রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৫৬:১৩

'তাকে দেয়া আমার সর্বশেষ শর্ত'

'তাকে দেয়া আমার সর্বশেষ শর্ত'

পাঠকই লেখক ডেস্ক : কখনও চিন্তা করি নাই আমাকেই এইভাবে লুকায়ে লুকায়ে নিজের নাম পরিচয় গোপন করে লিখতে হবে, মাত্র কয়েকমাস আগেও ফেসবুকে সারাদিন পরে থাকতাম বাদড়ামি, ফাইজলামী ছাড়া আর কোন কাজই থাকত না সারাদিন পেইজ চালানো, আড্ডা দেয়া, স্ট্যাটাস দেয়াই মূল কাজ। মেয়েদের বিরোধীতা করার জন্য নারীবিদ্ধেষী ট্যাগ দিয়েছিল ফ্রেন্ডরা, কিন্তু কে জানত হঠাৎ এমন হবে।

আজ থেকে ঠিক ৮ মাস ১৪ দিন আগে মে ১, ২০১৩ বিকেল ৫ ২৭ মিনিটে আমার একটা স্ট্যাটাসে হঠাৎ একটা মেয়ের কমেন্টস এমন না যে আমার স্ট্যাটাসে প্রথম কোন মেয়ে কমেন্টস করেছে তারপরও কি যেন হল, আমি ওই মেয়ের প্রোফাইল চেক করতে যাই। গিয়ে কি মনে করে যেন ওকে ম্যাসেজও পাঠাই, "আপনাকে কি ফ্রেন্ড লিস্টে এড করা যাবে যদি আপনার আপত্তি না থাকে" যেই আমি সারাজীবন অপরিচিত মানুষ থেকে দুরে থাকতাম, কোন মেয়ে ম্যাসেজ দিলে সেটাকে জীবনেও পড়তাম না সেই আমিই কিনা একটা কমেন্টস দেখেই তাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে গেলাম, যাই হোক চরম অপমানের সহিত ফিরিয়ে দিল আমিও অপমানিত হয়ে চলে আসলাম ।

৭ দিন পরে, মে ৮, ২০১৩ হটাত করে তার ম্যাসেজ "দুঃখিত, আপনার ওইদিনের অনুরোধটা এইবার আমি করতে চাই"। মুহুর্তেই ভুলে গেলাম আগের সব কথা বাতাসের আগে তাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিলাম, তারপর একটু একটু করে কথা বললাম কয়েকদিনের মাঝেই বেশ পরিচিত হয়ে উঠলাম এইখানে একটা কথা, আমি সাধারনত মানুষের সাথে চ্যাট তেমন একটা করি না কিন্তু কিসের টানে যেন সারাদিন তার সাথে ফেসবুকে কথাই বলতাম। এর মাঝে আপনি থেকে তুমিতে গড়ালো সম্পর্ক ।

একদিন হঠাৎ করে আমাকে দাওয়াত দিল দুপুরে খাবার জন্য স্টার কাবাবে কিসের জন্য, হ্যা বলে দিছি মনে নাই। অফিসে থেকে কোন মতে পালিয়ে চলে গেলাম দেখা করতে যদিও তখনও আমি শিউর না কার সাথে দেখা করতেছি। সে কি যাই হোক দেখা করলাম আস্তে আস্তে কথা বলার পরিমান বাড়ল, তার ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতে একটু দেরি হলেই হাউকাউ লাগায়ে দিত। আমার স্ট্যাটাসে কোন মেয়ে কোন কমেন্টস করলে তার হিংসা লাগত পারলে সেই মেয়েকে তখনই ব্লক করে। প্রতিদিন সকালে তার কাজ হল আমাকে ঘুম থেকে তুলে দেয়া কারন আমি মোটেও ঘুম থেকে উঠতে পারি না। সকালে আমি কখন খেলাম, কখন ঘুমালাম সবই তার জানতে হবে, এমনকি কোন ড্রেস পড়ব, কি খাব, কোন ওষুধ খাব সবই সে ঠিক করে দিত। তখনও আমরা কেউই কাউকে কিছু বলি নাই কেউই জানি না আমরা একজন আরেকজনকে ভালবাসি নাকি ।

কয়েকবার সাহস করে বলতে গিয়েও বলতে পারিনি। অবশেষে নভেম্বর ১৪, ২০১৩ সে সর্বপ্রথম আমাকে জিজ্ঞাসা করে আমি তাকে ভালবাসি নাকি, আমিও বোকার মত হ্যা বলে দেই , সেও আমাকে ভালবাসত। আমাদের পথে এত বাধা যে সিনেমা ছাড়া সম্ভব না অতিক্রম করা মোটামুটি সবগুলা কারনই অর্থনৈতিক, প্রথমত, তার ফ্যামেলী স্ট্যাটাস মতে আমি একটা রাস্তার ছেলে মাত্র দ্বিতীয়ত, ঢাকা শহরে মোটামুটি বনেদীভাবে চলার মত অবস্থা আমার নাই। তৃতীয়ত, একটা সেকেন্ড গ্রেড ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেলের সাথে বিয়ে দিবে না তার বাবা। এত সব কারন দেখে সে দমে যেতে চাইলেও আমি এগিয়ে যাবার পক্ষে ছিলাম।

যত কিছুই হোক আমি চাইছিলাম চেস্টার যাতে কোন ত্রুটি না থাকে আমার পক্ষ থেকে, আমি আমার দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা শুরু করলাম অনলাইনের অনেক রথি মহারথির সাথেই কাজ করেছিলাম বাস্তবে তারা অনেকেই আমার কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল। ভেবেছিলাম এতদিন তো বিনাপারিশ্রমিকে সব কাজই করেছি আজকে চাইলে নিশ্চয়ই কেউ না করবে না। কিন্তু বাস্তবতা একটু ভিন্ন সবাই আচ্ছা দেখছি দেখছি করে সময় পার করে দেয় কেউ কেউ আবার ম্যাসেজের উত্তর দেবার সময়ও পায় না অথচ, এই লোকগুলার জন্যই আমি আমার অফিসের কাজ বাদ দিয়ে রাতের পর রাত পরিশ্রম করে গেছি তাদের সাথে।

শুধু আমি চেস্টা করছি বললে ভুল হবে মেয়ের বাবাও মেয়ের বিয়ের জন্য আমার থেকে দ্বিগুন উত্সাহে চেস্টা করে যাচ্ছিল । দোটানায় পড়েছিলাম আমি কিন্তু তবুও নিজের সর্বোচ্চটা উজাড় করে দিয়ে চেস্টা করছিলাম, একটা ভাল চাকরি হলেই তার বাবা মাকে গিয়ে বলা সম্ভব । অবশেষে জানুয়ারি ১৩, ২০১৪ , সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে আমি জানতে পারি আমার সকল চেস্টার অবসান ঘটছে তার জন্য ছেলে পছন্দ করা হয়ে গিয়েছে, ছেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আমি চেয়েছিলাম তার বাবা মাকে সে সব খুলে বলুক কিন্তু সে তা পারবে না, কারন তার বাবা মায়ের অনেক আশা তার উপর সে আমার জন্য তাদের কষ্ট দিতে পারবে না । আজকে আমার হাতে আর কিছুই নেই, শুধু বসে বসে স্মৃতি আওড়ানো ছাড়া।

সেই প্রথম দিন যেইদিন গোলাপ নিয়ে ব্যাগে লুকিয়ে রেখেছিলাম, লজ্জার জন্য দিতে পারছিলাম না তারপর কোন মতে হাতে ধরিয়ে দিয়েই দৌড় দিয়েছিলাম, প্রথম দিন সেই হাত ধরা প্রথম রিকশায় ঘুরতে যাওয়া প্রথম ফোন করে ঘুম থেকে তুলে ভালবাসি বলা , না খাওয়ার জন্য ধমক দেয়া, জন্মদিনে এত্তগুলা গিফট দিয়ে আমাকে অবাক করে দেয়া। প্রথম যেই দিন আমরা মুভি দেখতে যাই সেইদিনের কথা conjuring দেখতে গিয়েছিলাম আমরা।

রাস্তায় উপর থেকে ইট পড়ে আমার মাথা ফেটে যায়, তবুও মুভি দেখতে যাই ভুতের ভয়ে হাত জড়িয়ে ধরা সে মূহুর্তগুলো, জানি সব বাবা মা ই তার ছেলে মেয়েদের অসম্ভব ভালবাসে অতিরিক্ত ভাল চাইতে গিয়ে কখন যে নিজের ছেলে মেয়েদের ইচ্ছাগুলোকে হত্যা করে নিজেরাও জানে না ছোটবেলায় বইয়ে পড়েছিলাম, "দুধ শিশুর শরীরের জন্য ভাল কিন্তু তা শিশুর হজমের ক্ষমতার সাথে মানানসই হতে হবে" আমাদের বাবা মায়ের আদর গুলাও হয়ত তেমনই যেখানে বাবা মা আমাদের জন্য সুখ কিনে শান্তি না আগামীকাল, জানুয়ারী ১৪, ২০১৪ ওর বিয়ে জানি না আমার এখন কি করা উচিত হাউমাউ করে কাদা উচিত নাকি নিজের ক্যারিয়ারের জন্য দৌড়ানো উচিত সিনেমার গল্পের শেষ সবসময় সুন্দর হয়, কিন্তু বাস্তবের গল্পগুলো এমন হয় কেন???

তাকে দেয়া আমার সর্বশেষ শর্ত, "যার সাথেই থাকো ভাল থাকো, নিজের স্বপ্ন গুলা পুরা করো" (জানি গল্পটা আর দশটা সাধারন গল্পের মতই কিন্তু গল্পটা আমার জন্য মোটেও সাধারন গল্প না এই ৮ মাস ১৩ দিনে আমি আমার জীবনের সেরা সময়টা কাটিয়েছি, নিজেকে চিনেছি, বাস্তবতাকে দেখেছি, ভালবাসতে শিখেছি, কাদতে শিখেছি, হাসতে শিখেছি বলতে গেলে জীবনে নতুন ভাবে চিনেছি যেখানেই থাকুক ভাল থাকুক )

লেখক : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
৪ মে,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে