রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:১৫:১৬

বিদায় হজের ভাষণ

বিদায় হজের ভাষণ

ইসলাম ডেস্ক : শুক্রবার, ৯ জিলহজ ১০ হিজরি সনে আরাফার দিন দুপুরের পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লক্ষাধিক সাহাবির সমাবেশে হজের সময় এই বিখ্যাত ভাষণ দেন।

হামদ ও সানার পর ভাষণে ইরশাদ করেন
আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।
আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন। তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন। আর তিনি একাই বাতিল শক্তি পরাভূত করেছেন।
হে আল্লাহর বান্দাগণ! আমি তোমাদের আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর বন্দেগির ওসিয়ত করছি এবং এর নির্দেশ দিচ্ছি।
হে লোকসকল! তোমরা আমার কথা শোন। এরপর এই স্থানে তোমাদের সাথে আর একত্রিত হতে পারব কি না জানি না।
হে লোকসকল! আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, হে মানব জাতি! তোমাদেরকে আমি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে পয়দা করেছি এবং তোমাদের সমাজ ও গোত্রে ভাগ করে দিয়েছি যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পারো।
তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর দরবারে অধিকতর সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া অবলম্বন করে, সব বিষয়ে আল্লাহর কথা অধিক খেয়াল রাখে। ইসলামে জাতি, শ্রেণীভেদ ও বর্ণবৈষম্য নেই। আরবের ওপর কোনো আজমের, আজমের ওপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তেমনি সাদার ওপর কালোর বা কালোর ওপর সাদার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। মর্যাদার ভিত্তি হলো কেবল তাকওয়া।
আল−াহর ঘরের হিফাজত, সংরক্ষণ ও হাজিদের পানি পান করানোর ব্যবস্থা আগের মতো এখনো বহাল থাকবে।
হে কুরাইশ সম্প্রদায়ের লোকগণ! তোমরা দুনিয়ার বোঝা নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে যেন আল্লাহর সামনে হাজির না হও। আমি আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমাদের কোনোই উপকার করতে পারব না।
শুনে রাখো, সকল জাহিলী বিষয় ও প্রথা আজ আমার পায়ের নিচে। জাহিলি যুগের রক্তের দাবিও রহিত করা হলো। সর্বপ্রথম আমি আমার কবিলার রক্তের দাবি অথাৎ রবী’আ ইবনুল হারিসের পুত্রের রক্তের দাবি রহিত ঘোষণা করছি। বনু সা’দ গোত্রে থাকাকালে হুযাইলিরা তাকে হত্যা করেছিল।
জাহিলি যুগের সুদও বাতিল করা হলো। সর্বপ্রথম আমি আমার কবিলার সুদের দাবি অর্থাৎ চাচা আব্বাসের সুদ মাফ করে দিলাম। সুতরাং সকল সুদই আজ বাতিল করা হলো।
হে লোকসকল! তোমাদের রক্ত, তোমাদের ইজ্জত, তোমাদের সম্পদ পরস্পরের জন্য চিরস্থায়ীভাবে সম্মানিত ঘোষণা করা হলো, যেমন আজকের এই দিন, আজকের এই মাস, তোমাদের এই শহর সকলের জন্য সম্মানিত (পবিত্র ও নিরাপদ)।
তোমরা শিগগিরই আল্লাহর দরবারে হাজির হবে। তিনি তোমাদের সকলকেই তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
শুনে রাখো, অপরাধীর দায়িত্ব কেবল তার ঘাড়েই বর্তায়। পিতা তার পুত্রের জন্য আর পুত্র তার পিতার অপরাধের জন্য দায়ী নয়।
হে লোকসকল! নারীদের সম্পর্কে আমি তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। তাদের প্রতি নির্মম ব্যবহার করার সময় আল্লাহর দণ্ড সম্পর্কে নির্ভয় হয়ো না। নিশ্চয়ই তাদের তোমরা আল্লাহর জামিনে গ্রহণ করেছ এবং তারই বাক্যের মাধ্যমে তাদের সাথে তোমাদের দাম্পত্য সম্পর্ক হয়েছে। জেনে রাখ, তাদের ওপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের ওপর তাদেরও অধিকার রয়েছে। সুতরাং তাদের কল্যাণ সাধনের বিষয়ে তোমরা আমার নসিহত গ্রহণ করো।
তোমরা তোমাদের অধীনস্থদের সম্পর্কে সতর্ক হও। নিজেরা যা খাবে, তাদেরও তা খাওয়াবে; নিজেরা যা পরবে, তাদেরও তা পরাবে।
হে লোকসকল! শুনে রাখো, মুসলিমরা পরস্পর ভাই। সাবধান! আমার পরে তোমরা একজন আরেকজনকে হত্যা করার জন্য কুফরি কাজে লিপ্ত হয়ো না।
হে লোকসকল! আল্লাহ প্রত্যেককেই তার যথাযথ অধিকার দিয়েছেন। সুতরাং উত্তরাধিকারীর জন্য কোনোরূপ ওসিয়ত কার্যকর হবে না।
সন্তান হলো বিবাহিত দম্পতির। ব্যভিচারীর সন্তানের অধিকার নেই। আর সকলের হিসাব-নিকাশ আল−াহর ওপরই ন্যস্ত।
যে ব্যক্তি নিজের পিতার স্থলে অপরকে পিতা বলে পরিচয় দেয়, নিজের মওলা বা অভিভাবককে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে মওলা বা অভিভাবক বলে পরিচয় দেয়, তার ওপর আল্লাহর লা’নত।
ঋণ অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। প্রত্যেক আমানত তার হকদারের কাছে অবশ্যই আদায় করে দিতে হবে।
কারো সম্পত্তি সে যদি সে¡চ্ছায় না দেয়, তবে তা অপর কারো জন্য হালাল নয়। সুতরাং তোমরা একজন অপরজনের ওপর জুলুম করবে না। এমনিভাবে কোনো স্ত্রীর জন্য তার স¡ামীর সম্পত্তির কোনো কিছু তার সম্মতি ছাড়া কাউকে দেয়া হালাল নয়।
যদি কোনো নাক-কান কাটা হাবশি দাসকেও তোমাদের আমির বানিয়ে দেয়া হয় তবে সে যত দিন আল−াহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করবে, তত দিন অবশ্যই তার কথা মানবে, তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবে।
শোনো, তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করবে। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যথারীতি আদায় করবে, রমজানের রোজা পালন করবে, সে¡চ্ছায় ও খুশি মনে তোমাদের সম্পদের জাকাত দেবে, তোমাদের রবের ঘর বায়তুল্লাহর হজ করবে আর আমিরের ইতা’আত করবে; তা হলে তোমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারবে।
হে লোকসকল! আমার পর আর কোনো নবী নেই, আর তোমাদের পর আর কোনো উম্মতও নেই।
আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যত দিন তোমরা এ দুটিকে আঁকড়ে থাকবে, তত দিন তোমরা গুমরাহ হবে না। সে দুটি হলো আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত।
তোমরা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকবে। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা দীনের ব্যাপারে এই বাড়াবাড়ির দরুণ ধ্বংস হয়েছে।
এই ভূমিতে আবার শয়তানের পূজা হবে, এ বিষয়ে শয়তান নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে তোমরা তার অনুসরণে লিপ্ত হয়ে পড়বে। এতে সে সন্তুষ্ট হবে। সুতরাং তোমাদের দীনের বিষয়ে তোমরা শয়তান থেকে সাবধান থেকো।
শোনো, তোমরা যারা উপস্থিত আছো, যারা উপস্থিত নেই তাদের কাছে এই পয়গাম পৌঁছে দিয়ো। অনেক সময় দেখা যায়, যার কাছে পৌঁছানো হয় সে পৌঁছানেওয়ালার তুলনায় অধিক সংরক্ষণকারী হয়।
তোমাদেরকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। তখন তোমরা কী বলবে?
সমবেত সকলে সমস¡রে উত্তর দিলো : আমরা সাক্ষ্য দেবো, আপনি নিশ্চয় আপনার ওপর অর্পিত আমানত আদায় করেছেন, রিসালতের দায়িত্ব যথাযথ আনজাম দিয়েছেন এবং সবাইকে নসিহত করেছেন।
[রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশের দিকে পবিত্র শাহাদাত আঙুল তুলে আবার নিচে মানুষের দিকে নামালেন]
হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো। হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো।

১৩ জুলাই, ২০১৪/এমটিনিউজ২৪/ইমো/আইএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে