রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:১৭:৪৬

ভালকেও চোর!

ভালকেও চোর!

স্পোর্টস ডেস্ক : টেলিভিশন সাংবাদিকতা দিয়ে ১৯৮৪ সালে ক্যারিয়ার শুরু জেরোম ভালকের। ১৯৯১ সালে ফরাসি চ্যানেল ক্যানাল প্লাসে ক্রীড়া বিভাগের ডেপুটি চিফের দায়িত্ব পান। ১৯৯৭ থেকে ২০০২ পর্যন্ত ছিলেন স্পোর্টস প্লাস চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ২০০৩ সালে মার্কেটিং ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন ফিফায়। চার বছরের মাথায় ২০০৭ সালে তাকে সেক্রেটারি পদে আসীন করেন সভাপতি সেপ ব্লাটার। গত আট বছর ধরে তিনি ছিলেন ব্লাটারের ডান হাত, ফিফায় দ্বিতীয় প্রধান কর্তা। ২০১৪ বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে তিনি ছিলেন গণমাধ্যমে বেশ আলোচিত মুখ।

ব্রাজিলের অবকাঠামো তদারক করার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি অনেক ‘ভালো’ ‘ভালো’ কথা বলেছেন। ব্রাজিলের স্টেডিয়াম সঠিক সময়ে নির্মিত হচ্ছিল না বলে তিনি কয়েকটি ভেনু বাতিল করার হুমকিও দেন। তখন দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়েন। কেউ কেউ তাকে অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করেন। পরে সুর নরম করে তিনি ব্রাজিলে যান। সেই ‘ভালো মানুষ’ ভালকেও চুরি করেন! ব্রাজিল বিশ্বকাপেই টিকিট বিক্রিতে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করেছে ফিফা।

২০১৪ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে টিকিট বিক্রিতে প্রভাব খাটিয়ে অর্থ আত্মসাত্ করেছেন— এমন অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া ভালকে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে তিনি অভিহিত করেছেন ‘বানোয়াট’ ও ‘ভয়ানক’ বলে। নিউইয়র্ক ভিত্তিক এক আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন।

আইনজীবী ব্যারি বার্কে বলেন, ‘‘বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রি নিয়ে বেনি অ্যালোন নামের ব্যক্তি ভালকেকে জড়িয়ে যেসব ‘বানোয়াট’ ও ‘ভয়ানক’ অভিযোগ তুলেছেন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।’’ অ্যালোনের অভিযোগ, ২০১৪ বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রি নিয়ে করা এক চুক্তির পর তিনি ভালকেকে ঘুষ দিয়েছেন।

আইনজীবী আরো বলেন, ‘জনাব অ্যালোনের কাছ থেকে ভালকে কখনই ঘুষ নেননি কিংবা নেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেননি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অ্যালোনের কোম্পানি, জেবি স্পোর্টস মার্কেটিংয়ের সঙ্গে চুক্তি হয় ফিফার এবং বিষয়টি ফিফার যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিতও ছিল।’

এরই মধ্যে ঘুষ ও দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে কলঙ্কিত হয়েছে ফিফা। গত ২৪ বছরে ফিফা কর্মকর্তারা ১৫ কোটি ডলার ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এছাড়া অভিযোগ উঠেছে, ২০১০ বিশ্বকাপের স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার কাছ থেকে ১ কোটি ডলার ঘুষ নিয়েছেন ফিফার সাবেক সভাপতি জ্যাক ওয়ার্নার, চাক ব্লেজারসহ বেশ কয়েকজন।

এ ঘুষের অর্থ ফিফার সেক্রেটারি ভালকের মাধ্যমেই লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে, যদিও তিনি এটা আগেই অস্বীকার করেছেন। ভালকে শুধু এটুকু বলেছে, ফিফার সব ই-মেইল তিনি দেখতে পেতেন এবং ঘুষের বিষয়টিও এভাবেই জেনেছেন, তবে এই অর্থ লেনদেনে তার প্রভাব খাটানোর কোনো এখতিয়ার ছিল না।

বিবিসি জানিয়েছে, বরখাস্ত হওয়ার কয়েকদিন আগে ফিফায় নিজের চূড়ান্ত হিসাব চেয়েছিলেন ভালকে, তবে তাতে তিনি সফল হননি। এখন তিনি ফিফার ইথিকস কমিটির জেরার মুখে পড়তে যাচ্ছেন। ভালকের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে বিবিসি, তারা উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে। ফিফায় চুক্তির এখনো তিন বছর বাকি আছে ভালকের।

এ তিন বছরের পারিশ্রমিক পুরোটা দাবি করছে ফরাসি নাগরিক। তবে তার দাবিকে ‘হাস্যকর’ বলেছেন ফিফার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তার পূর্বসূরি উরস লিনসিকে বিদায়বেলায় চূড়ান্ত হিসাব কষে ২৬ লাখ পাউন্ড দিয়েছিল ফিফা। তবে দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হওয়া ভালকে হয়তো সেই ‘সমাদর’ পাবেন না।-বিবিসি
২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে