রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৫৮:০৫

একজন ডাক্তর বলছি

একজন ডাক্তর বলছি

পাঠকই লেখক ডেস্ক: আমি একজন আরএমপি ডাক্তার। নাম সংক্ষেপে সবাই মুহা বলে ডাকে। আমার কোনো সার্টিফিকেট নাই। আবার এইদিকে পড়াশুনাও এইট পাশ। কিন্তু এক আরএমপি ডাক্তারের সাথে থেকে অনেক কিছু শিখেছি। শিখেছি কিভাবে মানুষ ঠকাতে হয়। ঔষধ সম্মন্ধে একটু অজ্ঞ হলেই তাঁকে কিভাবে সাইজ করতে হয় সেটা ভালোভাবেই রপ্ত করেছি।


প্রথমে তাঁকে কিছু টেষ্ট করাতে হবে আমার সাথে ৬০%এ কণ্ট্রাক্ট করা অনুপম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। তাঁরা একটা রিপোর্ট অবশ্যই একটু এদিক-সেদিক করে দিবেই। আর সেটা আমাকে জানিয়েও দিবে। তারপর আমার ১০০০% লাভে ঔষধ বিক্রি। একটা সেফট্রিএক্সন বা সেফিক্সিম কোর্স চালাতে পারলে অনেক লাভ। সেফট্রিএক্সন কেনা পড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি ৩২৫টাকা, সেফিক্সিম কেনা ৪ থেকে ৫ টাকা বিক্রি ৩০ টাকা, অ্যাজিথ্রোমাইসিন ন্যাশনাল নামে এক কোম্পানীর ৬ পিস্ এর প্যাকেট কেনা পড়ে শুধুমাত্র ১৫ টাকায় অর্থ্যাৎ প্রতি পিস্ ট্যাবলেট মাত্র ২.৫০ টাকা বিক্রি ৩০ টাকা । শুধু লাভই লাভ। শুধু একটু টেকনিক খাটাতে হয়। রোগীর আর্থিক ও মানসিক অবস্থা বুঝে কাজ করতে হয়। আর শরীর দূর্বল মানেই স্যালাইন। ডাবল ভিটামিন ও দ্রুত চাঙ্গা হওয়ার ফাঁদে খুব সহজেই মাত্র ৮০ টাকার মত খরচ করে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা লাভ করা যায়। বিশেষকরে নিন্ম শেনীর খেটে খাওয়া মানুষ স্যালাইনের প্রতি এমনিতেই দুর্বল। তারা মনে করে স্যালাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই তাঁর শরীরে এনার্জি ফিরে পেতে পারে। কিন্তু এটা যে সাময়িক তা এই মূর্খ শ্রেণী বুঝেনা। আর তাঁদের এই অজ্ঞতার সুযোগ নেয় এই লোভী মানুষখেকো একশ্রেণীর কেমিষ্ট।


শুধু গ্রামঞ্চল নয় শহরের আনাচে কানাচে অলি গলিতে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা ফার্মেসীতে এধরনের বিষাত্মক কেমিষ্ট ছড়িয়ে পরেছে। যারা শুধু নিজেদের স্বার্থের কথাই চিন্তা করে, মানুষ মরল কি বাচঁলো তাতে তাদের কিছু যায় আসেনা। আর এই শ্রেণীর সাথে তাল মেলাতে আমাদের বিজ্ঞ সমাজও বসে নেই। এই বিশাল শ্রেণীর ভ- কেমিষ্ট সম্প্রদায়ের সেলস্ নিজের পকেটে আনতে গড়ে উঠেছে অনেক অনেক বড় বড় ফ্যাক্টরি যারা কম দামে লোকাল র’ম্যাটেরিয়ালস্ দিয়ে ঔষধ বানিয়ে বিশাল প্রফিট মার্জিনে বাকিতে তাদের দোকানে মাল তুলে দিচ্ছে। ফলে তাঁরাও বাধ্য হচ্ছে এইসব লো কোয়ালিটির ঔষধ চালাতে। তার ওপর হার্বাল কোম্পানী নামক হায়েনারাতো আছেই। বলবৃদ্ধিকারক, যৌনশক্তি বৃদ্ধিকারক, মহিলাদের সাদাস্রাবরোধ, মোটাতাজা হওয়া, স্লিম হওয়া, মেছতা, ব্রণ, মুখের কালো দাগ ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের আকর্ষণীয় স্বাস্থ্যবান পেশীসমৃদ্ধ ছবিসহ বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ও সিরাপ তারা বাজারজাত করছে ঔ শ্রেণীর কেমিষ্টকে বিশাল অঙ্কের লাভ দিয়ে। সেই লাভ %এ প্রকাশ করলে ২০০০,৩০০০% ছাড়িয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ঔষধ কোম্পানীর সংখ্যা ২৪৭ তার মধ্যে প্রডাকশনে আছে ৯০ থেকে ১০০ টি কম্পানী, এর বাইরে ব্যঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা কোম্পানী রয়েছে যারা লোকাল লো-কোয়ালিটি এবং রিজেক্টেট র’ম্যাটেরিয়ালস কিংবা চায়না বা ইন্ডিয়া থেকে কম দামে রেডিমেট ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আমদানি করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হাতে চালানো মেশিনে প্যাক করে ঐ শ্রেণীর ক্যামিষ্টদের জন্য প্রোডাক্ট তৈরী করে। ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ টু জেড, আয়রন, যৌণউত্তেজক বিভিন্ন প্রকার ট্যাবলেট ছোট কন্টেইনার বা ড্রামে কিনে এনে তারা ঘরে বসেই প্যাক করে, এসব প্রোডাক্টের বিরুদ্ধে ঔষধ প্রশাসন এ্যাকশনে যেতে পারছেনা কারণ এধরনের প্রোডাক্ট হলো ফুড সাপ্লিমেন্ট যা তাদের এ্যাক্তিয়ারে পড়েনা, আবার বিএসটিআই ও সাপ্লিমেন্ট হওয়াতে তাদের এ্যাক্তিয়ারে নিচ্ছেনা। তাই এ ধরনের ফুড সাপ্লিমেন্টে বাজার সয়লাব। ক্যালসিয়াম বা টু জেড ভিটামিন একটি পট বানাতে লাগে একটি পট যার দাম ৬ থেকে ৭ টাকা, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ১৫ পিস্ দাম পড়ে ২২ টাকা, পটের উপরের লেভেলিংএ খরচ পরে ৫০ পয়সা এবং সবশেষে উপরে সুদৃশ্য প্লাস্টিক র‌্যাপিং দাম পরে ৫০ পয়সা সব মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে কমপ্লিট যার বিক্রয় মুল্য ২২৫ থেকে ২৫০ টাকা।


তবুও ঔষধ প্রশাসনের টনক নড়েনা। তাদের নেই পর্যাপ্ত লোকবল এমনকি ঔষধের মান নির্ণয়ের জন্য নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি। তাঁরা সেগুলোর দোহাই দিয়েই থেমে যাচ্ছে। আর ভূক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ। শুধু সাধারন মানুষ নয়, গোটা জাতির স্বাস্থ্যব্যবস্থা, ঔষধ প্রশাসন ও সরকার সবাই জিম্মি হয়ে পরেছে এই চক্রের কাছে। আর এই চক্রভুজ্য থেকে বের হওয়া আদৌ সম্ভব কিনা সেটা ভবিষ্যত প্রজন্মই বলে দিতে পারবে। কারণ এই বাংলাদেশের এই স্বাস্থ্যব্যবস্থা একদিনে তৈরী হয়নি, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।

লেখক : মুহাম্মদ মমিনুল হক
২৯ এপ্রিল, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/এমহক

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে