রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:০০:৪১

কেউ ওদের কথা ভাবে না

কেউ ওদের কথা ভাবে না

পাঠকই লেখক : চাচা আইজকা ব্যাগ ভরায় আনছি, আজ কিন্তুক বেশি দেওন লাগবো।
 ই আইছে, বেশি নেওয়া, যা পাল্লায় তোল, ঐ বাচ্চু দেখতো কতগুলা আনছে ??

চাচা, ৭ কেজি।

এই নে ৫০ ট্যাহা।
 চাচা ৫০ ট্যাহা কেন ?? কাইল তো ৬ কেজি দিসিলাম , তহন তো ৫০ দিছিলেন।

 দাম কইমা গেছে, পোসাইলে দে না পোসাইলে নিয়া যা । ৭ গুনে ৭ হইলো ৪৯ ট্যাহা আর এক ট্যাহা বেশি দিলাম।

( নয়া চাচারে এর লাইগা ভালা লাগে,বেচারা ঠগায় না,আবার মাঝে মধ্যে বেশিও দেয়,আইজ ও বেশি দিসে কথা হাচা, পাশের দোহানের রহিম্মা পাচচল্লিশ কইছে, আর চাচায় ৫০ ) ।

আইচ্ছা, ( মাথা দুলিয়ে টাকা নেয় সমীর)
ঐ সমীর।
কন কি হইছে ??
এই নে রুটি খা,সকাল থাইকা মাল মশলা কিছু পরছে না , খালি পাইসা দেখলে হইবো,খাইত্র হইবো না। আর শোন বিকালের মালটা আমার এখানে দিবি কইলাম।

চাচার আদর ডা বহুত খাসা, হলদে পড়া দাতে অমায়িক হাসি দেয় সমীর,চাচার হাত রুটি নিয়ে দোকানের বাইরে আসে সমীর।
সমীর,কালো গড়নের ১০-১২ বছরের আস্তাকুড়ের ছেলে।


কাক ডাকা ভোরের আগেই বেরিয়ে পড়ে, রাস্তার পাশে,ডাস্টবিন থেকে, ড্রেন থেকে, কখন বা ড্রেনের ভিতর থেকে প্লাস্টিকের ফেলে দেওয়া ক্যান, গ্লাস, বোতল, ইত্যাদি সংগ্রহ করে বেচে দেয় নয়া চাচার দোকানে যা পায় তাই মায়ের হাতে তুলে দেয়, দুপুরের পর আবার বের হয় । জীবিকার তাগিদে...
ঐ খাড়া।

ডাকটা পরিচিত এলাকার বড় ভাই নন্টুর।কালা গোছের মছুয়া এক ভাই। রুটি টা আধা শেষ হয় নি,হাতে ৫০ টাকার নোট টা এখখনো জ্বলজ্বলে। আভাতা দের যা হয়,খাওয়া পেলে সব ভূলে ওটাই আগএ পেট দরিয়ায় ঢালা চাই, ভয়ে ভয়ে নন্তুর সামনে দাড়ায় সমীর।

যাতো ৫ টা বেনসন নিয়া আয়
ভাই....ইয়েএ
ঐ বেশি ফাল নিবি না,যেডা কইলাম হেইডা কর
ভাই এই ট্যাকা দিয়ে মায় দুপুরত খানা লইব।
ঐ মাসুদ দেতো কানের নিচে বসায়,
না ভাই,আনতাছি খাড়ান আইনা দিতাছি...

------------------------

বাম হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে সমীর,
সামীর কি অইচে রে, কান্দস ক্যা? ? চল ঘর যাই
না যামু না, রাজু তুই যা গা .।
 ক্যা কি অইছে যাবি না ক্যা
ঐ নন্টুর কাইল্লা আইজো ট্যাকা নিচে
শুয়ারের বাচ্চাডা কারো সাথে চোদাই তে পারে না,গ্যাজায় খালি আমাগো লগে।দোস্ত যামু না আইজকা, তোর সাথে বইয়া থাকুম।
বিকালে একলগে ঠোংগা কুড়ামু।
 তোর মায় কিছু কইতো না ??
না,আম্মায় কামে গেছে গা।
আইজা কা উত্তর পাড়ায় যামু,কাইল হেতে ৩ ডা নিকাহ হইছে।
হ মুইও শুনছি, যামুনে।

--------------------------

নয়া চাচার দিলডা ম্যালা ভালারে।
 হ হাচায় কইছস, নন্টুর কালু ট্যাহা নেছে দেইখা চাচার পরানডা দুখ পাইছে,হের লাইগা তোরে ২০ ট্যাহা বেশি দিসে।

 হ !! তয় বেডা খারুজ ভালা কইরা কতা কয় না।
 কি কইতো আর আমাগো লগে ,পাশের রহিম্মা তো আরো চুতিয়া।
হ! ! হাচায় কইছস, চাচায় ভালা, আইচ্ছা রাজু হেইডা কি রে ??
 হেইডা সুপার মারকেট।
 কি করে ??
 বড়লকে খায়ুন বেচে।
 হেতে কি ওইডা পায়ুন যায় ??
 কোনডা ??

 আরে অইডা, গুল বাডির ভিতর থাহে , কাডের চামুচ দিয়া খায়।
 কোন ডা যে, মনে পরতাছে না।

 ব্যাডা ঐ দিন যে রাসেদ ভাই দিসিলো, সাদা সাদা, ঠান্ডা,চিনির লাহান মিষ্টি, ।
 ও আইসক্রিম।

 হ , হ ওইডা পামু এই হানে? ?
 হ , কিন্তু আইসক্রিম কি করতি ??

 মায়ের লাইগা নিয়া যামু,মায় ম্যালা খুশি হইবো, কইবো মোর সমীর কত্ত ভালা
 হ খাসা কইছিস, চল মুইও একডা কিনুম।

চারিদিকে কাচ দিয়ে ঘেড়া সুপার মার্কেট এর কাচের দরজা পুশ করে ভেতরে ধুকে সমীর আর রাজু।
ভয়ে চোখ গুলো কেমন করছে,গলায় ঢেকুর উঠে
----------------
ঐ ব্যাডা ঐ ।
সিকিউরিটি দৌড়ে আসে তাদের দিকে, রাজু ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়, সমীর কিংভূতকিমাকারের মত দাড়িয়ে থাকে,
সিকিউরিটি গার্ড সমীরের কাছে এসে পড়নের গেঞ্জি মুট করে ধরে....

কি করস এইহানে ??
 আইসক্রিম কিনুম।

 হো হো হো কিনবি না,চুরি করতে আইসোস ??
 না, মায়ের লাইগা আইসক্রিম কিনুম।

 ব্যডা ফের মিছা কথা, আইসক্রিম কিনবি টাকা কই ??
এইযে ( ভীত সন্ত্রস্ত সমীর ভয়ে ভয়ে পকেট থেকে ১০০ টাকার নোট বের করে , টাকাটা ছো মেড়ে কেড়ে নেয় গার্ড)

কার টাকা চুরি করসস ক ?? চুরি কইরা আবার আইসক্রিম কিনবার চাস। ( সজোরে দুইটা ঠাপ্পর বসিয়ে দেয় সমীরের গালে)
( চোখ জোড়া ছল ছল, পানি বেয়ে পরছে সমীরের, কালো গালটাও লাল হয়ে যায়) বিশ্বাস করেন আমি চুরি করি নাই , আমারে যাইতে দেন ।

সত্যি কথা বলবি নাকি,পুলিশে দিমু? ?
না না, আমারে পুলিশে দিয়েন না। আমারে যাইতে দেন।

সমীরের গেঞ্জি ছেড়ে দেয় গার্ড, এক দৌড়ে মার্কেটের বাহিরে বেরিয়ে আসে , ১০ হাত দূড়ে দাড়িয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে স্বচ্চ কাচ ভেদ করে গার্ডকে দেখে, ১০০ টাকার নোটটা আস্তে করে পকেটে ঢুকিয়ে রাখে গার্ড ।

পাশে লুকিয়ে থাকা রাজু বেড়িয়ে এসে সমীরে এর কাধে হাত রাখে, ছল ছল চোখ গুলো মুছতে ভূলে গেছে সমীর, আশপাশ চেয়ে শুক্ত মাঝারি একটা ইট হাতে নেয়, প্রথম তাকায় রাজুর চোখে, হ্যা সম্মতি সেখানে স্পষ্ট।

ইট টা সজোড়ে ছূরে মারে লক্ষবস্তু কাচের দিকে, ২/৩ সেকেন্ডে ঝনঝন শব্দে কম্পিত হয় চারিদিক।

দুটি ছেলে দৌড়াচ্ছে, প্রানপণ, আর পিছনে কিছু পা-চাটা কুত্তা ও দৌড়াচ্ছে, আর ঘেউ ঘেউ করছে " ধর ধর " !!!

লেখক:  ইমরান বিন ইউসুপ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে