রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:৫৪:৫৭

447

447

পাঠকই লেখক ডেস্ক: ৭ বছর ধরে আমি নিলয়কে চিনি। আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু ছিল ও। ভাইয়ার সাথেই আমাদের বাসায় আসা যাওয়া করতো।

আমার বাবা-মাও খুব পছন্দ করতেন ওকে। যখন আমি ৮ম শ্রেণীতে পড়ি ঠিক তখনই সে আমাকে ভালোবাসি কথাটা বলে ফেলে।

কিন্তু তখনও যে আমি এর মর্ম বুঝিনা। কিন্তু ওর কেয়ারিং মনোভাব আর রোমান্টিক চাহুনি আমাকে বাধ্য করেছিল ওর প্রেমে পড়তে।

আরও আট দশটা মেয়ের মতোই স্বাভাবিক প্রেম চলছিল আমাদের। তবে আমরা খুব কমই বাইরে দেখা করতাম। কারণ আমি সব সময়ই খুব আতংকে থাকতাম, এইবুঝি কেউ দেখে ফেললো। এইবুঝি ধরা পড়ে গেলাম। আর বাইরে দেখা করার বিষয়ে নিলয় আমাকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখনও চাপ দিত না।

এভাবেই আমাদের ৮ টি বছর কেটে গেল। নিলয় এমএ পরিক্ষা দেবে আর আমি অনার্স ফাইনালে পড়ি । ঠিক এই সময় আমার আব্বা আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেলেন । দুঃখের সাগরে যখন ডুবে আছি তখন চারপাশ থেকে চাপ দিতে লাগলো বিয়ের জন্য। কারণ আমি মেয়ে। লোকে বলে, বাবা ছাড়া অবিবাহিতা মেয়ে ঘরে রাখাটা খুব খারাপ।

এতোদিনে নিলয়কে আমি বিয়ের কথা বললাম। সে আমায় বললো, সম্ভব না। তার নিজের পায়ের নিচেই নাকি মাটি নেই সে আমাকে কিভাবে দাড় করাবে।

আমি ওকে বললাম, নিলয় তুমি শুধু সবার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে একবার বলো, তুমি আমায় ভালোবাসো, আর তুমিই আমার দায়িত্ব নিতে চাও। বাকিটা আমি সামলাবো। কিন্তু সে নারাজ। এখন তার পক্ষে নাকি এসব করা সম্ভব না। তার পড়ালেখার ক্ষতি হবে।

ভাইয়াকে সব খুলে বললাম। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হলো । প্রচণ্ড কষ্টে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিলাম আমি । হাতের কাছে বিষ না পেয়ে খেয়ে নিলাম র‍্যাট কিলার। সেদিন আমাকে হয়তো আর কোনো ভাবেই বাঁচানো সম্ভব ছিল না। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আমাকে আরও কিছু খেলা দেখানোর জন্যই হয়তো বাঁচিয়ে রাখলেন।

এর প্রায় ৩ মাস পর অন্য এক জায়গায় আমার বিয়ে ঠিক হলো। বরপক্ষের নিকট সবাই সব কিছুই গোপন করে গেল। কিন্তু আমার মনে হতে লাগলো, আমি যদি এ ঘটনা আমার হবু স্বামীর কাছে গোপন রেখে দেই, তাহলে এটি হবে তার সাথে শ্রেফ প্রতারণা ।

বিয়ের আগের দিন কোনোভাবে আমার হবু স্বামীর সঙ্গে দেখা করলাম এবং খুলে বললাম সবকিছু। সবশুনে সে আমার পাশে থেকে উঠে চলে গেল, কিন্তু কিছুই বললো না। ভেবেছিলাম বিয়েটা হয়তো ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু তা হয়নি।

বিয়ে হলো আমাদের । প্রকৃত ভালোবাসা কি জিনিস তা এখন আমি তার কাছে থেকেই শিখছি। এখন প্রতিনিয়ত এই মানুষটাকে শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে করে। সব সময়ই মনে প্রশ্ন জাগে, মানুষ কিভাবে এতো ভালো হয়?

খুব অন্তরঙ্গ মুহুর্তে তাকে জিজ্ঞেস করি, 'কোনোদিন তো কোনো পুণ্য করিনি, তাহলে আমার মতো মেয়ে তোমার মতো স্বামী কেন পাবে?'

সে মুচকি হেসে বলে, 'তাহলে হয়তো আমি কোনো পুণ্য করেছি তার ফল হিসেবে তোমার মতো সঙ্গী পেয়েছি !'

লেখিকা: অধরা ইয়াসমিন ।

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে