রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:৩৪:১২

জন্মদিন পালন করা প্রসঙ্গে আল কোরআন যা বলছে

ইসলাম ডেস্ক: বর্তমানে জন্মদিন পালন বলতে বুঝায় মাসের যে তারিখটিতে কোন ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছে বছর ঘুরে সে তারিখটি আবার ফিরে আসলে সেটাই তার জন্মের দিন তথা জন্মদিন। সেদিনে আত্মীয়-সজন বন্ধু-বান্ধক নিয়ে আনন্দ উল্লাস করা হয়, আয়োজন করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠান বা উৎসবের। এতে আমন্ত্রিত মেহমানদের আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে। মেহমানরা তাকে জন্মদিনের শুভকামনা জানান এবং তার ভবিষ্যত জীবন যেন আরো সুন্দর ও বর্ণীল হয় এ দোয়া করেন ।সইেসাথে তারজন্য উপহার সামগ্রীও দিয়ে থাকেন। মোটকথা জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠান পালন ও আনন্দ-উৎসব উৎযাপন করাকে জন্মদিন বলে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু ইসলামে জন্মদিনের কোন ভিত্তি পাওয়া যায়নি পক্ষান্তরে বলা হয়েছে এটা বিধর্মীদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আচার হওয়ায় এটি পালন করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়েজ।


হাদীস শরীফে এসেছে,
    ”عن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم “ من تشبه بقوم فهو منهم
    হযরত ইবনে উমার রাযি. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে,সে তাঁদেরই দলভুক্ত। (সুনানে আবূ দাঊদঃ ৪০৩১)


এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, মানুষ অন্যের অনুকরণ করে থাকে তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা থেকে। জন্মদিন পালন যদি ইহুদি ও খৃষ্টানদের কৃষ্টিকালচারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কিংবা ভালোবাসা থেকে হয় তাহলে সেটা শুধু হারামের মাঝেই সীমাবদ্ধ ধাকবে না বরং কুফরি পর্যন্ত পৌঁছে দিবে। (ইমদাদুল আহকাম)

অন্যকোন পন্থায় জন্মদিন পালন
জন্মদিন পালনের মূল বিষয়টি যেহেতু বিধর্মীদের থেকে এসেছে তাই বলা যায় এর মূল জিনিসটিই ইসলামে প্রত্যাখ্যাত। তা যে কোন পদ্ধতিতেই হোক।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
    {اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ قَلِيلًا مَا تَذَكَّرُونَ } [الأعراف : 3]
    তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষথেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ কর। তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য সাথিদের অনুসরণ করনা। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা আ’রাফঃ ৩)

    {ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلَى شَرِيعَةٍ مِنَ الْأَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ } [الجاثية : 18]
    এরপর আমি আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ বিধানের উপরঃ সুতরাং আপনি এর অনুসরণ করুন, মূর্খদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না। (সূরা যাসিয়াঃ ১৮)

এখন কেউ যদি বলে আমি জন্মদিন হিসেবে শুকরিয়া স্বরূপ কিছু আমল করবো তাহলে এই ব্যাপারে কথা হলো, ইসলামে যে বিষয়টি নেই তা ইসলামের অন্তর্ভুক্ত করা বিদআত। যা প্রত্যাখ্যাত।

হাদীস শরীফে এসেছে –
    قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من أحدث في أمرنا هذا ما ليس فيه فهو رد
    হযরত আয়েশা রাযি. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেউ আমাদের এ শরীয়তে সংগত নয় এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটালে তা প্রত্যাখ্যান করা হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫৫০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৮৯)

    كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول في خطبته يحمد الله ويثني عليه بما هو أهله ثم يقول من يهده الله فلا مضل له ومن يضلله فلا هادي له إن أصدق الحديث كتاب الله وأحسن الهدي هدي محمد وشر الأمور محدثاتها وكل محدثة بدعة وكل بدعة ضلالة وكل ضلالة في النار
 হযরত যাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবার মাঝে বলতেন, যাকে আল্লাহ হেদায়াত দেন তাকে ভ্রষ্টকারী কেউ নেই।আর যাকে পথভ্রষ্টকরেন তার জন্য হেদায়াত কারী কেউ নাই। নিশ্চয়ই সবচেয়ে খাটি কথা হল আল্লাহর কিতাব ও সর্বোত্তম দিশারী হল মুহাম্মাদ সা এর সুন্নাত এবং সর্ব নিকৃষ্ট কর্মহল (দ্বীনের মাঝে) নতুন কিছু উদ্ভাবন করা। প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত বিষয়ই বিদআত; প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতাই জাহান্নামী।(সুনানে নাসাঈঃ ১৫৭৭)


কেউ আমল করার জন্য এক বছর অপেক্ষা করুক এটা ইসলাম কামনা করে না। নির্দিষ্ট কোন দিনের জন্য আমলকে বাচিয়ে রাখা ইসলামের কর্মপন্থার বিরোধী। বরং নিয়মিত আমল স্বল্প হলেও আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দ।

এ ব্যপারে হাদীসে শরীফে এসেছে

(عن عائشة قالت قال رسول الله صلى الله عليه و سلم أحب الأعمال إلى الله تعالى أدومها وإن قل ( صحيح مسلم

হযরত আয়েশা রাযি. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালার নিকট পছন্দনীয় আমল হচ্ছে নিয়মিত আমল, চাই তা কম হোকনা কেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৯৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮৩)


কেউ যদি কারো জন্মের দিনটিকে তার বিশেষ দিন মনে করে তাহলে তা ইহুদি ও মুশরেকদের বিশ্বাসের সাথে মিলে যায়। কেননা তাদের কাছেও কারো জন্ম গ্রহনের দিনটি তার জন্য বিশেষ একটি দিন । আর রাসূল সা. ইহুদী ও মুশরেকদের সাথে সাদৃশ্য পছন্দ করতেন না তাই কখনো তাদের বিপরিত আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই কোন মুসলিমের জন্য উচিত হবেনা জন্মদিনের মত অহেতুক একটি কাজ করে ইহুদি ও মুশরেকদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে তাদের দলভুক্ত হওয়া। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে দ্বীনের উপর চলা সহজ করে দেন। আমীন।
১৭ আগস্ট,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/এমআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে