সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:০৯:৫৮

খুলনায় ফুলকুঁড়ি আসরের স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠান থেকে ৩৫ জন গ্রেফতার

খুলনায় ফুলকুঁড়ি আসরের স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠান থেকে ৩৫ জন গ্রেফতার

সাইফুল ইসলাম, খুলনা থেকে: মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন ফুলকুঁড়ি আসরের ‘আঞ্চলিক ক্যাম্প’ থেকে ভৈরব অঞ্চলের সভাপতি আজিজুর রহমানসহ বিভিন্নস্কুল ও মাদরাসার ৩৫ ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে দৌলতপুরস্থ দেয়ানা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৭ মার্চ থেকে চার দিনব্যাপী আঞ্চলিক ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে তাদের দৌলতপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। এই অনুষ্ঠানে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান প্রধান অতিথি এবং  কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির সালাম গ্রহণ
করার কথা ছিল খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি। এ ক্যাম্পে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্কুল ও মাদরাসার প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্ররা অংশ নেয়।

ফুলকুঁড়ি আসর খুলনার সদস্যরা জানান, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন ফুলকুঁড়ি আসরের ‘আঞ্চলিক ক্যাম্প’ এর জন্য নগরীর দৌলতপুর দেয়ানা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ব্যবহারের জন্য মহানগরী সভাপতি প্রফেসর মুহাম্মদ তারেক ও পরিচালক কেএম আলমগীর হোসেন স্বাক্ষরিত আবেদনের
প্রেক্ষিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেন। সে অনুযায়ী গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ কমিশনার বরাবর অনুমতির জন্য পরিচালক কেএম আলমগীর হোসেন স্বাক্ষরিত আবেদন করেন। কেএমপি’র সদর দফতরের সিল স্বাক্ষর সংবলিত রিসিভ কপি দৌলতপুর থানায় জমা দেন। এরপর তারা দাওয়াত পত্রে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে প্রধান অতিথি এবং  কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির সালাম গ্রহণ করার জন্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি’র নাম উল্লেখ করে দাওয়াত পত্র বিলি করেন। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি
অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ফুলকুঁড়ি তাদের ক্যাম্পের অনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। হঠাৎ করে পুলিশ চারদিক ঘিরে ফেলে এবং ক্যাম্প থেকে শিশু-কিশোরসহ ১১০ জনকে থানায় নিয়ে যায়। এরপর প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিশু-কিশোরদের ক্রন্দন, আর্তচিৎকার ও তাদের পিতা-মাতাদের উপস্থিতির পর অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হওয়ায় প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া ছাত্রদের ছেড়ে দেয়া হয়। আর ১১০ জনের মধ্যে ৩৫ জনকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন খুলনা কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিষ্টস সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ফুলকুঁড়ি আসরের ভৈরব অঞ্চলের উপদেষ্টা সভাপতি এসএম আজিজুর রহমান, মামুন, আবু তাহের, বাবু আলী, ওমর ফারুখ, খাদেমুল ইসলাম, আল আমিন, ইসমাঈল, সাইফুল ইসলাম, ফাহাদ, সাইফুর রহমান, জহির রানা, সাইফুল ইসলাম, আজিজুর রহমান, শামসুজ্জামান, সুলতান মাহমুদ, শফিকুল ইসলাম, তুহিন রেজা, সুমন, রেজওয়ান, সুমন আহমেদ, মাহবুব হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল আরিফ, আসাফুদৌলা রাহাত, গোলাম সাদেক, হাফিজুর রহমান, আনিসুর রহমান, জিয়াউর রহমান, জিকরুল কাওসার, রুহুল আমিন, জাহাঙ্গীর হোসেন ও নাঈম হাসান।

এদিকে ফুলকুঁড়ি আসরের সহকারি পরিচালক কামাল আহমেদ জানান, দৌলতপুর থানার ওসি শফিকুর রহমান ক্যাম্প থেকে নগদ ৫৬ হাজার টাকা, ৩ টা ল্যাপটপ, একটি ডেস্কটপ, একটি ট্যাব, একটি ক্যামেরা, ৩৪টা মোবাইল নিয়ে গেছে। তবে পুলিশের দেয়া আদালতের জব্দ তালিকায় নগদ টাকার কথা উল্লেখ নেই। আমরা বিষয়টি তদন্ত
করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুর রহমান জানান, ফুলকুঁড়ি আসরের নামে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের নিয়ে দেয়ানা প্রাইমারী স্কুলে রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী কাজের জন্য বৈঠক করছে বলে খবর পেয়ে সেখান থেকে ১১০ জনকে আটক করা হয়। তবে পরে জানতে পারি বিষয়টি তা নয়। পরে আটককৃতদের মধ্যে থেকে যাচাই বাছাই শেষে ৩৫ জনকে সন্দেজনকভাবে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে বাকিদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি সাংবাদিকদের বলেন, ফুলকুঁড়ি আসরের ক্যাম্প থেকে আটককৃতরা
দৌলতপুর থানায় রয়েছে। যাচাই বাছাই শেষে সন্দেহজনকভাবে ৩৫ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

ক্যাম্পে অংশ নেয়া ফাহিম, নাফিস, আব্দুর রহিম, কুদ্দুস, মকবুল, হিরু, সোহাগ, রানা, হাসান, রাজু, তৈয়ব, আল মামুন ও মোতালেব সাংবাদিকদের দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমাদের অনুষ্ঠানের কুরআন তেলাওয়াতের সময় পুলিশ রুমের ভেতর ঢুকে গালিগালাজ করতে থাকে। মঞ্চে বসা ভাইয়াদের কলার ধরে ধরে বাইরে নিয়ে যায়। আর আমাদের বলে তোমরা যে যেখানে আছো, সেখানেই বসে থাকো। নইলে সবাইকে ধরে নিয়ে যাব। এ কথা বলছে আর রুমে রুমে তালা মারছে। আমরা ভয়ে সবাই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকি। আমাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন স্কুলের সামনে এসে জড়ো হয়। একপর্যায়ে পুলিশ বাচ্চাদের গাড়িতে উঠতে বললে
অনেকেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে তাদের মাথায় পানি দিয়ে আশপাশের লোকজন অনেক শিশুকে যার যার বাড়ির ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়।

এখানে উপস্থিত পঞ্চাশোর্ধ রেক্সেনা বেগম চোখ মুছতে মুছতে বলেন, আল্লাহ তুমি আমাদের কোথায় পাঠিয়েছো।
যেখানে শিশুরাও পুলিশের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আমাদের আর কিছুই করার নেই। আল্লাহ তুমিই এদের বিচার করো।
১৮ মার্চ ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে