রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৩৩:১৮

শুধু তোমার জন্য পাগল আমি

শুধু তোমার জন্য পাগল আমি

পাঠকই লেখক : সাগর, এবার অনার্স শেষ করেছে। খুব ভালো একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে গত ২বছর হবে। এই দুইবছরেই চাকরির প্রতি খুব অনিহা জন্মে গেছে। বারবার চাকরি ছেড়ে দিতে গিয়েও পারেনা।
.
কথাবার্তা, চলাফেরায় খুব ভালো বলে ওর অফিসের বস ওকে চাকরি ছাড়তে দেয়না। বরং চাকরি ছাড়তে গেলে বস ছুটি দিয়ে দেয়। আজও চাকরি ছাড়তে গেলে বস ওকে ৪দিনের ছুটি দিয়ে দেয়।
.
বিরক্তমুখে সিঁড়ি দিয়ে নামছে আর হঠাৎ শয়োধির সাথে দেখা হয়ে যায়। শয়োধি দাঁড়িয়ে যায়। শয়োধি কিছু বলতে যাবে তখনি সাগর না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
.
রাত প্রায় দেড়টা। ছাঁদের রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে সাগর। এক হাতে ওর প্রিয় সেই পুরনো গিটারটা অন্য হাতে জলন্ত সিগারেট। ওর সুখ-দুঃখের একমাত্র সঙ্গী এই ২টা জিনিস। অবশ্য সিগারেটকেই একমাত্র সঙ্গী বলা চলে। কারন ওর ধারনা… "সবাই ওকে ছেড়ে গেলেও নাকি একমাত্র এই সিগারেটই ওকে ছেড়ে যাবেনা।"
.
অপলক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, তারা গোনার ব্যর্থ চেষ্টা। তারা সঠিকভাবে গুনতে না পারলে খুব বিরক্ত লাগে ওর। গিটারটা হাতে নেয়, পুরনো সেই সুর তোলার চেষ্টা করে। গিটার বাজাতে বাজাতে প্রিয় গানের সুরটা তোলে…
.
"বড় অবেলায় পেলাম তোমায়
কেন এখনি যাবে হারিয়ে?
কি করে বলো রবো একলা?
ফিরে দেখো আছি দাঁড়িয়ে!"
.
সুরটা তুলতে তুলতে গলাটা ধরে আসে ওর। পুরনো স্মৃতিগুলো খুব কড়াভাবে নাড়া দেয় মনকে। শতবার চাইলেও যে ভুলতে পারেনা সেই দিনগুলোর স্মৃতি। আজ আবার সেই স্মৃতিগুলো অকপটেই ওর চোখের কোনে একবিন্দু জল এনে দেয়। ভাবতে থাকে ছয়বছর আগের সেই দিনগুলোর কথা…
.
সেবার সাগর এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী। পাশাপাশি একটা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে ছিলো। ওদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আর সেটা ছিলো গল্প লেখার প্রতিযোগিতা।
.
সাগর ছিলো বিচারক পদে, ও ছাড়া আরো ৪জন এই দায়িত্বে ছিলেন। প্রতিযোগিতায় কিছু অফার দেওয়া হয় যেমন… "যে কেউই লেখা দিতে পারবে কিন্তু সেরা ৫০জনের লেখা সিলেক্ট হবে, আর প্রথম ১০জনের গল্পের এক একটা বই বের হবে। আর প্রথম তিনজনকে দেওয়া হবে পুরষ্কার।"
.
এরকম অফার পেয়ে অনেকেই সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। আর এর মধ্যেই ঘটে যায় অনেক কিছু।
.
সাগর বাসায় ফিরেছে, হঠাৎ ওর নাম্বারে একটা ফোন আসে। ফোনটা রিসিভ করতেই একটা নারী কন্ঠ ভেসে আসে…
.
হ্যালো…
আসসালামু আলাইকুম …
ওয়ালাইকুম আসসালাম…
জ্বী, এটা কি………… সাংস্কৃতিক কেন্দ্র?
জ্বী তবে এখন অফিস টাইম না তাই কাল অফিস টাইমে ফোন দিয়েন, এখন রাখলাম।
জ্বী মানে, ২মিনিট কি কথা বলা যাবে না?
আচ্ছা বলুন…
.
প্রায় ৭মিনিট কথা হয় মেয়েটার সাথে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করবে তবে এব্যপারে কিছু জানে না তাই ফোন দিয়ে একটু জেনে নিলো। আরো অনেক কিছু জানার আছে প্রতিযোগিতার ব্যপারে। তাই আগামীকাল অফিস টাইমে আবার ফোন দিবে বলেছে।
.
সকাল ১০টা বেজে কিছু সময় পার হয়েছে। সাগর কম্পিউটারে কিছু কাজ করছিলো তখন ওর মোবাইলটা বেজে ওঠে। সাগর কাজের প্রতি খুব যত্নশীল তাই কাজ করার সময় মোবাইল রিসিভ বা অন্য কোন কাজ খুব বোরিং লাগে ওর। তাই কার ফোন সেটা না দেখেই মোবাইলটা সাইলেন্ট করে ড্রয়ারে রেখে দেয়।
.
বিকেলে বাসায় ফেরার সময় পথে একটা স্কুলের বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যায়। অনেকক্ষন আড্ডা দিয়ে প্রায় রাত ৮টার দিকে বাসায় ফেরে। পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা হওয়ায় মনটা একটু বেশিই ভালো বলা চলে। গোসল সেরে রুমে ঢুকতেই মোবাইলটা আবার বেজে ওঠে…
.
হ্যালো… আসসালামু আলাইকুম (সেই মেয়েটির ফোন যে গতকাল ফোন দিয়েছিলো)
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
জ্বী আমি গতকাল ফোন দিয়েছিলাম, আপনি কাল বলেছিলেন অফিস টাইমে ফোন দিতে। সকালে ফোন দিয়েছিলামও কিন্তু আপনি রিসিভ করেননি…
ও হ্যাঁ, জ্বী বলুন। কি জানতে চান?
.
অনেকক্ষন কথা হয়ে ওদের। সাগর মেয়েটাকে সব বুঝিয়ে বলে আর আশ্বাস দেয় প্রতিযোগিতার জন্য সর্বপ্রকার সহযোগীতা ও করবে। এরপর থেকে মেয়েটা প্রায়ই সাগরকে ফোন দিতো, সাগরও ফ্রি থাকলে ফোন দিতো। এভাবে গড়াতে থাকে ওদের আলাপচারীতা।
.
আচ্ছা আপনার নামটাই তো জানা হলো না?
ইসরাত বিনতে শয়োধি, বাসায় সবাই শয়োধি বলেই ডাকে। আপনার???
সাগর আহসান। শয়োধি মানে কি জানেন?
হুম, জলধারা। আর আপনার আহসান নামটা কিন্তু আনকমন।
আপনার পুরো নামটাই আনকমন। আপনার আর আমার নামের অর্থ কিন্তু একই।
কিভাবে?
সাগর মানেও কিন্তু জলধারা।
ওহ তাই নাকি?
হুম, আচ্ছা আপনি কিসে পড়েন?
ইন্টার পরীক্ষার্থী।
কোন গ্রুপ?
সায়েন্স, আপনি কিসে পড়েন?
Same to you. আমরা যেহেতু সমবয়সী সেহেতু আমাকে তুমি করেই বলতে পারেন।
.
এভাবেই আপনিতে থাকা সম্বোধনটাও প্রমোশন পেয়ে তুমিতে পরিনত হয়। দু'জন খুব ভালো বন্ধুতেও পরিনত হয়। দু'জন দু'জনার সাথে সব কথা শেয়ার করতে থাকে মুঠোফোনের এপাশ ওপাশ থেকে।
.
একদিন রাতে সাগর গিটার হাতে ওর প্রিয় গানটার সুর তোলে। মনের সুখে খোলা আকাশের নিচে বসে গান গাইছে। তখনি শয়োধির ফোন…
.
কি করছো?
তেমন কিছু না, গিটার হাতে গান গাওয়ার চেষ্টা করছিলাম।
তুমি গিটার বাজাতে পারো?
হুম তবে ততটা না।
হইছে হইছে, আর বলতে হবে না।
আজকের আকাশটা দেখেছো?
না, দেখিনি।
কেন? একটিবার তাকিয়ে দেখো।
নাহ, আমার ভয় করে।
কিসের ভয়?
যদি অন্ধকারে হারিয়ে যাই?
আমি আছি না, হারাবে না। হাতটি ধরে পাশে থাকবো।
বাব্বা, স্যার হঠাৎ এত্ত রোমান্টিক মুডে?
রোমান্টিক না, সত্যি বলছি। ধরবে কি এ হাত?
ফান করা ছাড়ো তো, এটা সম্ভব নয়।
কেন নয়? তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না। আমি বাঁচতে পারবো না। প্লিজ…
সম্ভব না।
তুমি যতদিন রাজি না হবা ততদিনে আমি ঘুমাবোনা, দেখি কতদিন পারি?
.
সেদিন এই নিয়ে অনেকক্ষন কথা হয় ওদের মাঝে। কিন্তু কোনভাবেই শয়োধি সাগরের প্রস্তাবে রাজি হয়না। আর এভাবেই প্রায় ৩-৪দিন চলে যায় কিন্তু শয়োধির কাছ থেকে কোনরকম কোন উত্তর মেলেনা।
.
সাগরও হাল ছাড়ার ছেলে না, আর হাল ছাড়বেই বা কেন? ও তো শয়োধিকে সত্যিই ভালোবাসে। যেকোন মুল্যেই হোক, ও শয়োধিকে নিজের করে নিবে।
সাগর ছাদে বসে আকাশ দেখছে, তখনই শয়োধির ফোন…
কেমন আছো?
তা তোমার ভালো জানার কথা।
কি করছো?
আকাশ দেখছি, তুমি?
কিছু না। আকাশে কি দেখো?
আকাশের তারা গুনতে চেয়েছিলাম কিন্তু ২টা তারা ছাড়া আর কোন তারা দেখতে পাচ্ছি না।
আকাশের তারা গোনা যায়?
হুম যায়, আমি গুনি।
ওহ তো ২টা তারা কেন???
১টা আমি আর ১টা তুমি…
প্লিজ বাদ দিবা?
আমি কি তোমাকে পাবোনা?
এটা সম্ভব না।
কেন কেন কেন? কেন সম্ভব না?
জানিনা, রাখলাম…
ওকে, রাখো। তবে শুনে রাখো, তুমি আমাকে ভালো না বাসলে আমি এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিবোনা।
কেন? এত পাগল কেন তুমি?
শুধু তোমার জন্য।
.
সবশেষে শয়োধি সাগরের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। আপন করে নেয় সাগর নামে পাগলটাকে। দুজনেই ভাসতে থাকে ভালোবাসা নামক সুখের ভেলায়।
.
এইচ.এস.সি পরীক্ষা শেষ আর এরই মধ্যে প্রতিযোগিতায় গল্প দেওয়ার সময় শেষ হয়ে এসেছে।
.
গল্প লিখেছো? (সাগর জজ্ঞেস করলো)
না, পারিনা তাই লিখবো না।
কেন? আরে লিখো লিখো…
আচ্ছা লিখবো তবে কি নিয়ে লিখবো??
কল্পনা করে লিখবা তবে আমাকে নিয়ে লিখলে প্রথম পুরষ্কারটা তোমার…
ওকে…
.
শয়োধি গল্প লেখা শুরু করে। সাগরের কাছ থেকেও এব্যাপারে কিছুটা সাহায্য নেয়। গল্পটা সাগরকে নিয়েই লিখা হয়েছে, আসলেই দারুন লিখেছে মেয়েটা। বিচারকগন নাম্বার না দিয়ে পারলোই না। পুরো নাম্বার দেওয়ারও কারন ছিলো, কারন শয়োধি সাগরের প্রেমিকা।
.
সে যাই হোক, প্রতিযোগিতায় শেষ। এবার প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সিলেক্ট করার পালা। অবশেষে প্রথম পুরস্কারটা পায় শয়োধি। ওর বই বের হয়, ক্যারিয়ার ডেভেলপ হতে থাকে ওর। আর পিছু ফিরে তাকাতে চায়না শয়োধি। হয়ে যায় নাম করা লেখিকা।
.
আর আস্তে আস্তে শয়োধি পাল্টে যেতে থাকে। আগের মত সাগরকে ফোন দেয়না, কথা বলেনা, ফোন দিলে ইগনোর করে। সাগর ফোন দিতে চাইলে শয়োধি নানান ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন দিতে বারন করে।
.
সাগর সব মেনে নেয় কারন ও যে সত্যিই শয়োধিকে ভালোবাসে। কোনরকম সন্দেহ করেনা শয়োধিকে বরং যতখানি পারে ওকে ভালোবাসে। কিন্তু শয়োধির এমন পরিবর্তন ওকে কষ্ট দিতো, আড়ালেই কাঁদতো একা একা। শয়োধিকে বুঝতেও দেয়নি ওর অগোচরে কতটা কষ্টে দিনযাপন করছে সাগর?
.
একদিন বিকেলে সাগর অফিস থেকে ফিরছে তখনি শয়োধির ফোন…
.
ফ্রি আছো?
হ্যাঁ, কেমন আছো?
ভালো, কিছু কথা ছিলো। এখন বলবো?
হ্যাঁ বলো, কি হয়েছে? তোমার কন্ঠটা এমন লাগছে কেন?
আমাকে ভুলে যাও সাগর, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
কি বলছো এসব?
হ্যাঁ, সত্যিই বলছি আমি। গত সপ্তাহে আমার এংগেজমেন্ট হয়েছে, রেজাল্টের পর কোন ভার্সিটিতে চান্স পেলেই বিয়ে।
বিয়েটা কি ঠেকানো যায়না?
নাহ, আমার ফ্যামিলি অনেক কড়া। সম্ভব না।
কিছুতো করো, আমি তোমাকে হারালে বাঁচবো কি নিয়ে?
আমাকে ভুলে যাও, আমাদের মিলন কোনদিনও সম্ভব না।
আচ্ছা তাহলে আমার একটা চাওয়া অন্তত পুরন করো!
কি চাওয়া?
যতদিন তোমার বিয়ে না হয় ততদিন অন্তত আমার থাকো!
পাগল হয়ে গেছো?
হ্যাঁ, আমি পাগল হয়ে গেছি আর সেটা শুধু তোমার জন্য।
দেখো পরে যখন আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো তখন বেশি কষ্ট পাবা।
আপাতত কষ্টটা ভুলে থাকতে দাও, পরে কি হবে সেটা পরে দেখা যাবে।
এটা সম্ভব না।
আমি কিচ্ছু জানিনা, আমি তোমাকে চাই চাই চাই। হোক সারাজীবন কিংবা ২-৩ মাস।
তুমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছো।
তুমি কি আমাকে একটুও ভালোবাসোনি?
জানিনা, আমি রাখলাম।
.
টুটু.. টুট… টুট… শব্দে ফোনের লাইনটা কেটে যায়। সাগর কয়েকবার শয়োধির নাম্বারে ট্রাই করে কিন্তু শয়োধির ফোন বন্ধ। অনেকদিন অনেকবার শয়োধির ফোনে ট্রাই করে কিন্তু প্রতিবারই ওপাশ থেকে নারীকন্ঠ জানান দেয় যে ফোনটা এখনো অবধি বন্ধ।
.
এভাবে কেটে যায় প্রায় ৬মাস। এরই মধ্যে সাগর একটা ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে যায়। এখনো ভুলতে পারেনি শয়োধি নামের সেই মেয়েটাকে। কিন্তু যখনি শয়োধির প্রতারনার কথা মনে পড়ে তখন নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা। গোটা নারী জাতীকে ঘৃনা করতে ইচ্ছে করে কিন্তু সব নারী তো এক নয়। সব মেয়ে তো শয়োধি নয়। তবুও নারী জাতের কাছ থেকে যতটা সম্ভব নিজেকে দুরে সরিয়ে রাখে।
.
একদিন হঠাৎ করেই একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে। বিরক্ত কন্ঠে ফোন রিভিস করে সাগর…
.
হ্যালো…
.
কন্ঠাটা খুব পরিচিত মনে হলো সাগরের। দ্বিতীয় বার হ্যালো বলতেই বুঝতে বাকি রইলোনা ফোনের ওপাশ থেকে শয়োধির কন্ঠ ভেসে আসছে।
.
হ্যালো…
জ্বী বলুন, শুনছি।
আগামী সপ্তাহে আমার বিয়ে, তোমাকে জানানো দরকার মনে হলো তাই জানালাম।
আমার সাথে এমন অভিনয় না করলেই কি হতোনা?
অভিনয়!? কিসের অভিনয়?
ওহ ভুলে গেছেন? অস্বীকার করতে পারবেন আপনি আমার সাথে অভিনয় করেননি?
হ্যাঁ করেছি কারন আমি চাইতাম না যে তুমি আমার জন্য পরীক্ষা মিস করো।
শুধু কি এই একটাই কারন??? প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া কোন কারন ছিলোনা?
এখন এসব বলার মানে কি?
ওহ তাইতো! এখন বলে লাভ কি? যাই হোক, আপনি আমাকে আর ফোন না দিলেই খুশি হবো।
আচ্ছা রাখি।
.
সেদিনের পর থেকে শয়োধি আর ফোন দেয়নি সাগরকে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে সাগরের। চোখের জলটুকু মুছে নিয়ে মনকে শক্ত করে কারন ও ছেলে আর ছেলেদের চোখে জল মানায় না।
.
সিগারেটটাও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। শেষ টানটা দিতে না দিতেই ফোনে রিং বেজে ওঠে। তৃপ্তিভরা শেষ টানটা না দিয়ে ফোন রিসিভ করে সাগর…
.
হ্যালো…
.
সেই পরিচিত কন্ঠ চিনতে বেশি সময় নিলোনা সাগর।
.
আবার কিজন্য ফোন দিয়েছেন?
একবার তো আমার কথাগুলো শোনো।
শোনার মত কিছুই নেই, কেন বারবার ফোন দিয়ে কষ্ট বাড়ান আমার?
আমি তোমার হতে চাই, প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিওনা।
কেন, আপনার বিয়ে হওয়ার না কথা ছিলো?
হ্যাঁ ছিলো, কিন্তু ৬বছর আগে আমি শুধুমাত্র তোমার জন্য বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছি। প্লিজ ফিরিয়ে দিওনা আমাকে…
আমিতো বলিনি বিয়ে ভেঙ্গে দিতে। যাই হোক, রাখলাম।
প্লিজ, আমাকে ফিরিয়ে দিওনা।
দেখুন আমার হাতে জলন্ত সিগারেট, আপনি কি চান আমি এটা আমার হাতে চেপে ধরি?
নাহ, আমি চাই তুমি ভালো থাকো।
আমার ভালো চাইলে আর কোনদিনও ফোন দিবেন না আমাকে।
আচ্ছা তবে তুমি আর এমন পাগলামি করবানা, প্লিজ…
.
শয়োধি কথাগুলো শেষ করার আগেই ফোনের লাইনটা কেটে দেয় সাগর। আর পিছু ফিরে তাকাতে চায়না ও। হাতের সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে ফেলে দেয়।
.
আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার তারা গোনার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। নাহ, আজ আকাশে কোন তারা নেই। আকাশটা মেঘলা তাই চাঁদসহ সব তারাগুলো ঢেকে গেছে। হয়ত অঝোর ধারায় বৃষ্টি হবে। গিটারটা হাতে তুলে নেয়। সেই পুরনো গানের সুর তোলার চেষ্টা করে…
.
"বড় অবেলায় পেলাম তোমায়
কেন এখনি যাবে হারিয়ে?
কি করে বলো রবো একলা?
ফিরে দেখো আছি দাঁড়িয়ে!"

লেখক : অভিমানী ছোঁয়া (কষ্টসহিষ্ণু শয়োধি)

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে