শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:১৩:৩৮

আকাশ মুক্ত রাখতে ঢাকার পথে রাশিয়ার ইয়াক-১৩০

আকাশ মুক্ত রাখতে ঢাকার পথে রাশিয়ার ইয়াক-১৩০

জাহিদ নেওয়াজ খান : বাংলার আকাশ মুক্ত রাখার দীর্ঘমেয়াদি রণসজ্জা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ হচ্ছে রাশিয়ার সর্বাধুনিক কমব্যাট ট্রেইনার এয়ারক্রাফট ইয়াকোলেভ ইয়াক-১৩০।  প্রথম দফায় ছয়টি স্টেট অব দ্যা আর্ট ইয়াক-১৩০ রোববার ভোরে ঢাকায় এসে পৌঁছাবে বলে সরকারি সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হাইটেক কোম্পানি রোসোবোরন এক্সপোর্টের (রোস্টেক) মহাপরিচালক সের্গেই শেমেজভ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে প্রথম দফায় বাংলাদেশকে ছয়টি ইয়াক-১৩০ হস্তান্তরের খবর নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে যে ১৬টি ইয়াক-১৩০ কিনছে এই ছয়টি তার প্রথম চালান বলে তিনি জানিয়েছেন।

এই ছয়টি কমব্যাট ট্রেইনার যা একইসঙ্গে প্রশিক্ষণ এবং শত্রুর স্থাপনায় আক্রমণের কাজে ব্যবহার করা যায় এখন আকাশপথে ঢাকার পথে আছে। বাকি ১০টি ইয়াকও আগামী বছর নাগাদ সরবরাহ পাবে বাংলাদেশ।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে বাংলাদেশ দ্বিতীয় রাষ্ট্র যে রাশিয়ার কাছ থেকে ইয়াক-১৩০ কিনেছে।  এর আগে এরকম ১৬টি এয়ারক্রাফট কিনেছে আলজেরিয়া।  আর সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশ হিসেবে প্রথম ইয়াক কিনেছে বেলারুশ।  প্রথম দফায় চারটির পর আগামী বছর তারা আরো চারটির সরবরাহ পাবে।

এর বাইরে লিবিয়া ইয়াক কিনতে চাইলেও গাদ্দাফীর পতনের পর নতুন সরকার ওই চুক্তি বাতিল করে।  আর চুক্তি হলেও পরিস্থিতির কারণে সিরিয়াকে আপাতত ইয়াক সরবরাহ করছে না রাশিয়া।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সশস্ত্র বাহিনীকে আরো আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে বিমান বাহিনীর জন্য প্রথমে ২৪টি ইয়াক কেনার পরিকল্পনা হয়েছিল।  পরে অর্থনৈতিক কারণে ১৬টি ইয়াক-১৩০ কেনার সিদ্ধান্ত হয়।

মূলত. প্রাথমিক এবং রণপ্রশিক্ষণে ব্যবহার করা হলেও শত্রুর স্থাপনায় আক্রমণেও ব্যবহার করা যায় ইয়াক-১৩০।  বিমান সেনাদের এই জঙ্গি বিমানটি পঞ্চম প্রজন্মের প্রশিক্ষণের সুবিধা দেয়।

ইয়াক-১৩০ প্রথমবারের মতো আকাশে উড়ে ১৯৯৬ সালে।  ২০০২ থেকে এটি রাশিয়ার বিমান সেনাদের জন্য প্রাথমিক এবং মূল প্রশিক্ষণ এয়ারক্রাফট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

এই বিমানটি অত্যন্ত নিরাপদ হিসেবেও বিবেচিত হয়।  হাজার হাজার উড্ডয়নে এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটেছে মাত্র তিনটি।  তিন ক্ষেত্রেই দুইজন করে ছয়জন পাইলট এয়ারক্রাফট থেকে বের হয়ে আসতে পারেন।  তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়।

ককপিটে দুইজন পাইলটকে বহন করা দ্বৈত ইঞ্জিনের ইয়াক-১৩০ অন-বোর্ড স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ আকাশে অন্য এয়ারক্রাফটে এবং আকাশ থেকে মাটিতে মিসাইল এবং বোমা হামলায় সক্ষম।

‘ইয়াক-১৩০’ এমন কৌশলগত সামরিক আকাশযান, যা বহুমুখি ব্যবহার উপযোগী।  ঘণ্টায় এর গতিবেগ এক হাজার কিলোমিটারের বেশি।  এছাড়া তিন হাজার কেজি বিস্ফোরক ও যুদ্ধাস্ত্র বহন করতে পারে একেকটি ইয়াক-১৩০।  একবার জ্বালানি নিয়ে একটি বিমান দুই হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

ইয়াক জঙ্গি বিমানগুলো কিনতে খরচ হচ্ছে ৮০০ মিলিয়ন ডলার।  তবে এর প্রায় পুরোটাই খুবই কম সুদে ঋণ হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া।  বাংলাদেশকে নগদ পরিশোধ করতে হচ্ছে মাত্র ১০ শতাংশ।

১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সময় শেখ হাসিনার সরকার রাশিয়ার কাছ থেকে ১২৪ মিলিয়ন ডলারে আটটি মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমান কিনেছিল।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর রণসজ্জায় এখন রাশিয়ার মিগ-২৯ ছাড়াও চায়নার চেংডু এফ-৭ যুদ্ধ বিমান আছে।  ট্রেইনার এয়ারক্রাফটের মধ্যে আছে চীনের তৈরি ন্যানচ্যাং পিটি-৬, (সাবেক) চেকোস্লাভাকিয়ার তৈরি এরো এল-৩৯, চীনের তৈরি হংডু কে-৮, চেক রিপাবলিকের তৈরি এ-৪১০ এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল-২০৬।

পরিবহন বিমানের মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি সি-১৩০ এবং ইউক্রেনের তৈরি অ্যানতোনোভ এন-৩০।  রাশিয়ার তৈরি অ্যাটাক হেলিকপ্টার মিল মি-১৭১ ছাড়াও হেলিকপ্টারের মধ্যে আছে রাশিয়ারই মিল মি-১৭ এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল-২১২।  এছাড়াও বিমান বাহিনীতে রাশিয়ার তৈরি মিল মি-১৭ এর উন্নত মানের ভিআইপি পরিবহন হেলিকপ্টারও আছে।  সূত্র : চ্যানেল আই
১৯ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে