রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:০২:৫৬

দেশটা আমার বড়ই অদ্ভুত!

দেশটা আমার বড়ই অদ্ভুত!

পাঠকই লেখক ডেস্ক: আজকে বুয়েটে গেসিলাম। বাসায় ফেরার জন্য পলাশী থেকে রিক্সা ঠিক করলাম। ভাড়া ৮০ টাকা চাইলো। এমনিতে ১০০ টাকা চায়। এই রিক্সাওয়ালাটা কম চাইলো। উঠে গেলাম রিক্সায়।

বাসার কাছাকাছি যখন আসলাম তখন রিক্সাওয়ালা আমাকে বলে, 'প্রতিদিন কি এই খান থেকে ক্লাসে যাওয়া আসা করেন?'

আমি বলি না। পাস করসি ৩ বছর হলো।

রিক্সাওয়ালা: 'ও আচ্ছা! এখন কি করেন?'

আমিঃ 'চাকরি করি।'

রিক্সাওয়ালাঃ 'ও আচ্ছা! আমার ছেলেও বুয়েটে পড়ে। এখন ফাইনাল ইয়ারে।'

(কি শুনলাম নিজের কানকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হইলো প্রথমে! আবার কনফার্ম করার জন্য জিজ্ঞাসা করলাম)

'আপনার ছেলে বুয়েটে পড়ে?!!!?'

রিক্সাওয়ালাঃ 'হা!'

আমিঃ (এখনও বিশ্বাস করতে পারতেসিনা। তাই একটু ডিটেইলস জানতে চাইলাম) 'কোন ডিপার্টমেন্ট?'

রিক্সাওয়ালাঃ 'সে সিভিলে পড়ে।'

আমিঃ (যেহেতু ফাইলান টার্মে বলসে তাই HSC টা জিজ্ঞাসা করলাম) 'ও HSC দিসে কবে?'
দেখলাম রিক্সাওয়ালা ঠিক ঠিক উত্তর দিলো!

এইচএসসি ইয়ার শুনে আমি নির্বাক! তার ছেলে যে আসলেই বুয়েটিয়ান! কিছুক্ষণ অবাক বিস্ময়ে চুপচাপ বসে থাকলাম আর একটু পর জিজ্ঞাসা করলাম!

'আপনার কয় ছেলে মেয়ে?'

'২ ছেলে ১ মেয়ে। মেয়েটা ইডেনে প্রানীবিজ্ঞানে সেকেন্ড ইয়ারে পরে। ছেলেটা ক্লাস ১০ এ বুয়েট স্কুলে পরে।' আলাপ করতে করতে বাসার সামনে চলে আসলাম।

রিক্সা থেকে নেমে বললাম, 'আপনি আগে কি করতেন?'

'পাঞ্জাবির কারখানা ছিল। টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।' তারপর বললো 'মানুষ জন বলে, তোমার ছেলে তো বুয়েটে পরে, তোমার রিক্সা চালানোর কি দরকার। কিন্তু আমারটা তো আমি বুঝি। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চালাইতে হয়। ছেলেটা টিউশনি করাইয়া নিজের টা নিজে চলে।'

আরো অনেকক্ষণ কথা বললাম আমরা। তিনি আমাকে বললেন, কিভাবে ছেলেকে পড়াইসে, ছেলে ক্লাস ৫ এ বৃত্তি পাইসে, এসএসসি তে A+, তারপর HSC তে গোল্ডেন A+ পাইসে। তেজগাও, কুয়েট, বুয়েটসহ আরও অনেক জায়গায় ভর্তি পরিক্ষা দিসে। সব জায়গায় চান্স পাইসে সে। যখন দেখলো ছেলে বুয়েটে টিকসে, তখন ছেলেকে চোখ বন্ধ করে বললো বুয়েটে ভর্তি হয়ে যেতে।

আমি বললাম আপনি আসেন আমার সাথে ভাত খাবেন। বাসায় আম্মু আব্বু নাই আমার এখন। আমিই  আপনারে ভাত রাইন্ধা খাওয়াবো। আপনি একজন গর্বিত পিতা! আপনি রিক্সা সাইড করে আমার বাসায় আসেন। তারপর উনি বললো। 'না বাবা থাক! তোমার আম্মু আব্বু যেহেতু নাই এখন লাগবে না।'

আমি বললাম 'আচ্ছা আপনি একটু দাঁড়ান। আমি আসতেছি ভেতর থেকে। পরে মানি বেগে যা ছিলো পুরোটাই দিয়ে দিলাম উনাকে। বললাম এইটা আপনি রাখেন। বেশি দিন না, আর মাত্র ৬ মাস! তারপর থেকে আপনার আর কষ্ট করা লাগবে না। আপনার ছেলে বুয়েটে পড়ে। সামনে আপনার সুদিন। (পাশে দাঁড়ানো আরেক যাত্রী আমার লাস্টের কথাগুলো শুনলো এবং উনার রিক্সা করে যেতে যেতে অবাক হয়ে কি কি যেন জিজ্ঞাসা করতে লাগলো)

দেশটা আমার বড়ই অদ্ভুত! গুণীজনরা না খেয়ে মরে, রিক্সা চালায়ে খেটে খায়, গরিব থেকে গরিবতর হয়। আর মূর্খরা দেশ চালায়, ধনী থেকে ধনীতর হতে থাকে!

লেখক: মইনুল পরাগ চৌধুরী ।

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে