রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:১৭:৪৫

কাশ মালেকের উচিৎ শিক্ষা

কাশ মালেকের উচিৎ শিক্ষা

পাঠকই লেখক ডেস্ক : কিশোরগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের এক রহস্যময় চরিত্র আমাদের মালেক কাকা। সারা বছর তার কাশি লেগেই থাকে। আমাদের বাড়ির পাশেই মেইন রোডের উল্টো দিকে নদীর পাড়ে হিজল গাছ তলায় উনার টঙ দোকান। দোকান থেকে তার বাড়ির দূরত্ব মোটেও কম হবে না। তাই রাতেরবেলা টঙয়েই ঘুমান। কাশতে কাশতেই কাকা সারা দিনমান একটু পর পর লিমা লিমা বলে চিল্লাইতে থাকে।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে বাড়ি থেকে যদিও ডাক শোনা যাওয়ার কথা না তবুও কিভাবে যেন মেয়ে লিমা ঠিক সময়ই এসে হাজির হয়! এসব কারণেই মূলত গ্রামের ফাজিল ছেলের দল চাচার নাম দিয়েছে "কাশ মালেক" আর তা নিয়ে পুরু গ্রামে রীতিমত হিরিক পরেছে। সংগত কারণেই উঠতি বয়সের ছেলেপেলেদের প্রতি চাচা যারপর নাই বিরক্ত। তাই ছোটখাট কিছু পেলেই হল তা নিয়ে সবসময় পোলাপানদের নাস্তানাবোধ করার নেশায় থাকেন।

একদিন তারই শিকার হয় আমার এক বড়ভাই। ভাই তখন সবে সিগারেট খাওয়া শিখতেছে। গ্রাম এলাকা হওয়ায় তাকে অনেক ঝক্কি ঝামেলা মিটিয়ে পছন্দসই নিরাপদ জায়গা খুঁজে বের করতে হয়। কিন্তু কথায় আছে না "যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত হয়" ভাই আমার মালেক চাচার কাছে অসহায় ধরা খেয়ে তারই সত্যতা পুনরায় প্রমাণ করল! ব্যাপারটা যেন মালেক চাচার কাছে "মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি ঠেকেছে!" তাই তিনি ঈদের চাঁদ দেখার মতই আনন্দিত। ফলাফল যা হওয়ার কথা তাই হল। সোজা দাদির কাছে বিচার নিয়ে গেলেন "পোলায় মুরুব্বি মানে না। আইজকাইল তো সামনে পথেঘাটে সিগারেট খাওয়ন ধরছে" ইত্যাদি ইত্যাদি। রক্ষণশীল একান্নবর্তী পরিবার... কাজেই পরিস্থিতি বুঝতেই পারছেন!

কিছুদিন পর...

ভাই কিছুতেই তার এই হীন দশা মেনে নিতে পারছে না। উঠতে বসতে বাপ চাচার ধমকানি। লজ্জায় চাচীদের সামনেই পরতে পারছে না বেচারা। নাহ এর একটা হেনস্থা করতেই হবে। সমবয়সী ছেলেদের নিয়ে রীতিমত সংসদ বসিয়ে দিল। কি করা যায়...কি করা যায়! তবে আইডিয়া খুঁজে পেতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। আসছে ঈদ। গ্রামে এই সময়টায় বমের (পটকা) চালান বেশ রমরমা। তাই যা করার এই বম দিয়েই করতে হবে। আর এর জন্য ঈদের আগের রাতটাই বেছে নিল।

রাত ১২ টা (গ্রামে রাত ১২ টা মানে আলাদাভাবে বলতে হয় না) দোকান বন্ধ করে চাচা ততক্ষণে কয়েক ঘুম দিয়ে ফেলেছে। আর তখনই শয়তানগুলা প্ল্যান মোতাবেক দোকানের চার পায়ায় চারটি পঞ্চাশ টাকা দামের (তখনকার পঞ্চাশ টাকা মানেই বিশাল কিছু) বম বেঁধে দিয়ে ভোঁ দৌড় দিল!!! কাশ মালেকের ভীমরি দশা আর কে দেখে? পরদিন মানে ঈদের দিন সকাল হতেই মালেক চাচাকে দেখা যায় গোসল নামাজ বাদ দিয়ে যারেই পাচ্ছে তাকেই ডেকে এনে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে-

"ভাইসাব আমি আপনেগো কাছে এর বিচার চাই। পোলাপাইন কত বড় বদমাইশ হইলে পরে এমুন কামডা করবার পারে কইন দেহি?? আমিতো মনে হরসি আমার উফ্রে বুঝি আসমানডা ভাইঙ্গা ফরসে!! আরেকবার মন অয় কেউ বুঝি দোহানডা উল্টাই আমারে গাঙ্গে ফালাইয়া দিসে"

লেখক : রিয়াজুল ইসলাম হৃদয়

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে