রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:৫৩:২৯

ভালোবাসতে ভালো মন লাগে

ভালোবাসতে ভালো মন লাগে

পাঠকই লেখক ডেস্ক: জাহিনের স্বভাব চরিত্র ইদানীং খুবই খারাপ হয়ে গেছে। চোখ নিয়ন্ত্রণ করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। মেয়ে দেখলেই তাকিয়ে থাকে। এখনও তাকিয়ে আছে, সামনে মহিলা সিটে বসা মেয়েটার দিকে। গোলাপি রঙের কামিজ আর জিন্স পরা মেয়েটা।

বার বার তাকাচ্ছে জাহিন। একটু পরপর চোখাচুখি হচ্ছে। মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। তবে জাহিনের ভালোই লাগছে। জাহিন একটা মেয়ের দিকে তাকাচ্ছে, এটা ঐ মেয়ের জন্য সৌভাগ্য।

জাহিনের মতে, ছেলেরা মেয়েদের দিকে তাকালে, মেয়েদের ভালোই লাগে। একটা কুৎসিত মেয়ের দিকে, ছেলেরা তাকায় না। ফ্যাল ফ্যাল করে শরীর দেখে না। একটা মেয়ে সুন্দরী হলেই তার দিকে তাকায়। সামনে দিয়ে তাকায়। পিছন থেকে তাকায়। জাহিনও তাকায়।

আর জাহিন দেখতে সুপুরুষ। জাহিন কোনো মেয়ের দিকে তাকাক, এটা যে কোনো মেয়েই চাইবে। জাহিন মনে মনে চাচ্ছে, মেয়েটার পাশে যদি বসতে পারতো। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাই ভাবছে। ঢাকার বাসগুলোতে মেয়েদের বসার সুব্যবস্থা থাকলেও, ছেলেদের জন্য কোনো সুবিধা নেই।

সুন্দরী মেয়েগুলো সব মহিলা সিটেই বসে। জাহিনের মতো ছেলেদের দূর থেকে দেখা ছাড়া আর কাছাকাছি যাবার মতো সৌভাগ্য হয় না। তবুও আজ বোধহয় সৌভাগ্য হলো। এক মহিলা নেমে গেছে। বাসে দাঁড়িয়ে থাকা আর কোনো মহিলা নেই।

জাহিন হুট করে মেয়েটার পাশে বসে পড়লো। বসেই নিজের দামি মোবাইলটা বের করে টিপাটিপি শুরু করলো। শুধুমাত্র মেয়েটাকে দেখাবার জন্য। কিন্তু মেয়েটা জাহিনের দিকে তাকাচ্ছে না। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। জাহিন একটু কাশি দিল, মেয়েটার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। মেয়েটা তাকাতেই বললো, আপনার কাছে পানি হবে?

মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, আমাকে বললেন?

- হ্যাঁ। খুব পানির পিপাসা পেয়েছে।
- আছে।

মেয়েটা ব্যাগ থেকে একটা বোতল বের করে দিল। ছেলেদের কাছে পানির বোতল থাকে না। থাকলেও তা, ছাল তোলা সেভেন আপ অথবা মাউন্টেন ডিউ এর বোতল। আর মেয়েদের কাছে থাকে আলাদা করে কেনা সুন্দর পানির বোতল। এই মেয়ের কাছেও তেমনটা। মেয়েটার মতোই সুন্দর। বোতলের গায়ে ফুল আঁকা। জাহিন পানির বোতল হাতে নিয়ে, পানি খাবার জন্য বোতল ধরে টানাটানি করছে। তবে কিভাবে খুলতে হয় বুঝতে পারছে না। মেয়েটা একটু বিরক্তি মুখে ফুটিয়ে বললো, আমাকে দিন। খুলে দিচ্ছি।

জাহিনের থেকে বোতল নিয়ে, মুখা খুলে আবার দিল। জাহিন পানি খেল। মুখ লাগিয়ে না। মেয়েটা নিশ্চয় মুখ লাগিয়ে পানি খায় বোতলটায়। এখন জাহিনও যদি মুখ লাগিয়ে খায়, মেয়েটা রাগ করবে। বাসায় নিয়ে বোতল সাবান দিয়ে ধুয়ে, তারপর এই বোতলে পানি খাবে। নয়তো জানালা দিয়ে ফেলে দিবে বোতল। এর চেয়ে একটু ভদ্রতা দেখিয়ে মুখ না লাগিয়ে খাওয়াই ভালো। জাহিন পানি খেয়ে বললো, আসলে ঝাল মুড়ি খেলাম তো। হাতে তেল লেগেছিল। তাই মুখা খুলতে সমস্যা হচ্ছিল।

- আচ্ছা ব্যাপার না।

- আপনাকে ধন্যবাদ। পানিটা অনেক ভালো লাগলো।

- ইটস ওকে। আর পানির স্বাদ একই রকম থাকে।

- আরে আপনি তো তাহলে জানেনই না। পানি তো অনেক প্রকার। কিছু পানি নোনা, সমুদ্রের পানি। কিছু পানি ভালো। এই ধরনের আমরা যেগুলো খাই। কিছু পানি কালো, নর্দমার পানি। কিছু পানির স্বাদ আমরা জানিনা। তবে বইয়ে পড়ে জেনেছি, সেই পানির স্বাদ কখনও অম্লীয়, কখনও ক্ষারীও।

- ওহ আমি জানি। প্লিজ চুপ করেন একটু।

মেয়েটা মুখের উপর চুপ করতে বললো, এভাবে অপমান। তবে জাহিন অপমান গায়ে লাগায়নি। একটু চুপ করে থেকে বললো, আপনার নাম?

- ঊর্মি।

- বাহ সুন্দর নাম। আমি জাহিন। কোথায় যাচ্ছেন?

- ধানমন্ডি ২৭ এ।

- বাহ, আমিও তো ওখানেই নামবো।

- ও আচ্ছা।

জাহিন যদিও ফার্মগেট নামবে। ধানমণ্ডির কথা মিথ্যা বললো। মেয়েটার পাশ থেকে উঠতে ইচ্ছা করছে না। ভালোই লাগছে। বাসের ধাক্কায় একটু পর পর শরীরের সাথে শরীরের ছোঁয়া লাগছে। সুন্দরী মেয়ের ছোঁয়া। অন্যরকম ভালোলাগা।

মনে মনে গুছিয়ে নিচ্ছে, আর কি কি বলবে জাহিন। মেয়েটা কিছু বলছে না। সেধে সেধে আর কতক্ষণ কথা বলা যায়? জাহিন আড় চোখে বার বার ঊর্মিকে দেখছে। আর একটু একটু পর নানা কথা বলছে। ঊর্মি বিরক্তি নিয়েও উত্তর দিচ্ছে। ধানমন্ডি চলে আসলো। ঊর্মি নামবে, সাথে জাহিনও। ঊর্মি নেমে সোজা হাঁটতে লাগলো। পিছন ফিরেও তাকালো না। জাহিন একটু দূর পর্যন্ত পিছনে গিয়ে হারিয়ে ফেললো।

যাক মেয়েটা দেখতে শুনতে ভালোই। ভালোই সময় কাটলো। ধানমন্ডি লেকের পাড় দিয়ে হাঁটতে লাগলো জাহিন। হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো। জেনি কল করেছে। জেনি মেয়েটা জাহিনের গার্লফ্রেন্ড। অতি রূপসী বলতে যা বুঝায় তাই। সকাল থেকে একবারও কথা হয়নি। তাই কল করলো। আজ আবার ভার্সিটি থেকে স্টাডি ট্যুরে যাবে জেনি। জাহিন কয়েকবার না করলো। তবে জেনি যেতে চায়। একটু হালকা ঝগড়া ঝাটির পর জাহিন রাজি হলো। জেনির কল ধরে বললো, কি খবর?

- এইতো ভালো। তোমার?

- হ্যাঁ, আমারও ভালো। কই আছো এখন?

- এইতো বাসে চড়লাম।

- ছেলে মেয়ে কি এক বাসে?

- হ্যাঁ, কয়েকটা ছেলে মেয়ে। আলাদা বাস নিবে নাকি?

- ভালো তো। বার বার বলছি, যেতে হবে না। তারপরও তোমার ওই ছেলেদের সাথে লাফালাফি করতে যেতে হবে?

- লাফালাফি মানে? ফ্রেন্ডরা আমরা মজা করবো। আর আমি ছেলেদের সাথে লাফালাফি করবো এটা কে বললো তোমাকে? আমার বান্ধবী নেই বুঝি?

- হ্যাঁ, বান্ধবী আছে। বন্ধুও তো আছে। আর ভার্সিটিতে ছেলে মেয়েরা কি করে আমি জানি।

- কি করে? তুমিও করো নাকি?

- আমি না করি। তোমাদের ক্লাসের ছেলেরা কেমন আমার জানা আছে।

- ছেলেরা যেমন হোক। আমি তো খারাপ কিছু করতে যাচ্ছি না। আমি ছেলেদের সাথে কথা বলি না।

- স্টাডি ট্যুরে ছেলে মেয়েরা ফাজলামি শয়তানি করেই। কথা না হলেও এইদিন করে।

- আমি করবো না।

- কতো কি করবা না আমি জানি। বারবার মানা করলাম যেতে।

- আজব তো। এমন করছো কেন?

- কেমন করবো? হ্যাঁ কেমন করবো? তোমাকে না করছি না ছেলেদের সাথে যেতে। ছেলেদের সাথে লাফালাফি করবা খুব ভালো লাগবে, তাই না? গায়ের সাথে গা লাগবে...

- ওহ অসহ্য।

জেনি কেটে দিল। জাহিন কল দিতেই নাম্বার বন্ধ। রাগ হচ্ছে খুব। জেনি অন্য কোনো ছেলের আশেপাশে থাকুক, একদম সহ্য হয় না জাহিনের। জেনি মেয়েটা দেখতে অনেক বেশিই সুন্দর। আশেপাশের ছেলেরা, জেনির দিকে তাকাবেই। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাবে। জাহিনের এটা ভালো লাগে না।

জাহিনের সাথে যখন জেনি হাঁটে, ছেলেরা তাকিয়ে থাকে জেনির দিকে। তা দেখে জ্বলে যায় জাহিনের ভিতরে। সহ্য হবার কথা না। আর জেনি কিনা, ঘুরে ফিরে ছেলেদের আশেপাশে থাকবে? কথা না বলুক ছেলেদের সাথে। তবুও তো ছেলেরা তাকিয়ে থাকে। এটা মানা যায় না। সহ্য করা যায় না। কোনো প্রেমিকই সহ্য করবে না।

জাহিনের রাগে শরীর কাঁপছে। জেনির নাম্বার ডায়াল করছে, আর চোখের সামনে ভাসছে, জেনি লাফাচ্ছে। বাসের ভিতর, বান্ধবীদের সাথে। আর ছেলেরা হা করে তাকিয়ে জেনিকে দেখছে। একটু পর পর ছেলেগুলো জেনির আশেপাশে আসছে। কথা বলতে চাচ্ছে। বাসের ব্রেকের অজুহাতে, জেনির গায়ে ঢলে পড়ছে। জাহিন আর ভাবতে পারছে না। বুকের বাম পাশে কষ্ট হচ্ছে। রাগে শরীর ঘামছে, আবার ঠাণ্ডাও হয়ে আছে শরীর। সামনে দিয়ে, অনেক জোড়া জোড়া ছেলেমেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। মেয়েগুলো সুন্দরী। তবে জাহিনের সেদিকে তাকাতে ইচ্ছা করছে না। ওইসব মেয়ের চেয়ে জেনি অনেক বেশি সুন্দরী।

তবে খানিক আগেই যা করলো জাহিন, ঠিক ভুলে গেছে। বাসে মেয়ের পাশে বসলো সুন্দরী মেয়ে দেখে। চোখ দিয়ে নানা কিছু দেখলো। তা অবশ্যই ভালো কিছু না। এখন হয়তো অন্য ছেলেরা সেসবই দেখছে জেনির। ভালো কিছু না। পানির বোতলে পানি খেল। জেনির কাছেও হয়তো এখন কেউ পানি চাচ্ছে। নানা হাসির কথা বলে মেয়েটার সাথে ভাব জমাতে চাইলো। এখন হয়তো অন্য কেউ একই কাজ জেনির সাথে করছে।

তবুও সান্ত্বনা, জেনি নিজেকে ঠিক রাখছে, জাহিনের পাশে বসা মেয়েটার মতো। আমরা নানা কিছু করি, অনেক কিছুই করি। যখন করছি, তা খারাপ লাগছে না। স্রোতে গা ভাসাচ্ছি। কিন্তু একটু গভীর থেকে চিন্তা করলেই, ভালো খারাপের বিচার হয়ে যায়।

স্রোতে গা ভাসাতে নেই। প্রতিটা কাজের আগে ভাবা উচিৎ, আসলেই ঠিক করছি তো? ভালোবাসার মানুষ থাকলে, ভাবা উচিৎ আমি যে কাজটা করলাম, তা ভালবাসার মানুষ করতো যদি? তবে কি হতো? কেমন লাগতো? তবেই সম্পর্কের শুদ্ধতা থাকে। সম্পর্কে সম্মান থাকে, ভালোবাসা থাকে। শুধু ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা হয় না। ভালোবাসতে ভালো মন লাগে। ভালো মানুষ হতে হয়। নয়তো সে সম্পর্ক কখনই সম্পর্ক না। ভালোবাসা না। যে ভালোবাসায় সম্মান নেই, সে ভালোবাসা হারিয়ে যাবেই। ভালো সবাই বাসতে পারে, সম্পর্কের শুদ্ধতা সবাই ধরে রাখতে পারে না। এর জন্য লাগে সুন্দর।

লেখক: শেষ রাতের আঁধার ।

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে