রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:২৩:১৯

মেয়েটা খুব লাজুক

মেয়েটা খুব লাজুক

পাঠকই লেখক ডেস্ক : বিয়ের এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো মত কথাই বলেনি নুসরাত। এত লাজুক মেয়েটা ! এক সপ্তাহ পর কি এক কারনে বলেছিল,  আজ অফিস থেকে একটু তারাতারি আসবেন। সেদিন অফিসে এতটুকু কাজ করতে পারিনি।

নুসরাত খুব নরম মনের একটা মেয়ে ছিল। খুব কম কথা বলতো। 'চা খাবেন? বা কিছু লাগবে? টাইপ কথা খুব কম বলে। অনেকটা হুট করে আসে , আশেপাশে দেখে , তারপর বলে চা দিচ্ছি। উত্তরের অপেক্ষা করে না, হন হন করে হেঁটে চলে যায়। একটু কথা বলা হয় না। মেয়েটা খুব লাজুক।

রাতে ঘুমানোর সময় তার সে কি যুদ্ধ! এতটুকু ছোয়া সে লাগতে দিবে না নিজের গায়ে । কোন এক রাতে ঘুমের ঘোরে ওর পিঠে হাত রেখেছিলাম। মাঝ্রাতে ওর কান্নায় ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো। আমি চোখ কচলাতে কচলাতে বলেছিলাম, কি হলো? ও বলে, আপনি আমার পিঠে সারারাত হাত রেখেছেন। বলে আমার দিকে তাকিয়ে আবার কান্না। সেই রাতে খুব খারাপ লেগেছিলো, রাগের চোটে ঘরের বাইরে গিয়ে সোফায় ঘুমিয়েছিলাম। অথচ সকালে উঠে উল্টা আমিই বললাম, সরি। এমন আর হবে না। কত বড় ডাহা মিথ্যা কথাটা বলেছিলাম সেদিন!

বিয়ের দুই বছর হল, মেয়ের লজ্জা কমে না। এর মধ্যে ভুলিয়ে ভালিয়ে ওকে যে ছুই নি তা নয়। কিন্তু পরক্ষনেই কান্নাকাটি। আপনি কি করলেন এটা? তখন আর বলতাম না, সরি । উল্টা হাসতাম। আমার হাসি দেখে ও আরও কান্না করতো। পরে পাশে এসে গুটি মেরে ঘুমাতো। আমি ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে রাখতাম। লাজুক মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে ঘুমাতো। সারা রাতে সেই লাল আভা যেত না। কি মায়াবী একটা দৃশ্য ছিল!

এক রাতে দেখি কান্নাকাটি করে বালিশ বিছানা ভিজিয়ে একাকার। আমি সরল মনে লাইট জ্বালিয়ে বললাম, কি হল? ভেবেছিলাম বলবে, আমার পেটে পা তুলে দিয়ে ঘুমুচ্ছিলেন !

না।
তা না বলে বললো, মাথাটা খুব ব্যাথা করছে!'
মাথা চেপে ধরে বিছানায় এদিক ওদিক করছে আমার নুসরাত। আমার ভেতরটা মুচড়ে গেল। রাতে ও আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে রইলো। আমি মাথা টিপে দিয়েছিলাম। ও ঘুমালো। চেহারায় লালচে আভা সেদিন আর পেলাম না। আর কোনদিন পাইনি।

ডাক্তারের এতগুলো মেডিসিন খেয়ে খেয়ে মুটিয়ে গেল নুসরাত। চলতে ফিরতে পারতো না খুব একটা। তারপর ন্যাড়া মাথায় ঘরের এক কোণে বসে থাকতো। আগের মত কাঁদে না ও। এখন ওর কান্নার রোগ আমাকে ধরেছে। আমি মাঝে মাঝে কাঁদি ।
ও ঘুমালে হাত টা মেলে রাখে, আমি ওর হাতে আমার হাত গুজে দেই। ও মাঝে মাঝে তন্দ্রা ভাব নিয়ে আমার দিকে একবার তাকায়, তারপর হাসে। তারপর আবার ঘুমায়। আমি তখন কাঁদি। বালিশ ভিজিয়ে ফেলি।

একদিন কি মনে করে ও আমাকে বললো, আমি তো মরে যাবো। আমি মরে গেলে তুমি কি আবার বিয়ে করবে?
হ্যা।
কি?
আরে মজা করলাম!
না, ঠিক আছে। মরে গেলে পরে বিয়ে করে নিও। কিন্তু মুখের উপর এভাবে হ্যা বলে দিবে .. ভাবতে পারিনি।

মেয়েটা ভয়ানক আবেগে মাঝে মাঝে আমাকে জড়িয়ে ধরে। সেই নুসরাত, যে কিনা রাতে পিঠে হাত রাখার জন্য কান্না করতো। ও এখন আমাকে জড়িয়ে ধরে। চোখ বুজে থাকে। আমি কান্না করা শুরু করি। জানি, সময় নেই আর খুব একটা। লজ্জাবতী আমায় ছেড়ে চলে গেল বলে!

ওর মৃত্যুর পর যেই মেয়েটা কে আমি বিয়ে করি, ওর নাম মাহিয়া।
খুব লাজুক না হলেও মাঝে মাঝে লজ্জা কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি তা দেখিয়ে দেয়। খুব মজা করতে জানে, আমার খুব খেয়াল নেয়।
ওর একটা ওভ্যাস আছে নুসরাতের মত। হাত মেলে ঘুমানো। মাঝে মাঝে ওই মেলে রাখা হাত আমি গুটিয়ে রাখি। মেলে রাখা হাত দেখলে আমার নুসরাতের কথা মনে পড়ে।

মাঝে মাঝে মাহিয়া কে কানে কানে ফিসফিস করে বলি, মাথা ব্যাথা করছে? মাথাটা টিপে দেই?
লেখাঃ আবির আহম্মেদ পিয়াস

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে