রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:৫৮:১৯

অন্যরকম ভালোবাসার একটি পরিবার

অন্যরকম ভালোবাসার একটি পরিবার

পাঠকই লেখক ডেস্ক:  - মা, দশটা টাকা দাও ।

- টাকা তো নেই!

- ধ্যাত! কতোদিন হলো একটা টাকাও হাতে দাওনা! আমার কি হাত খরচ লাগে না?

- কথা না বাড়িয়ে কলেজ যাও!

মায়ের কথা শুনে রাগে ফেটে যাচ্ছে রিফাত! মাসখানেক হলো এমনটা হচ্ছে। এর আগে প্রতিদিনই কলেজ যাবার আগে ত্রিশ-চল্লিশ টাকা করে পেত। কিন্তু এখন খালি হাতেই বাসা থেকে বের হতে হয় ওকে। গত কয়েক মাসে বাসার পরিবর্তনটা চোখ এড়ায়নি ওর।

বিকেলে বাসায় এসেই চিৎকারের আওয়াজ পেলো ও। বাবা আর মায়ের গলার আওয়াজ! কিছু একটা নিয়ে দুজনেই তর্ক করছে।

- বাসা ভাড়া, স্কুল কলেজ, কোচিংয়ের বেতন, সংসারের খরচ, পাওনাদারদের টাকা এই সবকিছু আমার পক্ষে আর একা সামলানো সম্ভব নয়! পাঁচজন মানুষের খরচ অথচ আয় তো করি একজনই!

- তাই বলে কি ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ দিবে না? চার মাস ধরে রিফাতের কোচিংয়ের বেতন বাকি। আজও কোচিং থেকে ফোন এসেছে! আর মেয়েটার স্কুলেও তিন মাস ধরে বেতন দেয়া হয় না । প্রতি মাসে জরিমানা তো আর কম নয়!

- তাহলে আর কি পড়ালেখা বন্ধ করে দাও! আমি এতো খরচ চালাতে পারবো না। পাওনাদারদের ভয়ে যে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি সেটা কি তুমি দেখতে পাচ্ছো না?

আর কিছু শুনলো না রিফাত। নিজের ঘরে এসে দেখলো বোনটা কাঁদছে।

- কিরে কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন?

- বাবা চড় মেরেছে!

- কিন্তু কেন!

- রং পেনসিল চেয়েছিলাম তাই!

বোনটাকে কি বলে সান্ত্বনা দিবে ভেবে পায় না রিফাত! কয়েকদিন আগের কথা মনে পড়লো ওর। অনেক জোর করে মায়ের কাছ থেকে একশ টাকা নিয়েছিল ও।

এখন নিজেকে বড্ড বড় অপরাধী মনে হচ্ছে ওর! হয়তোবা মা কোন জরুরি কাজের জন্য টাকাটা রেখেছিল!
হঠাৎ পাশের ঘর থেকে কাঁচ ভাঙার শব্দ আসে! একটু পরই ঝড়ের বেগে বেরিয়ে যায় রিফাতের বাবা!

মায়ের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজও ভেসে আসছে! রিফাতের অনেক ইচ্ছা হচ্ছে মায়ের পাশে গিয়ে বসতে! কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে ও তা পারছে না।

- রিফাত ডিমটা খা!

মায়ের দিকে মুখ তুলে তাকালো রিফাত। বিকালের ঘটনার পর এখন অনেকটা সামলে ওঠেছে ওর মা।

- মা ডিম কোথায় পেয়েছো? দোকান থেকে বাকি এনেছো?

কোনো উত্তর দিলেন না মা। ছেলের এমন প্রশ্নের উত্তর কি হতে পারে তা তার জানা নেই।

এমন সময় ঘরে ঢুকলেন রিফাতের বাবা। বিধ্বস্ত আর পরাজিত একটা চেহারা। তবুও ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসি লেগে আছে। আর হাতে একটা কাগজের প্যাকেট। ঘরে এসেই মেয়েকে ডাকলেন তিনি। ভয়ে ভয়ে বাবার দিকে এগলো মেয়েটা।

- মা এটা তোমার জন্য!

- বাবা, আমার রং পেনসিল চাই না। তুমি শুধু বলো, তুমি আর রাগ করবে না!

- আচ্ছা মা!

আরও একবার অবাক হওয়ার পালা রিফাতের! কারণ বাবা নামের এই কঠিন মানুষটা যে কাঁদতে পারে তা তার জানা ছিল না!

লেখিকা: সুজানা রহমান

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে