তার বহুল প্রচলিত শব্দ, তারপর বললাম,
--কি আমি?
--না কিছুনা।
--পুরাটা বলো।
--না তোমাকে সুযোগ দিলেই উল্টা পাল্টা বলবা। তোমরা ছেলেরা এত খারাপ…
মুচকি হেসে বললাম,
--সুযোগটা যে আমি শুধু তোমার সাথেই নিতে চাই সোহানা, আর এই ইচ্ছার পরিবর্তন হবে না এই জীবনে।
--দেখো আমি খুবই সিরিয়াস। জানো আমার স্বপ্ন আমাদের একটা মেয়ে হবে। আমার মেয়ে খুব ভাল লাগে।
--আমারো একি ইচ্ছা।

তারপর কেটে গেল অনেকটা দিন। সেদিন থেকেই আমাদের কল্পনায় ছিল মেয়েটি। দুজনে মিলেই যত্ন নিতাম তার খুব। সে যত্নে অবহেলা হয়নি কোন দিন। তারপর কোন এক ডিসেম্বরে সোহানার বিয়ে হয়ে গেলো। সৎ মায়ের ঘরে কত দিনই বা অপেক্ষা করতে পারতো মেয়েটা আমার জন্য, বুঝি সেটা আর তাইতো কোন অভিযোগ নেই।

তবে সোহানার স্বপ্নটা বুকে লালন করে রেখেছি আজো। সোহানা চলে গেছে তবে মেয়েটাকে রেখে গেছে আমার কাছে। যাবার আগে মেয়েটার নাম রেখে গেছে, ও বলেছে জানো আমাদের মেয়েটার নাম কি হবে? ওর নাম হবে ‘সেওনা’, একটু চিন্তা করলেই মানেটা তুমি বুঝবে। জবাবে কিছু বলিনি সেদিন, আসলে চাইলেও পারতাম না বলতে।

কিন্তু ওর ইমেইলটা পেয়েছিলাম ৩ মাস পরে কোন এক মার্চে, জবের ব্যস্ততার কারনে ইমেইল চেক করতাম না। সেদিন অনেক রাতে অফিস থেকে ফিরে ইমেইল চেক করতেই ওর ইমেলটা চোখে পড়ল।

২৫ ডিসেম্বরে সেনড করেছিল। তাতে লিখা ছিল, আজ আমার এঙ্গেজমেন্ট, কাবিনও হয়ে যাবে। তুমি বলেছিলে আমি যেন আদর্শ গৃহিনী হয়ে দেখাই। আমি তোমার কথা রাখব প্রতিক্ষা, নিজের যত্ন নিও ভালো থেকো।

তারপর থেকে ওর কোন খোঁজ নেই নি, ওর জীবনে আবারো অনুপ্রবেশ করার কোন দু:সাহস দেখাইনি কারন আমি ওর সুখ চাই, আর আমার ভালোবাসাকে বিতর্কিত করতে চাইনা কিছুতেই। তবে আমার মেয়েটা সব সময় আমার কল্পনাতে থাকতো আমার সাথে ঘুমাতো ঘুর ঘুর করে বেড়াত।

গত পরশু সোহানার ছোট ভাইয়ের প্রোফাইলে এক ছবি আপলোড করলো আর তাতে লিখা আজ আমি মামা হয়েছি, খুব ভালো লাগছে। দেখেই আমার বুকে ছেৎ করে উঠল। ঠিক বিশ্বাস করতে পারলাম না।
আমি তাকে ইনবক্স করলাম,
--বেবিটা কার ভাই?
--আমার শাহজালাল কাকার মেয়ের আপনি চিনবেন না।
--হুম…
কিন্তু আমার মনে এটা উসখুস করতেই লাগল না পেরে আবার জিজ্ঞেস করলাম--বেবিটা কি সোহানার?
--হুম ভাইয়া
--মিথ্যা বললা কেন?
--ভয়ে।
--কিসের ভয়?
--আপনি যদি কোন ক্ষতি করেন তাই।
--হাসালে ভাই।
--কেন?
--নিজের মেয়ের ক্ষতি কেউ করে না। ও আমার মেয়ে।
--ভাইয়া আপনি অনেক ভালো একটা মানুষ। আপুর তরফ থেকে আমি আপনার পা ধরে মাফ চাই তবু আপনি ওর উপর কোন রাগ রাখবেন না। অনেক কষ্টের পর আপু একটু সুখের মুখ দেখেছে। ও জন্য দোয়া করবেন।
--ও আমার জীবন আর নিজের জীবনের সাথে রাগ করে কেউ বাঁচতে পারে না। আমার সোহানা ভালো আছে সেটাই বড় কথা।
--ভাইয়া আগেও বলেছি আপনি অনেক ভালো একজন মানুষ ,অনেক বেশি ভালো, অনেক কষ্ট করেছেন আপুর জন্য । জীবনে অনেক ভালো কাওকে পাবেন।

কম্পিউটার মনিটরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম…কারন এই কথার কোন জবাব বা মন্তব্য কিছুই নেই আমার কাছে। আবার মেসেজ করল,
--আর ভাইয়া আরেকটা কথা
--হুম বলো
--আই লাভ ইউ।
--আই লাভ ইউ ট্টু, আর আমাকে ভুলে যেও না কখনো। শুনো আমার মেয়ের নাম রাখলাম সেওনা।
--নামটা সুন্দর না। এই নামের অর্থ কি?
--জানি না, কিন্তু আমি ওকে এই নামেই ডাকবো, আর তোমার আপুকে বলবা আমি ওর এই নাম দিয়েছি। তোমার আপুর পছন্দ হবে নামটা আর কারো না হলেও। আমাকে ভুলে যেও না। শুভ রাত্রি।
--আপনি ভুলে যাওয়ার মানুষ না। শুভ রাত্রি।

তারপর অনেকক্ষন যাবত চোখ বুজে সোহানাকে দেখার চেষ্টা করলাম, খুব দেখতে ইচ্ছা করল তাকে কল্পনার ক্যানভাসে ভেসে উঠল কোন এক হসপিটালে বেডে শুয়ে আছে, চুল গুলো এলো মেলো কিন্তু চোখের ভাষাটা আগের মতই আছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে একটু লজ্জা পাচ্ছে সে। আমি ভাবলাম আমার সোহানা এখন মা হয়ে গেছে, কত বড় হেয়ে গেছে সে। চোখ খুলে গেলো কারন কল্পনাটা আর এগিয়ে নিতে পারছিলাম না।

বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমার স্বপ্ন পূরন হয়েছে। আমার মেয়েটা বাস্তবে দুনিয়াতে এসেছে। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না আমার এমন কেন লাগছে, আমার তো খুশি হওয়ার কথা অনেক, কিন্তু কোথায় যেন একটা কষ্ট জমাট বেধে আছে। উল্লাস করার খুব ইচ্ছা করছে কিন্তু কোথায় যেন আটকে যাচ্ছি।

খুব চেষ্ট করিছিলাম এই পোষ্ট টা লিখার কিন্তু পারছিলাম না কিছুতেই, কিছুটা সময়ের দরকার ছিল আমার।
তার কিছুক্ষন পরে বাবু আমাকে চ্যাটএ নক করল,
--কিরে কই তুই।
আমি বললাম,--এইতো আছিরে, কই ছিলি এতক্ষন।
--সোহানার মেয়ে হইছে।
--তাই নাকি ? তার মানে সেওনা পৃথিবীতে আসছে ?
--হুম দেখবি ?
--হ্যা,
তারপর আমি তাকে ছবিটা দিলাম । ছবিটা দেখে বলল,
--দোস্ত কত কিউট হইছে। গায়ের রং ,চোখ, আর ঠোট পাইছে সোহানার মতই আর নাকটা হইছে তোর মত।
--তোর এই কথার কোন যৌক্তিকতা নাই।
--যা মনে হলো তাই বললাম। চল দেখে আসি।
--নারে, কি দিব মেয়ের হাতে, আমার যে সামর্থ্য নাই।
--আরে চল কিছুই দেয়া লাগবে না, বাবা মেয়েকে দেখতে যাবে এইটাই অনেক বড় ব্যপার।

মনে মনে ভাবলাম উপহারতো কম বেশি সবাই দিবে, কিন্তু আমার কি তেমনটা করলে হবে? আমার মেয়েটার জন্য চাই অমূল্য রতন।
--না, মেয়েকে যেদিন দেখতে যাবো সেদিন যাওয়ার মত যাবো। আরো সমস্যা আছে।
ভাবলাম, আমি চাইনা আমাকে দেখে আবার তার সব কিছু এলো মেলো করে ফেলুক, কারন আমাকে দেখে সে সামলাতে পারবে না নিজেকে, আমি জানি সেটা।
--ওকে তাহলে ঘুমিয়ে যা তুই।
--একটা পোটলা দরকার ছিলরে এই সময়টাতে, কই ছিলি সারা দিন।
--কালকে খাওয়ামু ,এখন ঘুমা।
--না আমার আসলে এখন দরকার ছিল, কিছুক্ষনের জন্য সব কিছু ভুলে যাওয়া দরকার।
--চিন্তা করিস না শুয়ে থাক ঘুম আসবে।

বিছানায় গেলাম কম্পিউটার বন্ধ করে, শুয়ে চোখ বুঝতেই ওর মুখটা ভেসে উঠল, একি কান্ড ও কেমন যেন হয়ে গেছে দেখতে, বুঝলাম আমার সোহানা এখন একজন মা…মুচকি এটা হাসি আসল…সত্যি সত্যি তার পরক্ষনেই তলিয়ে গেলাম অঘোর ঘুমে, ঘুম টা শুরু হওয়ার আগেই টের পেলাম সেওনা পেছন থেকে আমার গলা জড়িয়ে ধরেছে, হাসিটা প্রসস্ত হল আরো একটু।

তখনো ভাবছি, একদম মার মত ফুটফুটে হয়েছে মেয়েটা। মা, বাস্তবে রূপ নিলি তুই...ভালো থাকিস মা…যেখানেই থাকিস থাকবি এই অন্তরে… মানুষ থেকে মানুষ দূরে…অন্তর নয় অন্তর।

লেখক : Bilash Prio
বি:দ্র:  সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/বিএসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে