রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:০৩:১০

ভারতীয় রাজার রান্নায় মুগ্ধ ছিলেন সাদ্দাম হোসেন!

ভারতীয় রাজার রান্নায় মুগ্ধ ছিলেন সাদ্দাম হোসেন!

পাঠকই লেখক ডেস্ক : রাজার খেয়াল বলে কথা! রাজ-রাজাদের বিচিত্র খেয়াল তো থাকেই। তাই বলে, রাজমহলের রন্ধনশালায় স্বয়ং রাজা খুন্তি হাতে নিয়েছেন এমনটা শুনা যায় না।

ভোপালের সৈলানার রাজা বিক্রম সিং বাহাদুরের ক্ষেত্রেই এর ব্যতিক্রম ঘটে। রাজবাড়িতে তো খানসামা-বাবুর্চির অভাব নেই। দাস-দাসীও রয়েছেন। তবু, রাজা রাজমহলের হেঁশেলে যান শুনে, বিস্মিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, এতেই খুশি। শুধু তাই নয়, তাঁকে কেউ 'হিজ হাইনেস' না বলে, শেফ বিক্রম সিং বাহাদুর বললে, আহ্লাদে আটখানা হয়ে যান। অতিথিকে নিজে হাতে রেঁধেও খাওয়াতে ভালোবাসেন তিনি। শোনা যায়, সৈলানের রাজার রন্ধনগুণে সাদ্দাম হুসেন পর্যন্ত মুগ্ধ ছিলেন।

তবে, শুধু রাজা বিক্রম সিং বাহাদুরই নন, তাঁর ঠাকুরদা রাজা দিলীপ সিং, বাবা রাজা দিগ্বিজয় সিং সকলেই কিন্তু ছিলেন রন্ধন পটিয়সী।

রাজা বিক্রম সিংয়ের মুখেই শোনা এই গল্প। প্রচণ্ড খেতে ও খাওয়াতে ভালোবাসতেন তাঁর ঠাকুরদা রাজা দিলীপ সিং। সৈলানের রাজবাড়িতে শুধু চারখানা রন্ধনশালাই করা হয়েছিল তাঁর জন্য। তার মধ্যে একটা বরাদ্দ ছিল বিরিয়ানির জন্য। প্রচুর খানাসামাও ছিল রাজমহলে। এর মধ্যে এক খানসামার তৈরি বিশেষ একটি ডিশে 'পাগল' ছিলেন রাজা দিলীপ সিং। ওই ডিশ যেদিন হত, রাজামশাইয়ের সেদিন খুশির সীমা থাকত না।

সেই খানসামাই আচমকা একদিন মারা গেলেন। তার পর থেকেই মনমরা রাজা দিলীপ সিং। কারণ, আর কোনও খানসামাই সেই ডিশ রাঁধতে পারেনি। তাঁরা সেটি রাঁধতেও জানতেন না। আসলে, খানসামারা কোনও দিন চাইতেন না, তাঁদের রেসিপি অন্যের হাতে চলে যাক। তাই, শেখাতেনও না। মনক্ষুণ্ণ হয়ে রাজা বিক্রম সিংয়ের ঠাকুরদা বেরিয়ে পড়েন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রেসিপি জোগাড় করতে। যাতে রাজবাড়ির রান্নায় বৈচিত্র্য আনা যায়।

সেসময় হায়দরাবাদের নিজামের হেঁশলঘরেও হাতছানিও উপেক্ষা করতে পারেননি দিলীপ সিং। বিশেষ ধরনের একটি পোলাও শিখে আসেন। যার মধ্যে মটন, কোপ্তা সবই থাকে। তিনি নিজেও যেহেতু রাঁধতে পারতেন, ভোপালে ফিরে এসে সেই নিজামি পোলাওয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে আরও বৈচিত্র আনেন। দিলীপ সিংয়ের উত্তরসূরির মুখে শোনা গেল, এই পোলাওয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন দুনিয়ার মান্যিগণ্যিরা।

পাঁচ হাজারেরও বেশি রেসিপি জোগাড় করে, তার একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করে ফেলেন রাজা দিলীপ সিং। পরে সেটিই বই আকারে প্রকাশ করেন দিলীপ সিংয়ের ছেলে রাজা দিগ্বিজয় সিং। 'কুকিং ডিলাইটস অফ মহারাজ'। রান্নার বই হিসেবে খুবই জনপ্রিয় এই বইটি সাদ্দাম হুসেনের লাইব্রেরিতেও পাওয়া গিয়েছে।

রাজপরিবারের একশো বছরের পুরনো রেসিপিও রয়েছে এই বইটিতে। তবে, ভোপালের এই রাজবাড়ির রান্নার বৈশিষ্ট্য হল, কখনও কোনও রান্নায় টম্যাটো দেওয়া হয় না।

আর বর্তমান রাজা বিক্রম সিং বাহাদুর, রান্না করতে পারলে যতটা খুশি হন, আর কিছুতে নয়। কোথাও ফুড ফেস্টিভ্যাল হচ্ছে শুনলে চলে যান, রাজবাড়ির রান্না খাওয়াতে। রান্না টেস্ট করাতে নির্দ্বিধায় চলে যান হোটেলেও। লোকজনকে খাইয়ে খুশি করতে পারলে, তিনি খুশি। লোকের মুখে নামই হয়ে গিয়েছে, তিনি রান্নার রাজা। বিক্রম সিং বাহাদুরও তাই বলেন, হিজ হাইনেস নয়, শেফ বিক্রম সিং বাহাদুর। সূত্র : এইসময়
১১ জুন,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এএম/এমহক

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে