রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:৪১:১৫

না বলা কথা

না বলা কথা

পাঠকই লেখক ডেস্ক : চমৎকার জোছনাস্নাত রাত। চারপাশে কোমল হাওয়া। আর সেই হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে মিষ্টি বেলী ফুলের ঘ্রাণ। কোন সুদূর থেকে এ ঘ্রাণ আসছে কেবা জানে। বাসার ছাদে বসে শহরটাকে দেখার চেষ্টা করে ফাহিম। হাজারো বাতির ভিড়ে জোছনাটাকে কেনো জানি মলিন মনে হয়। এমন মলিন জোছনায় দূরের চাঁদটাকে আরো অপরূপ লাগছে।

জোছনার আলো হুমড়ি খেয়ে পড়ে পুরো ছাদটাই। হাওয়ার দোলা বেড়েই চলেছে। সেই সাথে বেলী ফুলের ঘ্রাণ মনকে আরো উতলা করে তুলছে। উতলা মনটা হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠলো। সবকিছু কেমন যেন রঙিনের মত। এভাবে কখন যে ছাদে ঘুমিয়ে পড়েছে ফাহিম সেটি মনে হয় নিজেও জানে না। সকালের স্নিগ্ধ সূর্যের আলোয় ঘুম ভাঙ্গে ফাহিমের। হায়! একি করেছি আমি, সারারাত এখানেই ঘুমিয়ে ছিলাম।

ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হয় ফাহিম। কিন্তু আজ কেনো জানি ভালোই লাগছে না। কি হয়েছে ওর সেটা নিজেই জানে না। বন্ধুরা সবাই বলে কিরে, আজ তোর মনটা মনে হয় ভালো না। কি হয়েছে বলবি আমাদের? কিন্তু ও কি বলবে? নিজের বিবেকের কাছে ওত নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ। কোনোভাবে ক্লাসগুলো করে আবার বাসায় চলে আসে।

হঠাৎ মনে পড়ল সেই বেলী ফুলের কথা। যে ফুলের ঘ্রাণে বিভোর হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো ছাদে। বাসা থেকে বেরিয়ে চারিদিকে ভালো করে দেখল কিন্তু কোথাও বেলী ফুলের বালাই নেই। একি সম্ভব! বড়ই চিন্তিত হলো ফাহিম। গাছ নেই কিন্তু ঘ্রাণ কোথা থেকে আসে।

পড়ন্ত বিকেলে বাসার ছাদে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে সবারই ভালো লাগে। হঠাৎ অপর বাসার ছাদে একটি মেয়ের আনাগোনা। আগে তো দেখিনী কখনো। কে এই সুন্দরী রমনী?

সে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। কিন্তু মেয়েটি কয়েকটি শিশুর সঙ্গে খেলেই চলেছে। এত বড় মেয়ে তবু লজ্জা করছে না তাঁর। এভাবে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো আর মেয়েটি চলে গেল তাঁর গন্তব্যে। যা হোক কত মেয়েকে তো দেখি কিন্তু এই মেয়েটাকে বারবার দেখতে ইচ্ছে করছে কেন? এভাবেই এখন প্রতিদিন ছাদে যাই ফাহিম কিন্তু সেই মেয়েটিকে আর দেখে না। বিমূর্ষ মনে দিনের পর দিন কষ্টের বাসা বেঁধেই চলেছে।

হঠাৎ একদিন ওই বাসা হতে দাওয়াত এলো। ওই বাসায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠান। বাসার সবাই ফাহিমকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে কিন্তু নাছোড় বান্দা যাবেই না। অবশেষে সবার অনুরোধে সেদিন তাঁকে যেতে হলো। ফাহিমের বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা। তাই সবাই ফাহিমের বাবাকে যথেষ্ট সম্মান করেন। বাবা সবার সঙ্গে ফাহিমকে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

হঠাৎ চোখ পড়ল সেই সুন্দরী মেয়েটির দিকে। হতভম্ব ফাহিম। যাকে একবিন্দু দেখার জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করতেন ছাদে আর সেই সুন্দরী রমনী আজ সরাসরি সামনে। পরক্ষণে জানতে পারলেন মেয়েটির চাচাতো বোনের বিয়ে। আর মেয়েটি পড়ালেখা করেন ইংরেজি সাবজেক্ট নিয়ে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে।

অন্যান্য মেয়েদের মত চঞ্চল স্বভাবের নয়। বরং শান্ত স্বভাবের এবং কম কথা বলাই তাঁর বৈশিষ্ট। এই বাসা থেকে একটুও যেতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ এখন তো যেতেই হবে। এদিকে ফাহিম তাঁর ছোট বোনকে বললো, ঐশী তুই কি মণিকাকে চিনিস। কেনো ভাইয়া? কোনো সমস্যা তোমার? না, ঠিক। বুঝছি আর বলতে হবে না। ওর নাম মণিকা জামান, আমার সবচেয়ে ভালো একটা বন্ধু। তা আগে বলবি না, দুষ্ট কোথাকার।

ভাইয়া জানো ওর না বড় ভাইয়া প্রতিবন্ধী। কথা বলতে পারে না। মাঝে মাঝে মণিকা অনেক কান্না করে। জানো ভাইয়া ও ভাই-বোনের আদর-ভালোবাসা হতে বঞ্চিত। আমরা সবাই ওকে অনেক ভালোবাসি। কেননা ওর মত একটি মেয়ে হয় না। যেমন মেধাবী তেমন শান্ত। তুমি জানো ওর কাছ থেকে আমরা এখনো ১ম স্থানটি ছিনিয়ে আনতে পারিনী। কখনো কারো সঙ্গে ঝগড়া তো দূরের কথা, জোর গলায় কথাও বলেনী। ও এমন একটি মেয়ে। তুমি আর কিছু জানতে চাও ওর সম্পর্কে। না, তুই এখন যা।

মণিকার এখন ইচ্ছা করছে ঘুরতে। তাই ছাতাটা নিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে বের হল। বাসা হতে বের হয়ে যখন মনের আনন্দে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছে তখন হঠাৎ ছাতাটা উড়ে গেল। মনে হয় এক্ষুনি বৃষ্টি হবে। বলতে না বলতেই বৃষ্টির আনাগোনা। সারা শরীরটা ভিজে গেল মণিকার।

হঠাৎ একটি গাড়ি তাঁর পাশে এসে দাঁড়াল। ভেতরে সুদর্শন একটি ছেলে বসে আছে। আপনার আপত্তি না থাকলে আমার গাড়িতে উঠতে পারেন। কোনো সমস্যা নেই আমি চোর কিংবা ছিনতাই কারী নই। মণিকা চিন্তা করল বৃষ্টিতে না ভিজে গাড়ীতে ওঠাই ভালো।

কি ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছেন কেনো উঠেন, আপনার তো ঠান্ডা লেগে যাবে। অতপর গাড়ীতে উঠলেন। এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেও ভেজে নাকি। আপনি তো একটা আচ্ছা পাগল। না আমার ছাতাটা বাতাসে উড়ে গিয়েছিলো আর তাই....বুঝছি আর বলতে হবে না। লজ্জায় লাল হয়ে গেল মণিকা। কোথায় যাবেন আপনি? বারিধারা। বাসায় আর কে আছেন? কেনো পরিবারের সবাই। আচ্ছা আপনার নামটা জানতে পারি। মণিকা জামান।

অনেক সুন্দর নাম তো আপনার। সবাই সুন্দর বলে তবে আমার কাছে পঁচা। ও তাই নাকি। তো আপনি কি করেন? আমি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে ২য় বর্ষে পড়ছি। অনেক ভালো। আমার সম্পর্কে তো অনেক কিছু জানলেন এবার বলেন আপনি কি করেন? আর নাম কি? কোনটা আগে বলব..একটা করে শুরু করেন। আমি সালমান। কিছু করি না। বাবা ব্যবসা করেন।

 আমি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে এ পড়ছি। থাকেন কোথায়?বসুন্দরা। তাহলে তো বেশি দূরে নয়। এভাবে কথা বলতে বলতে মণিকার বাসার সামনে  চলে এলো। এরই মধ্যে বৃষ্টি থেমে গেছে। গাড়ী থেকে নামার আগে সালমান বলল আমি কি আপনার নাম্বারটা পেতে পারি। হ্যাঁ কেন না।

বাসায় ভালো লাগছে না সালমানের তাই টিভিতে খেলা দেখছে। হঠাৎ মনে পড়ল মণিকার কথা। সালমান ফোন দিল মণিকাকে। কয়েকবার ফোন দেওয়ার পর ফোনটা রিসিভ হলো। দু-জনের মধ্যে কথা হলো। একপর্যাযে সালমান বললো, মণিকা আমি কি তোমার বন্ধু হতে পারি। কেনো আমার সঙ্গে বন্ধু হওয়ার এত ইচ্ছা? আমি কি তোমার বন্ধু হওয়ার যোগ্য না।

সেটা কি আমি তোমাকে বলেছি নাকি। যে তুমি আমার বন্ধু হওয়ার যোগ্য না। তোমরা ছেলেরা না সব-সময় একটু বেশি বোঝ। একটু কম বোঝাই ভালো, তাঁতে মঙ্গল হয়। আচ্ছা আজ রাখি। কাল আবার কথা হবে। ওকে। মণিকা চিন্তা করল ছেলেটি অনেক সুন্দর এবং বড় লোক। অর্থাৎ বন্ধুত্ব করা যাই।

অবশেষে সালমানের সঙ্গে মণিকার বন্ধুত্ব হলো। এখন প্রতিনিয়ত কথা হয় ফোনে। দিন পেরিয়ে কয়েক মাস হলো তাঁদের আর দেখা হয়নি। এখন এটা কি বন্ধুত্ব নাকি অন্য কিছুর দিকে। প্রতিনিয়ত কথা বলতে বলতে কখন যে দু-জনের মধ্যে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়েছে হয়ত তাঁরা নিজেও জানে না।

একজনের সঙ্গে অন্যজন একমূহর্তে কথা না বললে ভালোই লাগে না। হঠাৎ একদিন রাতে মণিকা বলল, আমাকে দেখতে তোমার ইচ্ছা করেনা। সালমান বলল তোমার তো বের হওয়ার সময় হয়না। সারাদিন বাসা আর ভার্সিটি ছাড়া অন্য কোথাও গিয়েছ কখনো। আচ্ছা বলো তুমি কবে দেখা করবে। বেশ! তাহলে কাল রেস্টুরেন্টে বিকাল ৪.০০ তোমার সঙ্গে দেখা হবে।

মণিকার ভাবনা ক্রমেই বেড়ে গেল। মনের মানুষের সামনে কিভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা যাই সেটা নিয়ে রীতিমত চিন্তাই পড়ে গেল। দেখতে দেখেতে সকাল অবধি বিকাল হয়ে গেল। দেখা হলো তাঁদের রেস্টুরেন্টে। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সালমান বলল আচ্ছা আমরা বাইরে কোথাও যেতে পারি। কোখায় যাবে? কেনো আমাকে তুমি বিশ্বাস করো না, এখানে বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের কি আছে।তাহলে চলো তোমাকে আজ একটা সারপ্রাইজ দিব।

সালমান সোজা মণিকাকে তাঁর বাসায় নিয়ে গেল। মণিকা বলল এটা কোথায়? কেন আমাদের বাসা। কিন্তু কাউকে তো দেখছি না। মনে হয় সবাই একটু বাইরে গেছে। সালমান মণিকাকে তাঁর রুমে নিয়ে গেল এবং বলল তুমি বস আমি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসি।

মণিকা ইতস্তবোধ করলেও সালমান বলল একটু বস না। তাঁরপর মণিকার সঙ্গে যা ঘটল সেটা ছিলো তাঁর জীবনের সবচেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায়। মণিকা না পেরেছিলো মেনে নিতে আবার না পেরেছিলো বাঁধা দিতে। নিরুপায়ভাবে বিলিয়ে দিতে হয়েছিলো তাঁর সম্ভ্রম। চোখের জলে তাঁর বুক ভেসে যাচ্ছে তবু কাওকে বলতে পারছে না। কাকে বলবে সে এ কথা।

যাকে ভালোবেসেছিলো, যার জন্য মন, প্রাণ সবকিছু বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিলো আর সেই মানুষটি কিনা তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করলো। এখন নিঃসঙ্গতাই কাঁটছে মণিকার। সাজানো গোছানো সুখের জীবন সবকিছু তছনছ হয়ে গেল। সে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না, সালমান আসলে কি তাঁর সঙ্গে বেঈমানী করেছে। আমি কেনো ওর মত একটি ছেলেকে ভালোবেসে ছিলাম। কেনই বা তাকে বিশ্বাস করতে গিয়েছিলাম।

এই বিশ্বাসের নাম কি ভালোবাসা। ভালোবাসার অপর নাম কি দেহ পাওয়া। আর দেহ-র বিনিময়ে কি বর্তমানে ভালোবাসা। হায়রে জগত আমার। ভালোবাসা হয় বিশ্বাসে আর তাকে বিশ্বাস করেই হারালাম আমার সবকিছু।

এভাবে কয়েকদিন কেটে গেল। সালমান ফোন দিলেও এখন আর রিসিভ করেনা মণিকা। সে ভুলে যেতে চাই তাঁর অতীত জীবনের কথা। যা ঘটেছিলো তাঁর জীবনে। তাঁর জীবনে কেউ এসেছিলো সেটা শুধুই অতীত হয়ে থাক এটাই মণিকার দীর্ঘশ্বাস।

বর্তমানে পড়ালেখা এবং পরিবার নিয়েই কাটছে মণিকার সময়। সময় পেলে প্রতিবন্ধী ভাই সানির কাছে বসে থাকে। বিধাতা তুমি এত নিষ্ঠুর কেন?যাকে সুখ দাও তাকে দিতেই থাক। আর যাকে দাওনা তাকে বঞ্চিত করেই রাখ। এটাই কি তোমার রীতি। কি অপরাধ করেছিলাম যার জন্য আমাদের সঙ্গে তোমার এমন খেলা।

তুমি অসীম-সীমাহীন তোমার খেলা বোঝা বড় দায়। এখন আর আগের মত হাসি- ‍খুশি দেখা যাই না মণিকাকে। হঠাৎ করে বাসার ছাদে যেতে ইচ্ছা করে। অপর বাসার ছাদে ফাহিম ও তাঁর বোন ঐশী দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আর তখনই ফাহিম দেখে তাঁর মনের অজান্তে লুকানো সেই ভালোবাসার মানুষটিকে।

ঐশী কয়েকবার মণিকাকে ডাকলেও প্রথমত মণিকা শুনতে পাই না। পরবর্তীতে শুনতে পেয়ে মণিকা ও ঐশীর মধ্যে কথা হয়। আর নির্বাক দাঁড়িয়ে সেটা উপলব্ধি করে ফাহিম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় মণিকা বাসায় চলে যাই। কিন্তু ফাহিমের মনটা কোনো ভাবেই বাসায় যেতে চাইছে না।  

পরদিন ক্যাম্পাসে কথা হয় ঐশী ও মণিকার। তখন মণিকা বলে আচ্ছা তোর জানা ভালো কোনো ইংরেজির শিক্ষক আছে। কেন তুই পড়বি নাকি। হ্যাঁ রে। আমার বাসায় শিক্ষক এসে পড়ান তুই চাইলে দেখতে পারিস। আর যদি তোর ভালো লাগে তবে পড়তে পারিস। আয় না একদিন আমার বাসায়। আচ্ছা আজ যাব তাহলে। বাসায় কখন স্যার আসে? স্যার সন্ধ্যা ৭ টাই আসে। তাহলে আজ আমি তাঁর আগেই আসব।

এদিকে আজ পুরো বিকালটা ফাহিম ছাদে অপেক্ষা করলেও এলো না তাঁর মনের মানুষটি। তাই বিষন্ন মনে যখন বাসায় এলো তখন সমগ্র পৃথিবীটাই যেন ফাহিমের। এটা কি সে সত্যি দেখছে নাকি ভুল। ফাহিমের সঙ্গে মণিকাকে ঐশী পরিচয় করিয়ে দিলো। তারপর স্যার এলো এবং স্যারের পড়া খুবই ভালো লাগলো।

এখন হতে প্রতিদিন মণিকা ঐশীদের বাসায় পড়তে আসবে। আর এই আনন্দে ফাহিম আজ দিশেহারা। এজন্য ফাহিম বলল ঐশী আজ তুই যা খেতে চাইবি তাই তোকে খাওয়াবো। না থাক, তোমাকে আর খাওয়াতে হবে না। আর শোনো তুমি আমার বান্ধবীর দিকে একটু কম তাকাবে। আচ্ছা গিন্নী আর বলতে হবে না। এখন অনেক ক্ষুধা পেয়েছে যা রাতের খাবার নিয়ে আই। রাতের খাবার খেয়ে মণিকার কথা চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে ফাহিম।

এখন প্রতিনিয়ত বাসায় পড়তে আসে মণিকা। মাঝেমধ্যে মণিকার সাথে ফাহিমের কথাও হয়। কিন্তু মণিকা বিষয়টি বুঝলেও সে আমলে নেয় না। কেননা আগের সেই ক্ষত এখনো তাকে যন্ত্রনা দেয়। ভালোবাসায় বিশ্বাস নামক কোনো শব্দ আছে সেটি এখন মানতে নারাজ মণিকা।

হঠাৎ ফাহিম একদিন সরাসরি মণিকাকে তাঁর ভালোবাসার কথা জানালো। তখন মণিকা একটি কথাই বললো, একজনকে কাছে পাওয়ার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করেনি আর সেই মানুষটি যখন আমাকে ধোঁকা দিল। সেখানে ফাহিম তোমাকে কিভাবে আমি আপন করে নেব বলো।

তখন ফাহিম একটি কথাই বলল, কেউ যদি তোমার জীবন থেকে চলে যাই তবে কষ্ট পেও না, ভেবে নিও তাঁর জীবনের অধ্যায়টা তোমার জীবন হতে শেষ হয়েছে। কিন্তু তোমার বাকী জীবনটা এখনো পড়ে আছে। ফাহিম মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান আর মণিকা অনেক বিত্তশালী ঘরের মেয়ে।

কোনো অর্থের-ই দাম থাকে না যদি না মনে সুখ থাকে। কি করবে মণিকা। আগের মত আবার ফাহিমকে বিশ্বাস করে কি হারাবে তাঁর সতীত্ব নাকি যেমন আছে ঠিক তেমন-ই থাকবে। এই দুটি প্রশ্নের বেড়াজালে এখন আবদ্ধ মণিকা। অন্যদিকে ভালোবাসার যন্ত্রনায় ব্যাকুল ফাহিম।

এখন খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে একপ্রকার পাগলের মত অবস্থা। আর অন্যদিকে ভালোবাসার সমীকরণে ব্যস্ত মণিকা। যে কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিশ্বাসে আর যখন ভেঙ্গে যাই তখন সেই বিশ্বাসের অমর্যাদা করা হয়। আর কিভাবেই বা থাকবে।

যাকে অন্ধের মত ভালোবেসেছিলো সেই ব্যক্তি যদি বেঈমান হতে পারে তাহলে কি আর কাওকে বিশ্বাস করা যায়। সকল সমীকরণ শেষে মণিকার সদুউত্তর ছিল না।  তখন আকাশটা যেন ফাহিমের মাথায় ভেঙ্গে পড়ে। সে বিশ্বাস করতে পারছে না মণিকা তাকে ভালোবাসে না। সব স্বপ্নই-স্বপ্ন থেকে গেল।

ভালোবাসতে যেয়েও ভালোবাসা হলো না। বাসায় হঠাৎ বেহুশ হয়ে পড়ে যাই ফাহিম। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার যা বললেন, সেটা হয়ত কেউ ভাবেনী। অতপর ডাক্তর যা বলল সেটা ছিল সত্যি অবিশ্বাস্য। জানা গেল তাঁর সময় খুবই কম। সে বাঁচতে পারে নাও পারে।

আগের মতই সময় যাচ্ছে মণিকার। হঠাৎ পাশের বাসার একজন মণিকাকে বলল জানিস! ঐশীর ভাই ব্রেইন স্টোক করেছে। আর অবস্থা খুবই খারাপ। কি যেন হয়েছিলো ছেলেটির। হয়ত ছেলেটি আর বাঁচবে না। কথাটি কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিলো না মণিকা। এটা হতে পারে না। মণিকা যখন হাসপাতালে ফাহিমের বেডের পাশে দাঁড়াল তখন আর এই পৃথিবীতে নেই ফাহিম।

সে পাড়ি দিয়েছে অন্য এক ভূবণে যেখানে যাওয়া যাই কিন্তু আর আসা যাই না। তখন মণিকা বলেছিলো তাঁর ভালোবাসার কথা। কিন্তু কোনো কথার উত্তর দেয়নি ফাহিম। অপলক দৃষ্টিতে শুধু চেয়েছিলো মণিকার দিকে। হয়ত ফাহিম বলতে চেয়েছিলো মণিকা জানো, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

কিন্তু আর বলা হলো না কথাটি। বিশ্বাসের মাঝেই বেঁচে থাকে ভালোবাসা। আর যখন সেই বিশ্বাস ভেঙ্গে যাই তখন আর ভালোবাসা থাকে না।
 
লিখেছেনঃ- শেখ জাহিদুজ্জামান

১৪ মার্চ ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/শাম/সিয়াম

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে