রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:০৫:০১

একটি তালগাছের কথা

একটি তালগাছের কথা

লেখক- রফিক আহমদ খান, মালয়েশিয়া থেকে: আমার প্রিয় খানবাড়ি।এক সময় ষাট পরিবার ছিল, এখন একশ অধিক পরিবার নিয়ে একটি পাড়া।খানবাড়ির বড় পুকুরের দুই পাশে বাড়ি, দুই পাশে বিল।পুকুরের দক্ষিন পশ্চিম  কোণায় মসজিদ।যেখান থেকে সুমধুর আজানের ধ্বনি  আসে।পুকুরের উত্তর পূর্বকোণে বিশাল বাঁশঝাড়।যেখানে হাজারো পাখির বাসা ছিল এক সময়।এখন আর সেই দিন নেই।আগের মত সন্ধ্যায় পাখির কিচিমিচির নেই। পূৃর্বপাড়ের মাঝমাঝি এক পা'য়ে দাড়িয়ে আছে তালগাছ।কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর'র কবিতার লাইনের মত-"তালগাছ এক পা'য়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে।"  একটি মাত্র তালগাছ। সেই যখন আমি খুব ছোট্ট ছিলাম,(কমপক্ষে  ৩০ বছর আগে) তখন থেকে এখনো সেই তালটি দাঁড়িয়েই আছে।তালগাছটি ত্রিশ বছরে কোন পরিবর্তন হয়নি।না বড়, না ছোট! হয়ত আমার জন্মের অনেক আগে থেকে এই তালগাছটি এ রকমই ছিল। আমি ক্লাস ওয়ানে পড়া অবস্থায় তালগাছটি যে সাইজের ছিল, এখন আমার মেয়ে ক্লাস ওয়ানে পড়তেছে এখনো তালগাছ একই সাইজে আছে।খানবাড়ি -ফকিরখীলের ছেলেরা বড় হয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে, শহর ছেড়ে বিদেশে গিয়ে পাঁচ-দশ বছর পরে এসেও দেখে তালগাছটা এক পা'য়ে দাঁড়িয়ে আছেই সেই আগের রুপে।মেয়েরা বড় হলে দূর গ্রামে বিয়ে হয়।আর কয়েক বছর পর তারই ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভাদ্র-আশিন মাসে বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসে এই তালগাছের তালের রসের বানানো পিঠা খাওয়ার জন্য।যাওয়ার সময় শ্বশুর শাশুড়িদের জন্য নিয়ে যায়।

         
আমাদের খানবাড়ি ষাট পরিবার থেকে বেড়ে এখন প্রায় একশ'র উপরে পরিবার। পরিবার বাড়ছে,মানুষ বাড়ছে, কিন্তু তালগাছ বাড়েনি।বাপ-দাদার দিন থেকে একটাই তালগাছ। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে বছরের পর বছর এই তালগাছের তালের পিঠাই আমরা খেয়ে আসছি।পুকুর পাড়ের তালগাছের তলা(জায়গা) ব্যক্তি মালিকানা(আমাদের) হলেও তালগাছের তাল কিন্তু সবার।অর্থাৎ পাকাতাল মাটিতে পড়লে যে পাবে তার।অনেক অনেক মজার ঘটনা আছে এই তালগাছ নিয়ে।প্রথমত:এই তালগাছে এখনো কোনদিন কোন কেউ উঠতে পারেনি।অনেক সময় অনেকেই চেষ্টা করেও পারেনি।এই গাছের তাল পেকে আপনা আপনি নিচে পড়ে।খানবাড়ির খুব কম লোকই আছে যে তাল নিচে পড়লে আওয়াজ শুনে তালের জন্য দৌঁড়াইনি।অনেক সময় অনেকে এক সাথে দৌঁড়ে তালের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।একজনের উপর আরেকজন ঝাঁপিয়ে পড়া।অনেক সময় তাল পড়ার আওয়াজ শুনে কিন্তু তাল সহজে খুঁজে পায় না।এদিক সেদিক খোঁজাখুঁজি।তালগাছের আশেপাশে কয়েকজন গল্প করতে দেখলে কেউ একজন চুপিচাপি গিয়ে বড় পাথর বা ঢিল উপর থেকে ফেলে তাল পড়ার মত আওয়াজ করে সবাইকে দৌঁড়ায়ে বোকা বানাত। সবই অনেক মজার ছিল।
           
বাড়ির পূর্ব পাশে অনেক দূর থেকে দেখা যায় আমাদের এই প্রিয় তালগাছটি। শৈশবে নানার বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে আসার সময় অর্ধেক রাস্তায় এসে যখন তালগাছটি দেখা যেত, তখন আম্মু বলত, দেখ, দেখ, তোমাদের বাড়ির তালগাছ দেখা যাচ্ছে।এসে গেছি,আর বেশি দূরে নেয়।আর এখন আমার বাচ্চাদেরও তাদের মা একই কথা বলে।আমাদের খানবাড়ির সাথে যাদের আত্থীয়তা আছে তারাঁ সবাই এই তালগাছের তালের রস দিয়ে বানানো তালপিঠা অবশ্যই খেয়েছে।সুনামও আছে এ গাছের তালের রসের।খুবই মিষ্টি রস।পরিমানেও বেশি।
                 
আমার শৈশবের এই তালগাছ, এখন আমার ছেলে-মেয়ের শৈশবের তালগাছ হয়ে গেল।জানি না আরো কত বছর থাকবে এই প্রিয় তালগাছটি।শুধু খানবাড়ি নয়, পাশের পাড়া ফকিরখীলেও আর কোন তালগাছ নেই।ঐ পাড়ার লোকেরাও খেয়েছে এই গাছের তালের রসের তালপিঠা।দূর প্রবাসে বসেও মাঝেমাঝে মনে পড়ে আমার শৈশবের এই তালগাছের কথা।প্রিয় 'তালগাছ' বেঁচে থেকো আরো অনেক কাল।
২২ এপ্রিল,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে