রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:৪৩:৩৭

বিন্দু বিন্দু জল

বিন্দু বিন্দু জল

পাঠকই লেখক: কালো মেয়েদের ঢং করা মানায় না। নীলা কথাটা জানে। তাই সে কখনও ঢং করে না। সে ঢং করে কাউকে কখনও জান বলে ডাকেনি। গভীর রাতে ফোনে কোনো অজানা-অচেনা ছেলের সাথে অর্থহীন গল্পে মেতে উঠেনি।

নীলা কালো এটা সে ভালো করেই জানে। কিন্তু তার মুখের ওপর কেউ কালো বললে, তার ভীষণ মন খারাপ হয়। মাঝ রাতে তাই সে পরখ করে দ্যাখে তার চোখের জলগুলো কালো কিনা। কিন্তু তার চোখের জল অন্ধকারেও সাদা মুক্তোর মতো ঝকঝক করে।

তার খুব ইচ্ছা একদিন গভীর রাতে শো শো শব্দের বাতাস এসে তার ঝকঝক চোখের জল হাওয়ায় উড়িয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পরও সেই শো শো শব্দের বাতাস আসে না, তার দুঃখ-কষ্ট উড়িয়ে নিয়ে যায় না।

ছোট বেলায় নীলা একবার প্রেমে পড়েছিল। ছেলেটা সবুজ রঙের শার্ট পরে তার সামনে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে ছিল। ছেলেটির গায়ের রঙ ছিল ধবধবে সাদা। কালো মেয়ের ধবধবে ছেলেদের প্রেমে পড়াটা অন্যদের কাছে ভীষণ রকম বেমানান।

তাই সে ছেলেটাকে ভালোবাসার কথা মুখ ফুটে বলতে পারেনি লজ্জায়। কারণ একটা কুৎসিত ছেলের পাশে একজন সুন্দরী নারী যতোটুকু বেমানান, একজন সুন্দর ছেলের পাশে কুৎসিত মেয়ে তারচেয়েও বেশি বেমানান।

তবুও একটা ছেলে তাকে চিঠি লিখতো। প্রতি বুধবার বিকেলে চিঠিটা পাওয়ার পর সে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তো। চিঠিটা পড়ার পর বালিশের নিচে চিঠিটা লুকিয়ে রাখতো।

তারপর সেই বালিশের ওপর মাথা রেখে ঘুমালে রাজ্যের সুন্দর সব স্বপ্ন তার মস্তিষ্কে ভীড় জমাতো। সেই রাজ্যে কেউ কালো কিংবা সাদা নয়। সবাই ভালোবাসতে জানে সেখানে। কেউ শরীর পাওয়ার পর ভালোবাসা নিয়ে পালিয়ে যায়না।

এখন আর সেইসব চিঠি আসে না। তার ধারণা, ছেলেটা জেনে গেছে সে কালো। তাই ছেলেটার চিঠি লেখা বন্ধ।

২.

কালো মেয়েদের বিয়ের বয়স হলে সবচেয়ে চিন্তায় পড়ে যায় মেয়েটির বাবা। আর মেয়েটির মায়ের মেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে। নীলার বাবা -মা ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের কালো মেয়েকে আজ ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে। তাই তারা তাদের কালো মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত।

দামি কোনো কসমেটিকস আর পাউডার দিয়েও তারা তাদের মেয়েকে সাদা বানাতে পারছেনা। মানুষ কোনো একদিন একটা যন্ত্র বানাবে। সেই যন্ত্র কালো মানুষ সাদা করে দিতে পারবে। আর কিছু বোকা রঙ লোভী মানুষ সাদা হবার লোভে সেই যন্ত্রের মালিকের কাছে তার শরীর বিক্রি করতেও পিছপা হবে না।

নীলা নতজানু হয়ে বসে আছে। একজন সাদা ধবধবে ছেলের সামনে বসে থাকতে তার লজ্জা করছে। সে একজন মেয়ে তাই তার ভালোলাগার দামটা হয়তো অনেক কম। না চাইলেও তাকে বসে থাকতে হবেই।

- আপনি কি নার্ভাস?

- না তো। আমি এই পরিস্থিতির সাথে অভ্যস্ত। এর আগেও তিনবার আমাকে বরপক্ষ এসে দেখে গেছে।

- ও আচ্ছা। তারপর?

- তারপর তারা আর কিছু জানায়নি।

- ও আচ্ছা।

- আমি জানি আপনি আর আসবেন না। শুধু শুধু সময় নষ্ট করছেন।

নীলার চোখে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে। সে আয়নার সামনে বসে আছে। আয়নায় একজন নারীকে দেখতে পাচ্ছে নীলা। সেই নারী অসম্ভব সুন্দরী। এই অসম্ভব সুন্দরী নারী হয়তো তার ভেতর বাস করে। কারণ আয়না কখনও ভুল দেখায় না। ভুল দ্যাখে মানুষ।

লেখক: অনিরুদ্ধ অপূর্ব ।

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে