রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:১৫:১২

পবিত্র হজ যেভাবে শুরু হয়েছিল

ইসলাম ডেস্ক: আপনি জানেন কি, পবিত্র হজ কিভাবে কখন কোন সময় থেকে শুরু হয়েছিল? হজ হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। পবিত্র হজের মাধ্যমে সারা পৃথিবী থেকে আসা মুসলমানদের নিয়ে পবিত্র মক্কা ও মদিনা নগরীতে প্রতিবছর মুসলমানদের মিলনমেলা ঘটে।  কিন্তু পবিত্র হজ কখন থেকে শুরু হয়েছিল এর সঠিক ইতিহাস অনেক মুসলমানই জানেন না। তাই এখনই জেনে নিন পবিত্র হজ শুরুর সঠিক ইতিহাস।


আরবিতে হজ বলতে কাবাগৃহ প্রদক্ষিণের জন্য সংকল্পবদ্ধ হওয়ার পর নির্দিষ্ট কিছু স্থান প্রদক্ষিণ করা এবং নির্দিষ্ট কিছু কাজ সম্পাদন করাকে বোঝায়। একেশ্বরবাদে বিশ্বাসীদের আদি পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে অনুসারীদের কাবাগৃহে ইবাদতের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। তারপর থেকেই হাজার হাজার বছর ধরে পবিত্র হজব্রত পালিত হয়ে আসছে। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা কাবাঘর নির্মাণ করেন। কাবাঘরে প্রথম হজ আদায়ও করেন তাঁরা। এরপর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) কাবাঘরকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দান করেন। পরবর্তী সময়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তা পুনর্নির্মাণ করেন। সৌদি আরব থেকে প্রকাশিত হজবিষয়ক একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, 'আনুমানিক হিসাব মুতাবেক কাবাঘর পুনর্নির্মাণের পর থেকে হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর প্রদর্শিত পথে হাজার হাজার বছর ধরে পবিত্র হজব্রত পালিত হয়ে আসছে।

ইসমাইল (আ.) যখন কিশোর তখন হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্ন দেখেন আল্লাহ তাঁকে তাঁর প্রিয় বস্তু কোরবানির নির্দেশ দিচ্ছেন। এ স্বপ্ন দেখে হজরত ইব্রাহিম (আ.) ১০০ গবাদিপশু কোরবানি দেন। দ্বিতীয় দিনও তিনি একই স্বপ্ন দেখেন। এবারও তিনি ১০০ গবাদিপশু কোরবানি দেন। তৃতীয় রাতেও তাঁকে প্রিয় বস্তু কোরবানি দিতে বলা হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) উপলব্ধি করেন ইসমাইল তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। আল্লাহ তাকেই কোরবানির নির্দেশ দিয়েছেন। সে নির্দেশ পালিত হয়নি বলেই বারবার একই স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে।

এ উপলব্ধি কঠিন পরীক্ষার মুখে ঠেলে দেয় ইব্রাহিম (আ.)-কে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের জয় হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) সিদ্ধান্ত নেন যত কষ্টকরই হোক আল্লাহর হুকুমই তিনি পালন করবেন। পুত্রকে কোরবানি দেওয়ার জন্য নিয়ে চলেন দূরবর্তী ময়দানের দিকে।

মাঝপথে ইসমাইল (আ.)-কে জানান ঐশী আদেশের কথা। ইসমাইল (আ.) বলেন, আল্লাহর রাহে কোরবানি হওয়া তো সৌভাগ্যেরই ব্যাপার। মিনা ময়দানে ছেলেকে কোরবানির জন্য প্রস্তুত হন আল্লাহর নবী। অপত্যস্নেহ আল্লাহর নির্দেশ পালনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ভেবে হজরত ইব্রাহিম (আ.) কোরবানির আগে নিজের চোখ বেঁধে নেন। তারপর ছেলের গলায় চালান ধারালো ছুরি। কোরবানি শেষে চোখ খুলেই দেখেন পাশে দাঁড়িয়ে ছেলে ইসমাইল। তার বদলে একটি দুম্বা জবাই হয়ে আছে।

ফেরেশতা এসে নবীকে জানান, আল্লাহ তাঁর উৎসর্গিত মনোভাবে খুশি হয়েছেন। তিনি তাঁর কোরবানি গ্রহণ করেছেন। তখন হজরত ইব্রাহিম ও ইসমাইল (আ.) আল্লাহর নির্দেশে কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করেন। কাবাঘর প্রদক্ষিণের নিয়মও প্রবর্তন করেন তাঁরা। হজ উপলক্ষে হজব্রত পালনকারীরা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর স্মৃতি অনুসরণে কোরবানি দেন। এ নিয়মও চলে আসছে সাড়ে চার হাজার বছর ধরে। কাবাঘর স্থাপিত হয়েছিল একেশ্বরবাদী চেতনাকে উদ্ভাসিত করার জন্য। কালক্রমে এ পবিত্র গৃহ ভণ্ড পুরোহিতদের আখড়ায় পরিণত হয়। আবার অন্ধকার নেমে আসে এবং এই দুই নবীর অনুসারীরা বিপথগামী হয়ে পড়ে। তারা ভুলে যায় আল্লাহর নির্দেশের কথা। ভুলে যায় ইব্রাহিম (আ.)-এর শিক্ষা। সাড়ে চার হাজার বছর আগে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরার জন্য যে কাবাঘর পুনর্নির্মিত হয়েছিল, সেখানে শুরু হয় দেবদেবীর পূজা। হজের নামে প্রবর্তিত হয় ব্যভিচার আর বেলেল্লাপনা। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দের ১১ জানুয়ারি মক্কা বিজয়ের পর হজরত মুহাম্মদ (সা.) হজ পালনে আদি পুরুষ হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর নির্দেশিত নিয়মই আবার পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করেন।

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মক্কা জয়ের আগের কয়েক শ বছর ধরে হজ পালন, কাবা প্রদক্ষিণ এবং কোরবানির নামে যা হতো তার সঙ্গে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর শিক্ষার কোনো সম্পর্কই ছিল না। তাঁর সরাসরি বংশধর কাবা শরিফের খেদমতকারীর দাবিদার কুরাইশদের নেতৃত্বেই চলত হজের নামে নাচ-গান, মদপান, আর ব্যভিচার। কাবাগৃহ প্রদক্ষিণ করা হতো নগ্নভাবে।

নারী-পুরুষ উলঙ্গ কাবা শরিফ প্রদক্ষিণ করত এবং বলত, 'আমরা যে অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছি সে অবস্থায় আল্লাহর সামনে হাজির হয়েছি।' পশু কোরবানির পর কাবাঘরের সামনে মাংস ফেলে রাখা হতো এবং ভাবা হতো, আল্লাহ এ মাংস ভোগ করবেন (নাউজুবিল্লাহ)। আরবের বিভিন্ন গোত্রপতি কোরবানির নামে নিজেদের আর্থিক সামর্থ্যের জানান দিত। হজ উপলক্ষে যে বিশাল সমাবেশ হতো, সেখানে মেজবানির ব্যবস্থা করে দম্ভ প্রকাশেরও চেষ্টা চলত।

মনে করা হয়, হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মৃত্যুর এক হাজার বছর পর থেকে শুরু হয় এসব অনাচার এবং তা কমবেশি দুই হাজার বছর অব্যাহত ছিল। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে মক্কা বিজয়ের পর কাবাগৃহ থেকে সব মূর্তি সরিয়ে ফেলা হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) হজের যে নিয়ম প্রবর্তন করেন সাড়ে চার হাজার বছর আগে, তা পুনঃ প্রবর্তিত হয়।
১৯ আগস্ট,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/এমআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে